স্নাইডার-কাট দিবি কি না বল?

কমিকবুক তো ছেলেভোলানো বস্তুই। এর রাইটার-ইলাস্ট্রেটর-ক্রিয়েটররা এসবে সিদ্ধহস্ত। বিশ্বের শীর্ষ কমিকবুক জায়ান্টদের অন্যতম ‘ডিসি’র কর্তাব্যক্তিরা এগুলো ভালো পারবেন তা-ও জানা কথা। কমিকসের পাতা পেরিয়ে যখন রূপালী পর্দায় চলে আসে তখনও কি তাদের বিশেষ ক্ষমতায় কোনো কমতি আসে? আসে না মনে হয়। নইলে প্রায় এক বছর হতে চললো ‘জাস্টিস লিগ’ মুভির। এখনও কি করে তারা ভক্ত-অনুরাগীদের আশায় রেখে দিতে পেরেছেন। এটি ছেলেভোলানো আশ্চর্য ক্ষমতার কারসাজি না হয়ে যায়ই না।

কী সেই কারসাজি? প্রেক্ষাপটটা বলি আগে। মার্থা-কাণ্ডের জেরে ‘ব্যাটম্যান ভি সুপারম্যান’ নিয়ে ডিসি ভক্তরা এমনিতেই ছিলো হতাশ। মাঝে ওয়ান্ডারওমেন সলো মুভির সুবাদে একটু আশার আলো উঁকি দেয়। কিন্তু তারপরের অনেক সাধের ‘জাস্টিস লিগ’ ঠিক জমলো না। পায়ের তল থেকে মাটি সরে যাওয়ার মতোই দুরবস্থা। তাতে কী! মায়ের মন যেমন সন্তানের দোষ মানতে নারাজ, তেমনই লিগের ভরাডুবি মেনে নিতে অপারগ ডিসি-ফ্যানগোষ্ঠী বললো “কুছ তো গড়বড় হ্যায় দায়া… কুছ তো গড়বড় হ্যায় … পাতা লাগাও”। সিআইডি ফ্যান দল কাজে নেমে গেলো। চুলচেরা অনুসন্ধানে বেরিয়ে এলো সূক্ষ্ম কারচুপির ষড়যন্ত্র। ক’দিন আগেই ডিসি এক্সটেন্ডেড ইউনিভার্স (ডিসিইউ)–এর ডিস্ট্রিবিউশনের স্বত্ত্ব নিয়েছিলো ওয়ার্নার ব্রাদার্স। তাদের নির্দেশ ছিলো মুভির দৈর্ঘ্য যাতে কোনোভাবেই দু’ঘন্টা না পেরোয়। এর ফলে নাকি পরিচালক জ্যাক স্নাইডারের স্টোরিবোর্ডে চলে ব্যাপক কাঁটাছেটা। ফলাফল স্নাইডারের মাস্টারপিস মুভির বদলে দর্শকের সামনে আসে মামুলি শর্টার ভারশন। ফুঃ, পুরো মুভি না দেখালে কি আর গল্প জমে? এরপরই কে বা কারা ছড়িয়ে দেয় অচিরেই ‘মাস্টারপিস’ ফুল ভারশন স্নাইডার-কাট রিলিজ দেয়া হবে। আর ওতেই নাকি বোঝা যাবে স্নাইডার কি জিনিস আর ডিসি-র মুভি কতোটাই না অনবদ্য। ডিসি-র পক্ষ থেকে এই গুজবের পালে হাওয়া দেয়া হয়নি ঠিকই, তবে জোরগলায় অস্বীকারও করা হয়নি। খবরটায় বিশ্বাসী ডিসি ভক্তের সংখ্যাও দিন দিন বাড়তে থাকে। জ্যেষ্ঠ ভক্তেরা ছোটোদের বোঝাতে থাকে এই তো, ব্লু-রে রিলিজ পাবে তো সামনেই। সেটাতেই পাবে সেই বহুকাঙ্ক্ষিত স্নাইডার-কাট। অবসান ঘটবে অপেক্ষার। অনন্য, অনবদ্য, অভূতপূর্ব স্নাইডার-কাটের আশায় আশায় দিনগুজরান হতেই থাকে, হতেই থাকে। চোখেমুখে স্বপ্ন- ডিসি-র ত্রাণকর্তা হিসেবে একদিন আসবেই সেই মহিমান্বিত এক্সটেন্ডেড ‘স্নাইডার-কাট’। যাতে ঘটেছে স্নাইডার-এর নিজস্ব ভিশন-এর যথার্থ প্রতিফলন। শুধু তার ভিশন-ই নয়, ঘটেছে ফ্যানদের প্রত্যাশার প্রতিফলনও।

ওদিকে দিন পেরিয়ে মাস গেলো, মাস পেরিয়ে বছরও ঘুরতে চললো, ‘স্নাইডার-কাট’-এর আর দেখা নেই। ডিসি অনুরাগীরা যখন অধৈর্য, তখন কামান থেকে বেরিয়েছে গোলা। আর সেটা ফেটেছে ফোর্বস-এর বিশিষ্ট কামানিস্ট থুক্কু কলামিস্ট মার্ক হিউজ আর ড্রিমওয়ার্কস অ্যানিমেশনের নামকরা স্টোরিবোর্ড আর্টিস্ট জে অলিভা-র টুইটার কথোপকথনের জের ধরে।

মার্ক আর জে’র কথায় টেকনিক্যাল বিষয়াদির বাইরে এটা অন্তত স্পষ্ট যে জাস্টিস লিগে যা দেখা গেছে পুরোটাই ছিলো পূর্বপরিকল্পিত স্টোরিবোর্ড মেনেই। শুট করার পর কেটে ছোটো করে দেয়ার মতো কোনো প্রেশার স্নাইডারের উপর ছিলো না। যদিও ব্যক্তিগত দুর্যোগের কারণে স্নাইডার নিজে পুরো শুট শেষ করতে পারেননি, (আর এটাও স্নাইডার কাট-এর জন্য হাহাকারের পালে বাতাস পাবার আরেকটি কারণ) তারপরও যা শুট হয়েছে তা ১০৯ মিনিট রানটাইমের প্ল্যানেই হয়েছে।

তাদের পুরো কথোপকথনটি দেখা যাবে এখান থেকে:

মানে দাড়াচ্ছে যে, ওসব স্নাইডারের এক্সটেন্ডেড কাট-ফাট বলতে আসলে কিচ্ছুটি নেই। পুরোটাই একটা মিথ। তবে এসব হালকা যুক্তি কঠিন ভক্তজনের কাছে তো খুবই দুর্বল। তারা এখনও আশায় থাকতে চান। কিন্তু যা অবস্থা! ধৈর্য ধরে থাকতে থাকতে এক পর্যায়ে না অধৈর্যই হয়ে যান। কবে যেনো দাবিই করে বসেন- স্নাইডার-কাট দিবি কি না বল? ভক্তরা ক্ষেপে গেলে তাদের সামলানো কিন্তু দায়। সাবধান ডিসিইউ।

আর আম ডিসি অনুসারীদের বলছি, বেশি আশাবাদী না হওয়াই ভালো। আরেকটি ছোট্ট নিউজ শেয়ার করি। সিবিআর ডট কমের নিউজ:

মানে কিন্তু স্পষ্ট। এতোদিনকার স্ট্রাটেজিতে ‘বেটার মুভি’ বানানোর পরিকল্পনাটাই ছিলো না। কী ছিলো, তা উনারাই জানেন।

তথ্যসূত্র: www.bleedingcool.com