আয়ুষ্মান ভব

বলিউডের সিনেমা মানেই নায়ক-নায়িকার কারিশমাতে মজে থাকবেন দর্শক, সাথে থাকবে চটকদার সব আইটেম গান; দুধর্ষ সব ভিলেনকে পপাত চঃ করে ফেলা নায়কের সব দুর্দান্ত কাণ্ডকীর্তি। এসবের বাইরে সিনেমা হয় নাকি? হলেও নায়ক হিসেবে ক্যারিয়ার হয় তাতে? হচ্ছে তো! পুরো উলটো ধাঁচের সিনেমাটাই করে দেখাচ্ছেন  আয়ুষ্মান খুরানা, ২০১২ সাল থেকে। সমসাময়িক সুশান্ত সিং রাজপুত এবং রাজকুমার রাওয়ের মতো নিজের অভিনয় দক্ষতা না থাকায় আয়ুষ্মান বেশি ভরসা করেছেন স্ক্রিপ্টের ওপর, পরিচালকের ওপর। নিজের উপস্থাপনার ক্যারিয়ারের নিরাপত্তা থেকে বেরিয়ে এসে ভিকি ডোনারে যিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন নায়ক-গায়ক হয়ে।

হিন্দি সিনেমার প্রথাগত ফর্মুলা ভেঙ্গে একদম নতুন নতুন সব গল্প নিয়ে সেই প্রথম সিনেমার সময় থেকে এখনও যিনি আলোচনায়। মাত্র অর্ধযুগের বলিউডি ক্যারিয়ারে নতুন ধরণের সিনেমা নিয়ে যিনি একবারও হতাশ করেননি দর্শকদের। ভিন্নরসের গল্পে অভিনীত তার সেসব সিনেমার তালিকাটিও এখন বেশ লম্বা। এরমধ্যে মেইনস্ট্রিম গল্পে সিনেমা করেছেন, ফ্লপও দেখেছেন তার প্রত্যেকটিতেই। কেমন ছিল তার অভিনীত অন্যরকম সেই সিনেমাগুলো?

ভিকি ডোনার

দিল্লির ছেলে ভিকি ডোনেট করে স্পার্ম!! কি আজব! তাই নিয়ে আস্ত সিনেমা! পুরো ভারত নড়েচড়ে বসেছিল সেই গল্পে। পাশাপাশি বাঙ্গালি ও ডিভোর্সি প্রেমিকা অসীমার সাথে পাঞ্জাবি ভিকির প্রেমও খানিকটা ব্যতিক্রম বটে। স্পার্ম ডোনেশন, দিল্লির সমাজ, বর্নিল ভারতীয় সংস্কৃতি- সবমিলে এক প্যাকেজেই ছিল যেন অনেক কিছু। সেই সাথে বিখ্যাত হয়েছিল সিনেমায় আয়ুষ্মানের নিজের গাওয়া ‘পানি দা’ গানটিও। ২০১২ সালের নিজের প্রথম সিনেমাতেই স্পার্ম ডোনেশন ও বন্ধ্যাত্বের মতো সিরিয়াস গল্পেই বলিউডে শুভ যাত্রা শুরু তার।

দাম লাগাকে হাইশা

তারপরে বেশ কিছু দিনের অজ্ঞাতবাস। তিন বছরের ক্যারিয়ারে টানা ফ্লপের পরে নিজের ট্রেন্ড বেছে নেওয়া। ছোট শহরের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের নানা সংকট। সিনেমাটা দারুণ ভাবে বানিয়েছিলেন পরিচালক শরত কাটারিয়া। দাম্পত্য নিয়ে তৈরি সে সিনেমার গল্পেই ছিল মুহূর্তে মুহূর্তে টুইস্ট। দারুণ দর্শক জনপ্রিয়তাও পায় ভূমি পেদনিকার ও আয়ুষ্মান খুরানার জুটি।

শুভ মঙ্গল সাবধান

বর-বউ রাজি, বিয়ের আয়োজনও চলছে পুরোদমে। এর মাঝে ফিসফাস!! কি নিয়ে? মোদিত শর্মা নামের যে চরিত্রে আয়ুষ্মান অভিনয় করেছেন সেই চরিত্রে আদৌ কোন মূলধারার নায়কের অভিনয় করতে রাজি হওয়ার কথা না, অন্তত বলিউডে না। আবারও ভূমি-আয়ুষ্মান জুটি এবং ছোট শহরের সংকট- সবই ছিল গল্পে। ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের মতো জরুরি ইস্যু নিয়ে করা দারুণ সিনেমাটির গল্পও কিন্তু ফেলনা নয়, ভীষণ সিরিয়াস!

বেরেলি কি বারফি

সে বছরের আরও একটি অদ্ভূত গল্প বলতেও কিন্তু হাজির হয়েছিলেন আয়ুষ্মান খুরানা। সাধারণ এক ছেলের গল্প, ছোট শহর-নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের বাঁধা ছক। প্রেমে ছ্যাঁকা খেয়ে প্রেমের উপন্যাস লেখা এক লেখক ও তার একমাত্র পাঠিকার মধ্যের প্রেমের গল্প। যেখানে নিজের ফাঁদে নিজেই আটকা পড়ে আয়ুষ্মান অভিনীত চিরাগ চরিত্রটি। দুর্দান্ত একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন ভারতের এ সময়ের ক্রেজ রাজকুমার রাও-ও । কৃতী শ্যাননও ছিলেন, নাম ভূমিকায়।

এবং এ বছরে যা আসছে…

আন্ধাধুন

মুক্তি পেতে চলেছে আয়ুষ্মানের নতুন সিনেমা ‘অান্ধাধুন’। ‘বদলাপুর’, ‘এক হাসিনা থি’ এবং ‘জনি গাদ্দার’-এর মতো দুর্দান্ত সব থ্রিলার করিয়ে পরিচালক শ্রীরাম রাঘবন পরিচালিত এ সিনেমায় দর্শক পরিচিত হবে হ্যাপি গো লাকি অন্ধ পিয়ানো বাদক আয়ুষ্মানের সাথে। ট্রেলারে তার চরিত্রকে বলতে শোনা যায়, ‘যখন মানুষ অন্ধ হওয়ার সমস্যার কথা জানে তখন সুবিধাগুলোর বিষয়ে অবগত নয় কেন!’ সিনেমায় আরও আছেন অধুনা নেটফ্লিক্স স্টার বলে খ্যাত রাধিকা আপ্তে এবং টাবু।

বাধাই হো

নিজেদের মধ্যবয়সের শেষতম লগ্নে বাড়িতে নতুন অতিথির আগমন ঘটাতে চলেছেন বাবা-মা। কেমন হবে সেই বাড়ির বড় ছেলের পরিস্থিতি? যার নিজেরই বিয়ের বয়স হয়ে গেছে, দিব্যি গার্লফ্রেন্ড আছে! এমন চরিত্রেই আছেন আয়ুষ্মান। ঘর থেকে পাড়া, সেখান থেকে প্রেম, সবেতেই বিভ্রান্ত এক যুবকের গল্প নিয়ে এখন অক্টোবরে মুক্তির অপেক্ষায় আছে ‘বাধাই হো’।

সুতরাং আরও অনেকদিন বেঁচে থাকুন আয়ুষ্মান, আরও অনেকগুলো অন্যরকম গল্পের সিনেমায় অভিনয় করে আনন্দ দিন দুনিয়া জোড়া বলিউডের লাখো কোটি দর্শককে।