ওরা কারা? কে পপ গায়!

যারা শেয়ার-সাবস্ক্রাইব করে ইউটিউবে অ্যাকটিভ থাকেন কোরিয়ান পপ ব্যান্ড ‘বিটিএস’-এর নাম তাদের না জানার কোন কারণ নেই। সাত কোরিয়ান তরুণের ব্যান্ড ‘বিটিএস’। গত ৩০ আগস্ট ইউটিউবে আপলোড করা যাদের গাওয়া গান ‘আইডল’ ভেঙে দিয়েছে মার্কিন তারকা টেইলর সুইফটের রেকর্ড!

ইউটিউব মিউজিক ভিডিও ডেব্যু হিসেবে ‘আইডল’ গানটি ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশিবার দেখেছেন দর্শকরা- যা এত দিন ছিল টেলর সুইফটের দখলে। প্রথম দিনেই আইডলের ভিডিওটি দেখা হয় ৪ কোটি ৫০ লাখ বার, এর আগে টেইলর সুইফটের ‘লুক হোয়াট ইউ মেড মি ডু’ গানটি এক দিনে ৪ কোটি ৩২ লাখ বার দেখেছিল টিউব জেনারেশন। রেকর্ড ভাঙার খবরটি টুইট করে জানিয়েছে ইউটিউব কর্তৃপক্ষই। এরপরে ভিডিওটি শুধু দেখেই চলেছে মানুষ। লাভ ইওরসেল্ফ: আনসার- অ্যালবামে ‘আইডল’ গানটির আরও একটি ভার্সন রয়েছে। যেটিতে বিটিএসের সাথে ছিলেন মার্কিন-ত্রিনিদাদিয়ান র‍্যাপার নিকি মিনাজও।

কোরিয়ান এই বয় ব্যান্ডের যাত্রা শুরু ২০১৩ সালে। বিলবোর্ডের ২০০ অ্যালবামের গৌবরজনক চার্টে প্রথম কোরিয়ান ব্যান্ড হিসেবে নাম লেখায় পুরো জগত জুড়েই ব্যাপক জনপ্রিয় এই ব্যান্ডটি। আদপে সারা দুনিয়াতেই গত দু’দশকে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কে পপ। ওপ্পা-বিয়াস-সারাং!! প্রায় অচেনা এই ভাষার সাথে হালের কিশোর-তরুণদের পরিচয় কবে ঘটলো? কবে এরা কাছের কথায় পরিণত হয়েছে!- এমন প্রশ্ন আপনার মনে আসতেই পারে।

উত্তর: কে পপ! কে এই কে পপ? কেনইবা হচ্ছে তা এতো জনপ্রিয়?
গ্যাংনাম স্টাইল নামটা ভুলে যাননি নিশ্চয়ই! কোরিয়ান পপ তারকা সাইয়ের যে গানটি জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো বিশ্ব জুড়ে, সাথে আমাদের দেশেও। সেই থেকেই বলা যায় শুরু। কে পপ মূলত কোরিয়ান পপের ছোট্ট-সুন্দর আদুরে এক ডাক নাম, যার সূচনা দক্ষিণ কোরিয়ায়। ক্ল্যাসিকাল মিউজিক, জ্যাজ, আর এন্ড বি, হিপহপ, পপেরা, ড্যান্স পপ কিংবা ইলেকট্রিক পপ এসব মিলে মিশেই জন্মেছে কে পপ! প্রথম কে পপকে জনপ্রিয় করে তোলে ‘Seo Taiji and Boys’, ১৯৯২ সালে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবিধায় জনপ্রিয়তার সাথে সাথে আমেরিকা, জাপান, মধ্যপ্রাচ্য, ভারত এমনকি বাংলাদেশের টিনেজারদের মাঝেও কে পপ তুমুল জনপ্রিয়। ঠিক ধরেছেন এই জনরার মূল শ্রোতাদের অধিকাংশই কিশোর-কিশোরী।

কে পপের ক্রেজ দোলা দিয়েছে আমাদের দেশেও। ফেসবুকে গড়ে উঠেছে গ্রুপ, নিয়মিত আয়োজন হচ্ছে ফ্যান মিটিংয়ের। এমনকি ইন্টারন্যাশনাল কে পপ ফ্যানেদের মিটিংও হচ্ছে! দক্ষিণ কোরিয়া সরকারও তারুণ্যের এই উচ্ছ্বাসের সাথে পর্যটন ব্যবসাকে জড়িয়ে উসকানি দিতে নিয়মিত আয়োজন করছে ইন্টারন্যাশনাল কে পপ ফেস্টিভ্যাল। সেখানে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে অংশ নিতে যাচ্ছে আমাদের দেশের সেরা ফ্যানরাও।  ২০১৬ সাল থেকেই ইন্টারন্যাশনাল কে পপ ফেস্টিভ্যালে অংশগ্রহণ করছে বাংলাদেশি ভক্তরা। যার আয়োজনে ছিল বিডি কে ফ্যামিলি। কে পপ স্টারদেরকে পুরো দুনিয়া চেনে অবশ্য ‘হ্যালিয়ু স্টার’ হিসেবে। হ্যালিয়ু শব্দটার অর্থ হলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংস্কৃতি।
তো এই স্টারদের নিয়ে অনলাইন দুনিয়ায় মাতামাতির শেষ নেই। কে পপ তারকাদের ছবিওয়ালা ব্যাজ, স্কুল ব্যাগ, পেন্সিল বক্স, ব্রেসলেট বিকিকিনি করার জন্যে তো এদেশেও গড়ে উঠেছে অনলাইন শপিংয়ের সব পেইজ!

BTS বাদেও রয়েছে অসংখ্য কে পপ ব্যান্ড, যারা নিয়মিত মঞ্চ কাপাচ্ছে। বিটিএসকে তো চিনলেনই। আরও আগ্রহ বোধ করলে যে কে পপ গ্রুপগুলোর হদিস রাখতে পারেন তারা হল-
EXO

ফোর্বস কোরিয়া ২০১৫ সালে সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যান্ড হিসেবে নির্বাচিত করেছিলো তাদেরকে। Growl নামের অ্যালবামটি অ্যাওয়ার্ড জিতেছিল ১৫তম এশিয়ান মিউজিক অ্যাওয়ার্ডেও। শুধু Growl-এর কপিই বিক্রি হয়েছিল প্রায় এক মিলিয়নের উপর।

Girls Generation

জনপ্রিয় আরেকটি কোরিয়ান পপ ব্যান্ড Girls Generation। নাম দেখেই বুঝতে পারছেন যে, এ ব্যান্ডের প্রতিটি সদস্যই নারী। আইকনিক এবং ইউনিক ফ্যাশন সেন্সের জন্যও তাদের বিশেষ সুনাম! নয় সদস্যের এই ব্যান্ডটি প্রথম জনপ্রিয়তা পায় নিজেদের বিখ্যাত ট্র্যাক Gee-এর জন্য।

এই ব্যান্ডগুলো ছাড়াও আছে Infinite,  Big Bang,  SES- এর মতো ব্যন্ড। কে পপের বিজয় নিশান নিয়ে তারা ট্যুর করে বেড়াচ্ছেন দেশ-দেশান্তরে।

কে পপের সুরের জাদুতে মুগ্ধ হতে চাইলে দারস্থ হয়ে পড়ুন Youtube-এর। কিম কি দুক আর কিম জং উনের বাইরেও তো কোরিয়া নামের দুই দেশে বহু কিছু হয়! নাকি?