শুরুতেই বলে নিচ্ছি, এই লেখার মোড়ে মোড়ে আসন্ন মারভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্স মুভি ‘অ্যাভেঞ্জার্স ফোর’ বা ইনফিনিটি ওয়্যার-এর সেকেন্ড পার্ট এবং ‘স্পাইডারম্যান: হোমকামিং টু’-এর সম্ভাব্য স্পয়লার থাকতে পারে। তাই এই যাত্রায় নামবেন কি নামবেন না সেটা একেবারেই আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। যদিও মুভিগুলোই এখনও নির্মানাধীন। তাই স্পয়লারের বিষয়টিও পুরোপুরি নিশ্চিত না। তবুও আপনাকে সাবধান করাটা লেখকের নৈতিক দায়িত্ব। শুধু তাই-ই না, ইনফিনিটি ওয়্যার নিয়েও থাকছে স্পয়লারযুক্ত প্রসঙ্গ। তাই সম্ভাব্য ও নিশ্চিত স্পয়লারগুলো পড়তে না চাইলে এখনই এই লেখা ত্যাগ করুন, যদিও পেজটি বুকমার্ক করে রাখতে ভুলবেন না (সব সিনেমার রিলিজ শেষে চাইলেই দেখতে পারবেন)।
এখনও টাইটেল চূড়ান্ত না হওয়া অ্যাভেঞ্জার্স মুভির চতুর্থ কিস্তি মুক্তি পাবার কথা সামনের বছর, মে মাসে। আর স্পাইডারম্যান: হোমকামিং টু-র রিলিজ ডেট জুলাইয়ের পাঁচে। অর্থাৎ দুটি সিনেমার মুক্তির তারিখই বেশ কাছাকাছি। যেহেতু ইনফিনিটি ওয়্যারে থ্যানোস-এর তুড়িতে আরো অনেকের সাথে পিটার পার্কারও উধাও হয়ে গিয়েছিলো, অথচ হোমকামিং টু মানেই বোঝা যায় যে স্পাইডারম্যান জীবিত। তাহলে বাকিদের কে কোথায় তা ট্রেলারে কীভাবে দেখানো হবে সেটা আসলেই চিন্তার বিষয়। সে কারণে ভক্তদের মধ্যে যখন হোমকামিং টু-এর মার্কেটিং স্ট্রাটেজি কেমন হবে এবং প্রচারণায় কীভাবে কী দেখাবে তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা, তখনই ‘রেডিট’ ওয়েবসাইটের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে পাওয়া গেলো হোমকামিং টু-এর প্লট সম্পর্কিত ফাঁস হওয়া তথ্য। লিস্ট ধরে বলা হয়েছে কী কী হতে যাচ্ছে হোমকামিং টু-এ। যা থেকে আঁচ করা যাবে অ্যাভেঞ্জার্স: ইনফিনিটি ওয়্যারের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত পর্বের প্লটও। চাইলে ধরে নিতে পারেন এটি কোনো উৎসাহী ভক্তের মনগড়া কাহিনীবিন্যাস। এমন ভাবলে ছোট্ট ফুটনোট: ওই একই অ্যাকাউন্ট থেকে ইনফিনিটি ওয়্যার থিয়েটারে মুক্তি পাওয়ার অনেক আগে শেয়ার করা ঘটনাগুলোর সাথে বেশিরভাগই হুবহু মিলে গিয়েছিলো।
আপনার যদি স্পয়লার খাওয়ার শখ না থাকে, তারপরও এখনও কৌতুহলবশত পড়েই যাচ্ছেন লেখাটি, তবে আরো একবার আপনাকে সতর্ক করছি। কারণ এবারে ওই রেডিট অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করা স্পাইডারম্যান: হোমকামিং টু-র প্লট সংক্রান্ত তালিকাটি এক করে দেওয়া হবে।
১. বিশ্বাস না করলে নাই, কিন্তু হোমকামিং টু-র শুরুটা নাকি হবে পিটার পার্কারের শোকপালন দিয়ে। তার মানে ইনফিনিটি ওয়্যারের ভয়াবহতার থেকে পিটার ওরফে স্পাইডারম্যান জীবিত উদ্ধার পেয়েছে। তবে পিটার বেঁচে ফিরলেও অ্যাভেঞ্জার্স ফোর-এ টনি স্টার্কের বোধহয় শেষরক্ষা হয়নি। কারণ পিটারের শোকজ্ঞাপন টনির উদ্দেশ্যেই। গত একবছর ধরেই নানা প্ল্যাটফর্মে ঘুরেফিরে অ্যাভেঞ্জার্স ফোর দিয়ে এমসিইউ থেকে টনি স্টার্ক বিদায় নিচ্ছেন এমন কানাঘুষা শোনা যাচ্ছিলো। তাই কে জানে হতেও পারে এমনটা। হোমকামিং টু-র ঘটনাটা নাকি টনিরই তৈরি করা অভাবনীয় কোনো উদ্ভাবন নিয়ে, যা চুরি হয়ে গিয়েছে এবং সেটা পুনরুদ্ধার স্পাইডারম্যানেরই দায়িত্ব।
২. ঘটনার প্রেক্ষাপট মূলত লন্ডন শহর। পিটার আর তার বন্ধুরা সেখানে স্টার্ক ইন্ডাস্ট্রিজ আয়োজিত একটি কনফারেন্সে অংশ নিতে যাবে। পার্শ্বচরিত্রগুলোর মধ্যে থাকছে এমজে, নেড, লিজ, ফ্ল্যাশ, আন্ট মে আর হোমকামিংয়ে অভিনয় করা স্কুল শিক্ষার্থী ও স্টাফরা। গিনেথ প্যালট্রো-ও থাকছেন পেপার পট্স চরিত্রে।
৩. প্রধান খলচরিত্র সম্ভবত ‘মিস্টেরিও’। মিস্টেরিও বিশ্ব-কুখ্যাত তস্কররাজ এবং ইল্যুশন তৈরিতে ওস্তাদ। স্টার্ক ইন্ডাস্ট্রিরই অজ্ঞাতনামা কোনো এক কর্মকর্তার নির্দেশে সে টনি স্টার্কের নির্মিত উদ্ভাবনটি চুরি করবে। অন্য একটা সোর্স থেকে এই চরিত্রটিতে নামজাদা অভিনেতা জ্যাক গিলেনহালের অভিনয় করার গুজব শোনা যাচ্ছে। মিস্টেরিও’র মাথার ওই ফিশ-বোল সদৃশ হেলমেটটি মুভিতে রাখা হলেও সম্ভবত একবারের জন্যও সেটি পরতে দেখা যাবে না।
৪. জেসিকা ড্রিউ, যাকে কমিকবুকে স্পাইডারওম্যান হিসেবে দেখা গেছে তিনি এ সিনেমায় এমআইসিক্স অপারেটিভ হিসেবে থাকছেন। তার কোনো সুপার পাওয়ার না থাকলেও সম্মুখযুদ্ধে তিনি তুখোড়। মুভিতে তিনি প্রথমে একাই মিস্টেরিও-র পিছু নেবেন। পরে কোনো এক বেদনাদায়ক ঘটনার জের ধরে মিস্টেরিওকে থামাতে পিটারের সাথে হাত মেলাবেন।
৫. স্কুলে পিটারের সাথে নতুন এক টেক-জিনিয়াসের সাথে ঝামেলা বাঁধবে। নাম তার অ্যালিস্টেয়ার স্মাইদ। তার চেষ্টা সবসময় পিটারকে নিজের থেকে নিচু দেখানো। এরপর সে ফন্দি আঁটবে পিটারের বন্ধুদের তার বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলার। অ্যালিস্টেয়ারের বাবা স্পেনসার স্মাইদ স্টার্ক ইন্ডাস্ট্রিজে কাজ করে। তবে কী স্পেনসারের মাধ্যমেই মিস্টেরিওর কাছে স্টার্কের ওই উদ্ভাবনটা পৌঁছাবে?
৬. হোমকামিং প্রথম পর্বের ভিলেইন ‘ভালচার’কে ফের এ পর্বে দেখা যাবে। তবে ছোটো চরিত্রে। সাথে থাকবে ‘স্করপিয়ন’। স্টার্কের উদ্ভাবন চুরি করার কাজটা যে লোক মিস্টেরিওকে দেয় সেই একই লোকের জন্য স্করপিয়নও কাজ করে। তারা মিলে ভালচার-এর কাছ থেকে স্পাইডারম্যানের আসল পরিচয় বের করার চেষ্টা করবে।
৭. ওই অজ্ঞাতনামা স্টার্ক ইন্ডাস্ট্রিজ কর্মকর্তাটি কে তা খোলাসা না করলেও কমিকবুকের বড় এক ভিলেইন চরিত্রই হবে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। প্রথম সারির একজন অভিনেতাকে কাস্ট করাও একটি সম্ভাব্য চমক। যদিও তার স্ক্রিন প্রেজেন্স হবে খুবই সামান্য।
৮. এই এতো এতো ভিলেইনের সমাবেশের কারণে আরেকটা চমকের কথা সহজেই অনুমান করা যায়। সেটি হচ্ছে ‘সিনিস্টার সিক্স’। হুম, স্পাইডারম্যান কমিকসের সুপার ভিলেইনদের দলের নাম এটি। এর আগে সনি পিকচার্সের ফ্র্যাঞ্চাইস, অর্থাৎ অ্যান্ড্রু গার্লফিল্ডের ‘অ্যামেজিং স্পাইডারম্যান টু’ মুভির পোস্ট ক্রেডিটে আভাস পাওয়া গিয়েছিলো সিনিস্টার সিক্স ফরমেশনের। বেশ এক্সাইটেড ছিলেন ভক্তরা সেটা দেখার পরে। কিন্তু ওই সিরিজটা ওখানেই থেমে গিয়েছিলো। গুজব সত্যি হলে এমসিইউ-এর অধীনে স্পাইডারম্যান রিবুটের দ্বিতীয় মুভিতেই দেখা মিলতে যাচ্ছে সিনিস্টার সিক্সের। তবে সুপার ভিলেইনদের এই দলটি তৃতীয় মুভিতে সুযোগ পাবে কি না তা নিশ্চিত করে বলা হয়নি।
৯. প্রথম পয়েন্টেই বলা হয়েছে মুভিতে পিটার আর তার বন্ধুরা লন্ডনে একটা কনফারেন্সে যোগ দিতে যাচ্ছে। তাই মুভির সম্ভাব্য টাইটেল- ‘স্পাইডারম্যান: ফিল্ড ট্রিপ’।
সকল নিষেধ উপেক্ষা করে পুরোটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এখন এমনও হতে পারে যে সবটাই মিলে গেল। কিংবা দেখা গেল দুয়েকটা তথ্য সঠিক বা কিছুই মেলেনি। মারভেল বা সনি-র কেউই এই ফাঁস হওয়া তথ্যের সত্যতা স্বীকার করেনি। বলাই বাহুল্য, স্বীকার করার কথাও না। তবে তথ্যগুলো মিলুক বা না মিলুক, কোনোটাতেই স্পাইডারম্যানের পরের মুভির লোকসান নেই। মিললো কি মিললো না এটা মিলিয়ে দেখার জন্যেও তো দেখা যেতে পারে।