স্বয়ং বিল গেটস ওদের কদর করেন জানেন? বুঝতে পারছেন না? মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা, তথ্যপ্রযুক্তির একজন শীর্ষ ব্যক্তিত্ব, বিশ্বের প্রথমদিককার ধনকুবেরদের একজন বিল গেটস একবার এক সাক্ষাৎকারে ওদের নিয়ে কী বলেছিলেন মনে নেই? তিনি বলেছিলেন কোনো কঠিন কাজ করার জন্য আমি একজন অলস মানুষকে পছন্দ করি। জ্বী, অলস। যাদেরকে আলসে, কুঁড়ে, অকর্মণ্য, ইউজলেস, স্লথ, লেজি অ্যাস ইত্যাদি নামে আপনারা ডেকে থাকেন। অথচ কঠিন কাজে বিল গেটসের এক নম্বর পছন্দ তারাই। কেনো? কারণ বিল গেটসের মতে একজন অলসই পারে কঠিন কাজ সম্পাদনের জন্য একটি সহজ রাস্তা খুঁজে বের করতে। বাকি কাজ দেখানেওয়ালারা যেখানে প্রচুর ওয়ার্কিং আওয়ার খরচা করে সারাদিন শেষে একটা সমাধানে পৌঁছায়; সেখানে অলস লোকটি প্রায় পুরোদিন গায়ে বাতাস লাগিয়ে, একটু রেস্ট-ফেস্ট নিয়ে একদম শেষ মুহূর্তে কাম-তামাম করে দেয়ার জন্য ঠিক একটি মোক্ষম শর্টকাট পথ খুঁজে বের করে। আহা! দিনশেষে কাজ হওয়া দিয়ে কথা। সেটা হলো কি না তা দিয়ে বিচার করুন। তার মানে বুঝতেই পারছেন অলসরা এক বিশেষ প্রজাতি। তাদের পরিশ্রমে অনীহা থাকতে পারে, গতর খাটার ব্যাপারে আগ্রহের কমতি থাকতে পারে, কিন্তু গুণে তাদের কমতি নেই। তারপরও ওদের হাল বেহাল করতে ফিলিপিনোদের বাঁধলো না। রীতিমতো অপমান! তবে এ অপমানের আঁচ ওরা নিজেদের গায়ে লাগতে দিয়েছে কি না তা-ও বিবেচনার বিষয়। আফটার অল, ওটাও একটা পরিশ্রমের কাজ। রাজ্যের সেরা কুঁড়ে নির্বাচনের গল্পটা জানেন? ওহ্ তাও জানেন না? হয়েছিলো কী, এক রাজা ঘোষণা দিলেন রাজ্যের যারা আসলেই অলস তাদেরকে তিনি বাকি জীবন শুয়ে-বসে খাওয়ানোর পুরস্কার দেবেন। রাজ্যের আকাইম্মা ও ভাদাইম্মা গোষ্ঠী দেখলো এ তো প্লাটিনাম অপরটিউনিটি। শ’য়ে শ’য়ে ভাদাইম্মা রেজিস্ট্রেশন করলো। সবার দাবি কুঁড়ের সেরা সে-ই। রাজা দেখলেন এ তো মহা মুশকিল হলো। এদের মধ্যে আসল কুঁড়েকে কীভাবে বের করা যায়? অনেক ভেবে ঠিক হলো সব কুঁড়েকে এক বিল্ডিংয়ে রাখা হবে। সবগুলো আলসে ঢুকলো বিল্ডিংয়ে। শর্ত হলো যা-ই করো বাপু করবে দালানের ভেতর। ওখান থেকে বেরুনো যাবে না। কুঁড়েদের তো ইদ। তারা সেখানেই দিনভর আমোদে কাটালো। শুয়ে, বসে, গল্পগুজব করে ইচ্ছেমতো কুঁড়েমি করলো। রাত ঘনিয়ে এলে সব যখন আলসেমি করে করে টায়ার্ড, সবাই গেলো ঘুমোতে। আর ওদিকে রাজার নির্দেশে তাঁর লোকজন বিল্ডিংয়ে আগুন ধরিয়ে দিলো। যেই না আগুন ছড়াতে শুরু করলো কুঁড়ের দলের ঘুম হারাম। জানের মায়ায় এক একজন দৌড়ে, ঝাঁপ দিয়ে, লাফিয়ে বিল্ডিং ছেড়ে পড়িমরি বেরোতে লাগলো তারা। কিন্তু এর মাঝেও কিন্তু দু’জন কিন্তু নট নড়নচড়ন। এত গনগনে উত্তাপের মাঝেও তারা বেঘোরে ঘুমিয়েই যাচ্ছে, ঘুমিয়েই যাচ্ছে। একসময় যখন আগুনের আঁচ গায়ে লাগা শুরু হলো ওদের একজন চোখ বুজেই আরেকজনকে শাসায়, “কতোবার না বলেছি ঘুমোলে পর গায়ে সুড়সুড়ি দিবি না?” বলেই কাথামুড়ি দিয়ে আরো আরাম করে অন্যপাশ ফিরে শুয়ে পড়ে। বাকিজনের তো ওসবেরও বালাই নেই। রাজা বুঝলেন সেরা কুঁড়ে ওরাই। তারপর আর কী? বাকি জীবন রাজার হোটেলের ফ্রি মেম্বারশিপ। থাকা-খাওয়া-আরাম-আয়েশ বিলকুল ফ্রি!
কিন্তু সবাই কি আর সেরাম রাজকপাল নিয়ে জন্মায়? সবাই কি আর ওই রাজার মতো দিলদরিয়া হয়? হয়না। যেমন নয় ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুয়ার্তে। সবার রাজার হোটেল-বাস জোটে না। কারো কপালে জোটে হাজত-বাস। যেমন কিছু হতভাগা ফিলিপিনো প্রতিভাবান। এই নিউজই তার দুঃখভারাক্রান্ত প্রমাণ:
এই সেক্টরে ফিলিপিনোদের সুনাম কিন্তু সর্বজনবিদিত। অথচ বেরসিক ফিলিপিনো সরকার এদের গুণের কদর দিতে জানেনা। এদের অনুভূতি তাদের কাছে মূল্যহীন। তারা কি জানে এই প্রতিভাবানদের সুপ্ত ট্যালেন্ট সম্পর্কে? গেলো বছর যুক্তরাষ্ট্রের এক সমীক্ষক দল প্রচুর গবেষণা করে বের করেছে যে অলস ব্যক্তিমাত্রই প্রচুর আইকিউ-এর অধিকারী। বেশি আইকিউওয়ালারা খুব দ্রুত একঘেয়েমি অনুভব করে। তাই প্র্যাকটিকাল কাজের চাইতে তারা বেশি পছন্দ করে চিন্তা করতে। আর যারা বেশি কাজ করতে ভালোবাসে তারা এর উল্টো। তারা প্র্যাকটিকাল কাজে নিয়োজিত থেকে মনকে সক্রিয় রাখে। কারণ তারা বেশিক্ষণ চিন্তা করতে পারে না। তার মানে দাঁড়ালো অলসরাই বেশি চিন্তাশীল। অলসরাই বেশি ক্রিয়েটিভ।
সো ডিয়ার ফিলিপিনো দুতের্তেমশাই থুক্কু মেসোমশাই, ওদের মারবেন না। ওদের খেতে দিতে না পারেন, হাজতে রাখবেন না। ক্রিয়েটিভদের কদর করতে শিখুন। আখেরে তাতে আপনাদেরই লাভ। যে দেশে প্রকৃত গুণীর কদর নেই, সে দেশ রসাতলে যাবে না তো কি বিশ্বকাপ জিতবে?