থ্রি ইডিয়টস, পিকে, লাগে রহো মুন্না ভাই এবং মুন্না ভাই এমবিবিএস-এর মতো একের পর এক ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রের পর নির্মাতা রাজ কুমার হিরানি ক্যারিয়ারে প্রথম বারের মতো নিয়ে আসছেন বায়োপিক, সেটিও কিনা সঞ্জয় দত্তের জীবনের গল্প নিয়ে? প্রদীপের রোশনাইয়ে আলোকিত সুপারস্টার সঞ্জয় দত্তের আলো-আঁধারের জীবন কাহিনি বেশ পরিচিত, জনপ্রিয় বলিউড নায়কের গল্পও বটে। আর সেই গল্প নিয়েই রাজকুমার হিরানি ও চিত্রনাট্যকার আভিজাত যোশির নতুন এই সিনেমা। বায়োপিক ‘সঞ্জু’র টিজার-ট্রেলার-সং দিয়ে দাবানল ছড়িয়ে চলেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। আগামীকাল কেবল মুক্তির অপেক্ষা।
ইউটিউবে সাড়ে তিন কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে মুভির ট্রেলার, যার কেন্দ্রীয় চরিত্রে, অর্থাৎ সঞ্জু হয়ে অভিনয় করবেন বলিউডের তরুণ তুর্কি রণবীর কাপুর। মেকআপ আর্টিস্টের গুণে এরই মাঝে উতরে গেছেন রনবীর কাপুর, তার ‘সঞ্জু’ লুকে।
সঞ্জুকে নিয়ে কেন চলচ্চিত্র? কি আছে সঞ্জুর জীবনে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলেই দেখা যাবে ‘কি নেই সঞ্জুর জীবনে?’ ‘ওভার দ্য টপ’ চলচ্চিত্রের মতোই, যেখানে রোমান্স, অ্যাকশন, সাফল্য হতাশা সবকিছুর একটি মিহি মিশ্রণ রয়েছে তার জীবনে। তবে সেই জীবনের গল্প সঞ্জুবাবার জন্মের পূর্বেই শুরু হয়েছিল। মা নার্গিস দত্তের গর্ভে থাকা অবস্থায়ই বাবা বলিউড তারকা সুনীল দত্ত পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে অনাগত সন্তান এর নাম ঠিক করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন পাঠকদের কাঁধে। শেষ পর্যন্ত পাঠকের দেয়া সবচেয়ে পছন্দের নাম ‘সঞ্জয়’ চুড়ান্ত করেছিলেন মা নার্গিস।
কলেজে যখন নেশায় বুদ হয়ে থাকতেন সেই সময়েই সঞ্জু মনস্থির করেন, তিনি অভিনেতাই হবেন। সুনীল সঞ্জুর অভিনয়ের প্রতি আর্জির মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছিলেন শুরুতে। তবে নিরুৎসাহিত করেন নি। পথ দেখিয়েছিলেন। এক বছরের জন্য ডুবে গিয়েছিলেন অভিনয়ের কঠিন প্রশিক্ষণে। তবে অভিনয়ের ক্যারিয়ারের থেকেও সেসময়ে সঞ্জুবাবার প্রেমিকার তালিকা নিয়েই হৈ চৈ হত সবচেয়ে বেশি। সিনেমায় কে কে দেখা দিচ্ছেন জানা যায়নি এখনো। শুধু মান্যতার চরিত্রে দিয়া মির্জা অভিনয় করেছেন নিশ্চিত। তবে বাকিরা কে কার চরিত্রে? তার চেয়ে আপাতত চলুন জেনে নেই সঞ্জুবাবার প্রেমিকাদের তালিকা-
‘রকি’ সিনেমার নবাগত টিনা মুনিমের সাথে প্রেমে জড়িয়ে যান সাঞ্জু বাবা। তবে মাদকনেশা আর অতিরিক্ত নজরদারির উপর দোষারোপ করে দুই বছরের মাথায়ই সঞ্জুর হৃদয় ভেঙ্গে দিয়েছিলেন টিনা। যদিও সম্পর্ক বিচ্ছেদের পরেও সঞ্জয় নজর রাখতেন টিনার উপর। টিনার সাথে প্রেমের গুজব শুনে ঋষি কাপুরকে একবার শাসাতেও গিয়েছিলেন তিনি।
টিনার সাথে বিচ্ছেদের পর বলিউডের উদীয়মান তারকা কিমি কাটকার এর সাথে প্রেমে জড়ান সঞ্জয়। কিমি তখন বলিউড এর তার ‘বোল্ড’ ক্যারেক্টারে পর্দায় আসার জন্য দারুন প্রশংসিত ছিলেন। তবে এবারও প্রেম বেশিদিন ঠাঁই পায়নি সঞ্জয়ের জীবনে। বিচ্ছেদ ঘটে আবারও। শোনা যায় এবারও কালপ্রিট সেই সর্বনাশা মাদক।
ক্যারিয়ারের সুসময়ে দেখা হয়েছিল বলিউড নবাগতা রিচা শর্মার সাথে। ভাল লাগা থেকে প্রেম। এরপর একবছরের মাথায়ই যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ১৯৮৭ সালে ঘাটছড়া বাঁধেন সঞ্জয়-রিচা। ১৯৮৮ তে রিচার কোল জুড়ে আসে সঞ্জয়ের প্রথম সন্তান ত্রিশালা। তবে ভাগ্য খারাপ ছিল আবারও। ব্রেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন রিচা। ক্যারিয়ার আর পরিবার দুটোতেই তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে হাঁপিয়ে ওঠেন সঞ্জু।
এই খারাপ সময়েই ‘সাজান’ সিনেমার রুপালি পর্দার দারুন জুটি সঞ্জয়-মাধুরী বাস্তব জীবনেও প্রেমের সূচনা ঘটান। এর সবকিছুই ঘটছিল যখন রিচা নিউইয়র্কে একটু একটু করে সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। মাধুরীর সাথে প্রেমের ফলশ্রুতিতেই সৃষ্টি হয় পারিবারিক কলহ। ফলাফল রিচা শর্মার সাথে বিচ্ছেদ। নিজের মেয়েকে কাছে রাখার অধিকারও হারান সঞ্জু।
১৯৯৭ সালে রিচা শর্মার মৃত্যুর বেশ আগেই বিচ্ছেদ ঘটেছিল মাধুরীর সাথেও। কারণ ছিল অস্ত্র মামলায় সঞ্জয়ের জড়িয়ে পড়া। আর তাই তার নতুন প্রেমিকার তালিকায় নাম লেখালেন মডেল রিয়া পিল্লাই। ১৯৯৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালবাসা দিবসে সঞ্জয় রিয়াকে প্রেম নিবেদন জানিয়ে চুপিচুপি মন্দিরের গিয়ে শুভ কাজটি সেরে নেন। এমনকি বাবা সুনীল এই বিয়ের ঘটনা জেনেছিলেন পত্রিকা মারফত। পুত্রের মাথার উপর বরাবরই আশীর্বাদ ছিল সুনীলের। তবে এই বিয়েও বেশিদিন টেকেনি। রিয়ার পরকীয়ার ঘটনার জের ধরে অফিশিয়াল ডিভোর্স ছাড়াই কয়েক বছর দুজন আলাদা থাকেন এবং আনুষ্ঠানিক ভাবে দুজন এর সম্পর্কের ইতি টানেন ২০০৫ সালে।
রিচার সাথে সম্পর্ক টানা পোড়েনের সময়ই সঞ্জয়ের জীবনে এসেছিল মান্যতা। আরও একবার জীবনের ৩য় বিয়ের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন সঞ্জয়। ২০০৮ এ ধুমধাম করেই বিয়ে হয় সঞ্জয়-মান্যতার। মান্যতার সাথে দাম্পত্য জীবন বেশ ভালোই চলছে এখন। এখন সংসারে রয়েছে দুটি ফুটফুটে শিশু। আর প্রথম সন্তান ত্রিশালার সাথেও বেশ ভালো খাতির সঞ্জুর।
এবার আপনিই বলুন, সাঞ্জুকে নিয়ে সিনেমা না হলে কাকে নিয়ে হবে? সবাই তাই মুখিয়ে আছে জীবনের কাছে হার না মানা সঞ্জর মত যোদ্ধাকে আরেকটু কাছ থেকে দেখতে। যে যোদ্ধারা জীবনে মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ এর সাথে সাবলীল ভাবে খেলা করে। যে যোদ্ধারা বারবার ফিরে আসে শত জঞ্জালকে পেছনে ফেলে যারা ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে রয়।