‘বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের (বিসিআই) এক দুর্দান্ত, দুঃসাহসী স্পাই; গোপন মিশন নিয়ে ঘুরে বেড়ায় দেশ-দেশান্তরে। বিচিত্র তার জীবন। অদ্ভুত রহস্যময় তার গতিবিধি। কোমলে-কঠোরে মেশানো নিষ্ঠুর সুন্দর এক অন্তর। পদে পদে তার বিপদ-শিহরণ-ভয় আর মৃত্যুর হাতছানি।’
‘মাসুদ রানা’ পড়েননি বা ‘মাসুদ রানা’র নাম শোনেননি এমন মানুষ এদেশে নেই। মাসুদ রানার অ্যাডভেঞ্চার পড়ে রোমাঞ্চ অনুভব করা সেইসব পাঠকের জন্য নতুন ‘চমক’ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার। কল্পনার মাসুদ রানাকে আরও একবার সিনেমার পর্দায় দেখানোর ঘোষণা দিয়েছেন জাজের কর্ণধার আবদুল আজিজ। ‘মাসুদ রানা’র জনক কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির এ বিষয়ক চুক্তিও হয়েছে। সিনেমা তৈরির জন্য সেবাভক্তদের প্রিয় ‘কাজীদা’-এর কাছে থেকে তিনটি গল্পের লিখিত অনুমতিও নিয়েছে জাজ।
নিজেদের ফেসবুক পাতায় জাজ জানিয়েছে যে, তারা আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ‘মাসুদ রানা’ সিরিজ থেকে তিনটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করবে। সিনেমাগুলোর চিত্রনাট্য তৈরি হবে সিরিজের ‘ধ্বংস পাহাড়’, ‘ভারতনাট্যম’ ও ‘স্বর্ণমৃগ’ থেকে। প্রথম সিনেমার টাইটেল হবে ‘মাসুদ রানা’ (ধ্বংস পাহাড়)। যার প্রাথমিক বাজেটও নির্ধারিত হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আবদুল আজিজ, ৫ কোটি টাকা মাত্র। যদিও ‘মাসুদ রানা’ চরিত্রে কে অভিনয় করবেন তা এখনো জানায়নি প্রযোজনা সংস্থাটি। অবশ্য প্রথম তিনটি সিনেমাতেই নামভূমিকায় কাজ করবেন একই অভিনেতা- এটুকু নিশ্চিত করেছে জাজ। এরইমধ্যে মাসুদ রানা ফ্রাঞ্চাইজির সাথে ব্র্যান্ড হিসেবে যুক্ত হয়েছে ইউনিলিভার। শীঘ্রই আরও বেশকিছু ব্র্যান্ড এই ফ্যাঞ্চাইজির সাথে যুক্ত হবে বলে আশাবাদী প্রযোজনা সংস্থাটি।
গত পঞ্চাশ বছর ধরে গোটা বিশ্বে ভয়ঙ্কর সব মিশন নিয়ে ঘুরে চলছে আমাদের রানা। কখনও সিরিয়ার গোলান মরুভূমিতে, কখনও মস্কো, মিশর বা মেক্সিকোর গুপ্তধন উদ্ধারে, আবার আফ্রিকার কোনো অত্যাচারী শাসকের অবসান ঘটাতে, কিংবা আর্কটিকের প্রাচীন রহস্য উদঘাটনে – দুনিয়ার কোথায় যায়নি রানা?! গেল ২০১৬ সালে পঞ্চাশে পড়েছে মাসুদ রানা সিরিজ। সেই হিসাবে রানার বয়স এখন ৮০; কিন্তু ‘আসি’ বলার কোন লক্ষণ এখনও নেই। কাজী আনোয়ার হোসেনের সৃষ্ট অসামান্য এই সিরিজ বাংলা সাহিত্যে এক নতুন বাঁক সৃষ্টি করে।
এই সিরিজের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়েই দারুণ সাফল্য পায় সোহেল রানা-কবরী অভিনীত মাসুদ রানা চলচ্চিত্রটি। মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ১১তম বই ‘বিস্মরণ’ অবলম্বনে ১৯৭৩ সালে নির্মাণ করেছিলেন ‘মাসুদ রানা’ চলচ্চিত্রটি। সেলুলয়েডে যা মুক্তি পায় ১৯৭৪ সালে। যার চিত্রনাট্য লিখেছিলেন কাজী আনোয়ার হোসেন নিজেই।
পরবর্তীতে একাধিকবার ‘মাসুদ রানা’কে বড় ও ছোট উভয় পর্দায় দেখা গেলেও সেগুলো দর্শক মনে ন্যূনতম দাগ কাটেনি। আরেকটি বই ‘স্বর্ণমৃগ’ বাংলাদেশ বেতারে নাট্যরূপ দেওয়া হয়েছিল ১৯৮৭ সালে। খায়রুল আলম সবুজ ছিলেন রানা চরিত্রে। আর ১৯৯৪ সালে সম্প্রচারিত পিশাচ দ্বীপ অবলম্বনে বিটিভির প্রথম প্যাকেজ নাটক ‘প্রাচীর পেরিয়ে’ নির্মাণ করেছিলেন আতিকুল হক চৌধুরী। রানা-সোহানার ভূমিকায় ছিলেন নোবেল ও বিপাশা হায়াত।