দুনিয়ার তাবত খেলাধুলার আয়োজনেরই নিয়মিত বিষয়, ম্যাসকট। তার চেহারা কেমন হচ্ছে, তা নিয়ে বাড়তি আগ্রহ কাজ করে সবার মাঝে। আর ফুটবলে তো কথাই নেই। মজার বিষয়, পৃথিবীর জনপ্রিয়তম খেলার আসর বিশ্বকাপ ফুটবলে ম্যাসকটের যাত্রা কিন্তু বিশ্বকাপের শুরু থেকে নয়। ১৯৬৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যাসকট সংযুক্ত হয় বিশ্বকাপ ফুটবলে। সেই সময় থেকে এখনতক ফুটবলের মহারণে ম্যাসকটগুলো দেখে নিন একটানে।
১.ওয়ার্ল্ড কাপ উইলি (১৯৬৬, ইংল্যান্ড)
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাসকট ‘উইলি’ ছিল ছোটখাট ডেঁটো এক সিংহমশায়। সিংহের সাথে ব্রিটিশদের সংযোগের কথা তো নতুন করে বলবার নেই, তাই না! উইলির স্রষ্টা ছিলেন রেজ হোয়ে নামের এক ডিজাইনার, ইনিড ব্লাইটনের বেশ কিছু বইয়ের ইলাস্ট্রেশন করেছিলেন তিনি।
২. হুয়ানিতো (১৯৭০, মেক্সিকো)
‘হুয়ানিতো’ একেবারেই মেহিকোর আমজনতার প্রতীক, হাসিখুশি সাধারণ এক ফুটবল পাগল। তার মাথায় মেক্সিকোর ক্ল্যাসিক সমব্রেরো হ্যাট। হুয়ানিতোর ডিজাইনার ছিলেন রবার্ট ম্যাগনাসন।
৩. টিপ অ্যান্ড ট্যাপ (১৯৭৪, জার্মানি)
সাধারণ মানুষের আইডিয়া মেক্সিকোর মতোই জারি রেখেছিল জার্মানিও। তবে একজনের বদলে ফোকলা দাঁতের দুই হাসিখুশি খোকাকে দিয়ে বিভক্ত জার্মানির মানুষের মধ্যের একতাই প্রকাশ করেছিল এই ম্যাসকট।
৪. গাউচিতো (১৯৭৮, আর্জেন্টিনা)
দেখতে এক হাসিখুশি ফুটবলপ্রেমী বালক হলেও সমালোচনার কমতি হয়নি গাউচিতোর। সামরিক শাসনের আমলে নিজের পোশাকে আর্জেন্টাইন আকাশী নীল রং আর গলায় বাঁধা গাউচো শিশুর রুমাল ছাড়া এই ম্যাসকট আদতে হুয়ানিতোর মতোই কি না!
৫. নারানহিতো (১৯৮২, স্পেন)
কোমরে এক হাত রেখে আরেক হাতে ফুটবল নিয়ে সটান দাঁড়িয়ে এক হাসিখুশি কমলালেবু, নাম তার ‘নারানহিতো’। স্পেনের বিশ্বকাপে এই অভিনব ম্যাসকট নিয়ে এসেছিল নতুনত্ব।
৬. পিকে (১৯৮৬, মেক্সিকো)
একেবারে যাকে বলে ঝাল মরিচ, তেমনটাই ছিল ‘পিকে’। কমিক চেহারার এই জালাপিনো পিপারের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল পেল্লাই এক গোঁফ, আর মেক্সিকোর ট্রেডমার্ক সমব্রেরো হ্যাট তো ছিলই কম্পোলসারি সাবজেক্ট হিসেবে—সাইজেও ঢাউস!
৭. চাও (১৯৯০, ইতালি)
বিজ্ঞাপন জগতে অতি ব্যবহৃত টার্ম-‘আউট অব দ্য বক্স’ এর মতোই ছিল ‘চাও’। ইতালির পতাকাকে ম্যাচস্টিক ম্যানের আদলে রেখে উপরে জুড়ে দেওয়া একটা ফুটবল—এই হলো চাও।
৮. স্ট্রাইকার (১৯৯৪, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)
‘স্ট্রাইকার’ হলো লাল, নীল আর সাদায় রাঙানো কনফিডেন্ট এক খেলুড়ে কুকুর, লক্ষ্যভেদে সেই রকম দক্ষও বটে! সিনেমার সেই বিখ্যাত ওয়ার্নার ব্রাদার্স করেছিলেন স্ট্রাইকারের ডিজাইন।
৯. ফুটিক্স (১৯৯৮, ফ্রান্স)
ফরাসি গ্রাফিক ডিজাইনার ফ্যাব্রিস পিয়ালোর ডিজাইন করা ফুটিক্স এক হাসিখুশি মুরগির ছানা। ফরাসি ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে এই ম্যাসকটের ডিজাইনে ছিল তাদের পতাকার ফ্লেভার।
১০. অ্যাটো, ক্যাজ অ্যান্ড নিক (২০০২, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া)
ম্যাসকটে এবারেও এলো অভিনবত্ব। ভবিষ্যতের গল্প রিপ্রেজেন্ট করা এই ম্যাসকটের তিন চরিত্রের মধ্যে অ্যাটো হলো কোচ, ক্যাজ আর নিক তার খেলোয়াড়; আর কাল্পনিক এই খেলার নাম-‘অ্যাটমোবল’। মজার বিষয়, ক্যারেক্টারের রঙগুলোর সাথে জাপান বা দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকার কোনো মিলই রাখা হয়নি!
১১. গোলিও অ্যান্ড পিলে (২০০৬, জার্মানি)
দশাসই এক সিংহ আর তার হাতে কথা বলিয়ে ফুটবল, জার্মানির এই দফার বিশ্বকাপের ম্যাসকটটি বিচিত্রই ছিল বটে। আর গোলিও নামের সিংহটিকে পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল জার্মানির ফুটবল দলের পোশাক।
১২. জাকুমি (২০১০, দক্ষিণ আফ্রিকা)
হলুদ আর সবুজে রাঙানো ‘জাকুমি’ দারুণ জনপ্রিয় হয়েছিল থিম সংয়ের মতোই। হাসিখুশি এই চিতাবাঘের নামটি একই সাথে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং দেশটির বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষাকে উপস্থাপন করে।
১৩. ফুলেকো (২০১৪, ব্রাজিল)
হলদে রঙা এই আর্মাডিলোর ডিজাইন করার জন্য নামজাদা ৬টি বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান হাড্ডাহাড্ডি কম্পিটিশন করেছিল, আর জয়ী দলের ডিজাইন—ফুলেকো। ফুলেকোর মাধ্যমে পরিবেশ বিপর্যয়ের বিষয়টিও তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে।