কমবেশি আমরা সবাই জানি যে, সার্চ ইঞ্জিন গুগল বিভিন্ন দেশের জাতীয় দিবস, বিখ্যাত ব্যক্তিদের জন্ম-মৃত্যু ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুকে উৎযাপন করতে ডুডল তৈরি করে। বিশেষ কোনো দিন বা বিশেষ কোনো ব্যক্তির জন্য সার্চ বক্সের ওপরে নিজেদের লোগো বদলে বিশেষ দিনটির সঙ্গে মানানসই নকশার যে লোগো তৈরি করে গুগল, তা–ই ডুডল। কেবল বাংলাদেশে প্রদর্শনের জন্য গুগল সেই ২০১৩ সাল থেকে বেশ কিছু ডুডল তৈরি করেছে, করছে। এছাড়াও বেশ কিছু ডুডল গুগল তৈরি করেছে নানা ক্রীড়া প্রতিযোগিতাকে উদ্যাপনের জন্যে, এমন অনেকগুলোতে বাংলাদেশ অংশও নিয়েছে সুতরাং স্বয়ংক্রিয় ভাবে বাংলা নামের দেশেও এই ডুডলগুলো ছিল উপস্থিত। কিছু ডুডল তৈরি হয়েছে বেগম রোকেয়া, স্থপতি এফ আর খান এবং আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসুর মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাঙালির জীবন-কর্মকে উদ্যাপন করতেও, যার সবগুলোর দেখা অবশ্য মেলেনি বাংলাদেশ থেকে। কেমন ছিল সেই ডুডলগুলো। চলুন না, দেখে নেওয়া যাক
২০১৩ সালে বাংলাদেশের ৪৩তম স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশের প্রায় সমস্ত মানুষকে চমকে দেয় গুগল। এদেশের জন্য প্রথম ডুডল তৈরি করে। অসম্ভব সুন্দর সেই ডুডলটি অবশ্য শুধু বাংলাদেশ থেকেই গুগল করার সময় দেখা গিয়েছিল। গুগলের হোম পেজে বাংলাদেশের ফুলে ভরা সবুজ দৃশ্যপটে পতাকা হাতে একটি পরিবারকে নিয়ে ডুডল প্রকাশ করেছিল।
২০১৪’র স্বাধীনতা দিবসে আর নতুন কোনো ডুডল করেনি গুগল। প্রথম ডুডলের ঠিক দু’বছর পরে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে ফের ডুডল করে গুগল। যাতে বাংলাদেশের প্রতীক হিসেবে জাতীয় পশু বাঘের দেখা মেলে। এটিও ছিল শুধু মাত্র বাংলাদেশের ইউজারদের জন্যেই।
২০১৫ সালে, জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কো কর্তৃক বাংলাদেশের ”মঙ্গল শোভাযাত্রা” কে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ঘোষণার বছর খানেক আগেই বাংলা নববর্ষ মানে আমাদের পহেলা বৈশাখকে নিয়ে প্রথমবারের মতো ডুডল করে গুগল
২০১৬ সালের স্বাধীনতা দিবসের ডুডলে ফুটে ওঠে বাংলাদেশের উন্নতির অগ্রযাত্রা। ডুডলটিতে ইংরেজিতে ‘গুগল’ লেখার ব্যাকগ্রাউন্ডে ছিল লাল-সবুজ আর ‘ও’ লেখাটির মাঝখানে দেখানো হয় বঙ্গবন্ধু সেতুকে। বাংলাদেশর পূর্ব ও পশ্চিম অংশের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনে যমুনা নদীর ওপর তৈরি সেতুটিকে উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরে গুগল। এই ডুডলটিও ছিল শুধুমাত্র বাংলাদেশের বাঙালিদের জন্য।
বিক্রমপুরের কৃতী সন্তান জগদীশ চন্দ্র বসুর ১৫৮তম জন্মদিনের ডুডল মিস করে তার জন্মস্থানের মানুষেরাই। ভারতীয় গুগল ইউজাররা সেদিন গুগল ডট কম-এর পেজ খুললেই দেখা মিলছে এই কিংবদন্তী বাঙালি বিজ্ঞানীর। পদার্থবিদ, উদ্ভিদবিদ, জীববিজ্ঞানী এবং কল্পবিজ্ঞান রচয়িতা এমনই নানা পরিচয় তাঁর থাকলেও উদ্ভিদেরও যে প্রাণ আছে এই সত্যটি বিশ্বের সামনে তুলে ধরে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেন এই বাঙালি বিজ্ঞানী। ক্রেসকোগ্রাফের আবিষ্কর্তা জগদীশ চন্দ্রকে রেডিও বিজ্ঞানের জনকও বলে অভিহিত করা হয় গুগলের চরিতকথায়।
বাংলাদেশের ৪৭তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে সার্চ ইঞ্জিন গুগলের বিশেষ ডুডলে দেখা মেলে এক বালিকার, হাতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নিয়ে সে দৌড়ে যাচ্ছে। আরও দেখা যায় আদিগন্ত সবুজ ক্ষেত আর সুনীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। ডুডল লোগোটিতে ব্যবহৃত হয় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার রঙ লাল-সবুজ।
বাংলা নববর্ষ বরণে ফের অংশ নেয় পৃথিবীর শীর্ষ সার্চ ইঞ্জিন গুগল। গুগলের ডুডল সাজে রঙিন সাজে। বাংলা নববর্ষ ১৪২৪ উপলক্ষে প্রকাশিত ডুডল সাজে বিভিন্ন রঙিন মুখোশে। এসব মুখোশের মধ্যে ছিল পেঁচা, বাঘ, সূর্য্য ইত্যাদি।
আধুনিক উচ্চ ইমারতের জনক বলে পরিচিত বাংলাদেশের বিখ্যাত স্থপতি ও পুরকৌশলী ফজলুর রহমান (এফ আর) খানের জন্মদিনে ডুডল প্রকাশ করে গুগল। ফজলুর রহমান খানকে নিয়ে তৈরি ডুডলটিতে ব্যবহার করা হয় স্থাপত্যের নকশা। উপরে ফজলুর রহমান খানের কার্টুন অবয়ব এবং নিচে বিল্ডিংয়ের নকশায় গুগল লেখার মাঝে তুলে ধরা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর বিখ্যাত সিয়ার্স টাওয়ার (বর্তমানের উইলস টাওয়ার)। এই ডুডলটি নির্মাণ করেন ডুডলার লিদিয়া নিকোলাস।
এই ডুডলটি অবশ্য শুধু বাংলাদেশিদের জন্যই নির্মিত হয়নি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই এফআর খানের ডুডলটি প্রকাশ করে গুগল।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে ২০১৭ সালের ১৩ নভেম্বর একটি বিশেষ ডুডল প্রদর্শন করে গুগল। বাংলাদেশ থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে গুগলে গেলেই দেখা মিলেছে—চায়ের টেবিলে বই হাতে বসে থাকা হুমায়ূন আহমেদের। তাঁর তৈরি জনপ্রিয় চরিত্র হিমু হলুদ পাঞ্জাবি পরে খালি পায়ে হেঁটে যাচ্ছে সামনে দিয়ে। আর চারপাশে প্রকৃতির আবহ দিয়ে সাজানো হয়েছে ইংরেজি গুগল শব্দটি।
২০১৭ সালের ৯ ডিসেম্বর। গুগল খুলতেই সাদা পোশাকে চশমা পরা এক নারীকে দেখা যাচ্ছে বই হাতে হেঁটে যাচ্ছেন। নিশ্চয়ই চিনতে পেরছেন তাঁকে? তিনি বেগম রোকেয়া। সেদিন ছিল তাঁর ১৩৭তম জন্মবার্ষিকী। বিশেষ ডুডলে গুগল স্মরণ করে তাঁকে। ওই ডুডলে বেগম রোকেয়ার পেছনে ব্যাকগ্রাউন্ডে ইংরেজিতে গুগল লেখাটিকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। অন্দরমহলের বাইরে বেগম রোকেয়াই যে প্রথম ফুল ফুটিয়েছেন, সে দৃশ্যটিও এ ডুডলে সুন্দরভাবে ফুটে ওঠে। দিনটি রোকেয়া দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে বাংলাদেশে।
আগের বছরগুলোর মতো, গুগল বাংলাদেশের ৪৮তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসেও নিজেদের হোম পেজে বিশেষ ডুডল প্রদর্শনের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করছে। বাংলাদেশের জনগণকে উৎসর্গ করা গুগলের এই ডুডলে, বাংলাদেশের মাটিতে লাল-সবুজের গর্বের পতাকা পত পত করে ওড়ার দৃশ্য তুলে ধরা হয়। এই ডুডলটিও দেখা গেছে শুধু বাংলাদেশ থেকেই।
বাংলা নববর্ষ ১৪২৫ উপলক্ষে বাংলাদেশিদের বিশেষ ডুডল উপহার দেয় গুগল। যে ডুডলে ফুটিয়ে তোলা হয় বাঙালি প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রার চিত্র। পহেলা বৈশাখ উদযাপনের অন্যতম ঐতিহ্য ও ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে জায়গা করে নেওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রার চিত্র তুলে ধরা হয় এ ডুডলে। শোভা পায়, দুইপাশে বর্ণিল পাখি, বাঘ ও মানুষের প্রতিকৃতিসহ শোভাযাত্রা। মাঝে লাল-কমলা-হলুদ-নীল-সবুজসহ বিভিন্ন রঙে সাজানো বড় একটি হাতির ছবি। হাতির পায়ের নিচে নীল রঙে ইংরেজিতে লেখা গুগল। যা দেখতে চাকা লাগানো খেলনা হাতির মতো
২০১৮ সালের ২৮ জুলাই ছিল বিখ্যাত নজরুলসংগীতশিল্পী ফিরোজা বেগমের ৮৮তম জন্মদিন। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ডুডল তৈরি করে গুগল। সেদিন প্রথম প্রহর থেকেই গুগলের হোমপেজে এ ডুডল দেখতে পান ব্যবহারকারীরা। ডুডলে দেখা যাচ্ছে, মাইক্রোফোনের সামনে গান গাইছেন ফিরোজা বেগম। পরনে শাড়ি, গলায় বড় মালা আর খোপায় ফুটে উঠেছে তাঁর চিরাচরিত প্রতিচ্ছবি। ফিরোজা বেগমকে নিয়ে ডুডলটি তৈরি করেছেন গুগলের ডুডলার অলিভিয়া হুন। ওয়াটার কালার পেপারের ওপর পেইন্ট করা ছবিতে শিল্পী শ্রোতাদের গান শোনাচ্ছেন—এ দৃশ্য ফুটে উঠেছে। এটিকে প্রাচীন অ্যালবামের কাভারের মতো করে তৈরি করা হয়। এ গুগলটিও শুধু বাংলাদেশ থেকেই দেখা গিয়েছিল
বাংলাদেশে যারা গুগলের সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করছেন তারা গুগলে গতকাল দেখেছেন কবি শামসুর রাহমানকে নিয়ে করা ডুডল। এ সম্পর্কে গুগল তাদের ডুডল পেজে কবি শামসুর রাহমানের ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতার শেষ তিন লাইনের ইংরেজি অনুবাদ তুলে ধরেছে। এ ছাড়া সেখানে কবির জীবনবৃত্তান্তও দেখানো হচ্ছে। ডুডলটি গুগল তৈরি করে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমানের ৮৯তম জন্মদিন উপলক্ষে।
ডুডলটিতে গুগল লেখাটিকে লাল সবুজে ফুটিয়ে তোলা হয়। ইংরেজি গুগল লেখাটির ‘ও’ বর্ণের জায়গায় বসানো হয়ে কবির মুখ। সেখানে সাদা চুল আর চশমা পরা কবি গালে হাত দিয়ে কবিতা লিখছেন—এমন দৃশ্য দেখানো হচ্ছে। কবির গায়ে সবুজ শার্ট আর হাতে ঘড়ি। পটভূমিতে নীলাকাশে সাদা মেঘের দৃশ্যপট। ডুডলে ক্লিক করলে শামসুর রাহমানকে নিয়ে সার্চের পাতায় নিয়ে যাচ্ছে।
আরও ডুডলের হদিস চাইলে, দেখুন- গুগল ডুডল ওয়েবসাইটে (https://www.google.com/doodles)।