ফিরোজা বেগম, বাংলার কালোত্তীর্ণ সংগীত শিল্পী, যার কন্ঠে জীবন পেয়েছিল কাজী নজরুল ইসলামের গান। নজরুল সংগীত চর্চার একান্ত স্বাতন্ত্রে অনন্য এক মার্গ ছুঁয়েছিলেন ফিরোজা বেগম। আমৃত্যু তিনি সংগীতের চর্চা করেছেন গভীর উপলদ্ধি দিয়ে, ধ্যান মগ্ন ছিলেন নজরুল সংগীত চর্চায়।
প্রয়াণের পর এই অনন্য নজরুল সাধক শিল্পীর সম্মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ফিরোজা বেগম মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অধীনে ২০১৬ সাল থেকে বিভিন্ন ধারায় দেশের কীর্তিমান সংগীত শিল্পীদের সম্মান জানানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে। সেই ধারাবাহিকতায় শিল্পী রুনা লায়লাকে ২০১৮ সালে ‘ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক’ প্রদান করা হয় ৩০ জুলাই। গুনী এ শিল্পীর হাতে সম্মাননা তুলে দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান।
শিল্পী রুনা লায়লা উপমহাদেশের এমন একজন প্রখ্যাত শিল্পী, সংগীতে যার যাত্রা শুরু হয়েছিল মাত্র ১২ বছর বয়সে। দেশে ও দেশের বাইরে তিনি নিজের সংগীতের জন্য সুখ্যাতি অর্জন করেছে। একাধিকবার আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পুরস্কৃত হয়েছেন। যদিও প্রিয় শিল্পী ফিরোজা বেগমের স্মৃতিতে উৎসর্গীকৃত সম্মাননা পেয়ে পুরস্কারের মঞ্চে নিজের মুগ্ধতা প্রকাশ করতে ভোলেননি। বলেছেন, ‘জীবনের অর্জনের তালিকায় যত স্বীকৃতি রয়েছে তার মাঝে এই পুরস্কারটি অন্যরকম, যেখানে জড়িয়ে আছে ফিরোজা বেগমের নাম।’ পাশাপাশি সেই মুহূর্তটিও স্মরণ করেন যখন তিনি প্রথম এই সম্মাননা প্রদানের বিষয়ে অবগত হন। শিল্পী রুনা লায়লাকে সম্মাননা হিসেবে একটি স্বর্ণ পদক ও এক লাখ টাকার চেকও প্রদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য ড. মোঃ আখতারুজ্জামান।
ফিরোজা বেগম মেমোরিয়াল ট্রাস্টের পৃষ্ঠপোষক, ফিরোজা বেগমের সহোদর ও এসিআই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জনাব এম আনিস উদ দৌলাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডীন ড. আবু মোঃ দেলোয়ার হোসেন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ড. মোঃ কামাল উদ্দীন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠিত ট্রাস্ট ফান্ডগুলোর মধ্যে এই ফান্ডটিই বিশ্ববিদ্যালয়কে সবচেয়ে বেশি সমৃদ্ধ করছে বলে নিজেদের বক্তব্যে অভিমত পোষন করেন তারা। এই ফান্ডের মাধ্যমে দেশে শুদ্ধ সংগীত চর্চায় মগ্ন শিল্পীদের ভবিষ্যতে আরও উৎসাহ দেওয়া সম্ভব হবে বলে প্রত্যাশা রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তিন কর্তা ব্যক্তি।
নিজের বক্তব্যে এসিআই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও শিল্পী ফিরোজা বেগমের সহোদর জনাব এম আনিস উদ দৌলা নিজের বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। সংগীতের প্রতি তার প্রয়াত সহোদরার নিবেদন ও ত্যাগ সম্পর্কিত কিছু স্মৃতি তিনি নিজ বক্তব্যে রোমন্থন করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সংগীত পরিবেশন করেন সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এরপর নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি সম্মান পরীক্ষায় চূড়ান্ত ফলাফলে শীর্ষস্থান গ্রহণকারী শিক্ষার্থী উর্মি ঘোষকেও জানানো হয় শুভেচ্ছা।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ফিরোজা বেগমের পুত্র হামিন আহমেদ, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, নৃত্য শিল্পী লায়লা হাসান প্রমুখ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান টুম্পা সমাদ্দার অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন।