করোনা পরিস্থিতিতে নারী প্রতিনিধিদের অবদান

গত চার মাসের ব্যবধানে পুরো বিশ্বের দৃশ্যপটই যেনো বদলে দিয়েছে একটি ভাইরাসের সংক্রমণ। বিশ্বের ক্ষমতাশীল রাষ্ট্র এবং এর প্রতিনিধিরা পরিস্থিতি সামাল দিতে যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখন অনেকটা গোছানোভাবেই নিজ দেশ বা প্রদেশের পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন নারী প্রতিনিধিরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে তাইওয়ান অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ একটি অঞ্চল ছিলো, সংক্রমনের ক্ষেত্রে। দেশটির রাষ্ট্রপতি সোয়াই ইন্গ-ওয়েন সংকমণের শুরুতেই বেশ দক্ষভাবে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন। সোয়াই সংক্রমণের শুরুতে, আক্রান্ত দেশগুলোর সঙ্গে সবধরনের ভ্রমন বাতিল করে দেন। আর তাই বর্তমানে বিশ্ব যখন প্রয়োজনীয় উপকরণ সংকটে ভুগছে, তাইওয়ান ইউরোপিয় ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন দেশে মাস্ক রপ্তানি করছে।

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডারন যখন বিশ্বব্যাপী সংক্রমন ছড়াতে শুরু করে, দেশের ভ্রমণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। পাশাপাশি পুরো দেশে ‘লকডাউন’ জারী করেন মাসব্যাপী। আর এ কারণেই নিউজিল্যান্ডে সংক্রমন এবং মৃত্যুর হার তুলনামুলক কম।

৮৩ বিলিয়ন জনগোষ্ঠীর দেশ জার্মানিতে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা এবং মৃত্যুর হার ইওরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেকটাই কম। জার্মানের চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল মহামারী প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন সফলভাবেই। বিশেষ চিকিৎসা ব্যবস্থা, দেশ জুরে লকডাউন এবং অন্যান্য ব্যবস্থা দেশটিকে কঠিন পরিস্থিতি থেকে সামলে উঠতে সাহায্য করেছে।
এই প্রতিটি দেশ করোনা সংকটে আলোচনায় উঠে এসেছেন। দেশগুলোর মধ্যে যে বিষয়টি এক, তা হলো প্রতিটি দেশ পরিচালিত হচ্ছে নারী নেতৃত্বে। পুরো বিশ্বব্যাপী নারী নেতৃত্ব ৭ শতাংশেরও কম। সেই হিসেবে বর্তমান পরিস্থিতিতে বলা যেতে পারে, নারী নেতৃত্বের দেশগুলোই সফলভাবে এই প্রতিকূল পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে।

এই দেশগুলোর প্রতিটিই গণতান্ত্রিক দেশ। রাষ্ট্র প্রধানরা সংক্রমণের শুরুতেই জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন বিস্তার রোধে। বিশ্বের ক্ষমতাশীল বেশিরভাগ দেশই, সংক্রমণের শুরুতে যেখানে তেমন একটি গুরুত্বই দেয় নি, এই দেশগুলো শুরুতেই বিপুল পরিমানে নমুনা পরীক্ষা, চিকিৎসা সুবিধার উন্নয়ন এবং দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করেন। আর এ কারণেই সংক্রমণের বিস্তারের লাগাম টানতে পারেন সফলভাবে।

যেমন ধরা যাক তাইওয়ানের বিষয়, চীনের পূর্ব উপকূলে অবস্থান হওয়ায় এখানে সংক্রমণের ঝুঁকি ছিলো সবথেকে বেশি। ডিসেম্বর ২০১৯ – উহানে ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি ছরিয়ে পরার সঙ্গে সঙ্গেই সোয়াই সব ধরনের যোগাযোগ মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। উহানে যে সব প্লেন ওই সময় চলাচল করছিলো সেগুলোর জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা নেন এবং পরবর্তীতে চীন, হংকং এবং ম্যাকাওয়ের সব ফ্লাইট বন্ধ করে দেন। আর এ কারণে তাইওয়ানে সংক্রমিত রোগী সংখ্যা ৩৯৩ জন এবং মৃত্যু বরণ করেন মাত্র ৬ জন। .

নিউজিল্যান্ডের আয়ের অন্যতম উৎস ট্যুরিজম। কিন্তু বিশ্বব্যাপী মহামারী ছড়িয়ে পরার শুরু হতেই প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডারন মার্চের ১৯ তারিখ দেশটির বর্ডার বন্ধের নির্দেশ দেন। এরপর মার্চের ২৩ তারিখে চার সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করেন দেশজুরে। পুরো দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা তেরো’শ হলেও মৃতের সংখ্যা মাত্র ৯ জন।

এ তো গেলো তুলনামূলক বড় আকারের দেশগুলোর কথা। এছাড়াও ছোট আকারের কিছু দেশ রয়েছে যেগুলোর রয়েছে নারী নেতৃত্বের অধীনে। আর করোনা পরিস্থিতিতে ওই দেশগুলোও উদাহরন সৃষ্টি করেছে।

যেকোনো কঠিন পরিস্থিতি কতোটা সফলভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন তার উপর নির্ভর করে একজন প্রতিনিধির দক্ষতা। এই পরিস্থিতি বিবেচনা করলে মনে হতেই পারে বিশ্বে নারী নেতৃত্ব আরও বেশি প্রয়োজন হতে পারে। তবে এখনও এই বিষয়ে নিশ্চিত করে বলা মুশকিল যে, করোনা পরিস্থিতিতে কাদের পদক্ষেপ বেশি উপযোগী। কারণ এখনও বিশ্বজুড়ে এর বিস্তার বেড়েই চলেছে।

তবে আপাত দৃষ্টিতে বিশ্বে পুরুষ ও নারী প্রতিনিধির সংখ্যায় যে অসামঞ্জস্যতা রয়েছে তা চোখে পড়ার মতো। কারণ বর্তমান পরিস্থিতির হিসাবে এর ভারসাম্য থাকা জরুরিই বটে। সব থেকে বড় বিষয় যখন নারী প্রতিনিধিরা সফলভাবে এই মহামারী সামাল দিচ্ছেন সেই হিসেবে এই ভারসাম্য তৈরি করা আরও জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।