ভাবেশ জোশি সুপারহিরো: সুপারউত্থান নাকি সুপারপতন?

ভারতীয় সুপারহিরোদের ইতিহাস কিন্তু খুব খারাপ। দাঁড়ান দাঁড়ান, আমি পর্দার ‘আক্ষরিক’ সুপার-‘হিরো’ রজনীকান্ত, সালমান খান বা প্রভাসদের কথা বলছি না। এঁনারা তো মানবিক মুভিতেও অতিপ্রাকৃতিক অতিমানবীয় ক্ষমতার অধিকারী, বলছিলাম ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করা অতিমানবীয় ‘সুপারহিরো’ ঘরানার চলচ্চিত্রের কথা। সেসবের ইতিহাস খুব খারাপ। যেমন ধরুন- জি-ওয়ান (শাহরুখ খান, মুভি: রা-ওয়ান), ফ্লায়িং জাট (টাইগার শ্রফ) বা দ্রোনা (অভিষেক বচ্চন)। বক্স অফিস বা ক্রিটিক, কাউকেই তেমন খুশি করতে পারেননি এরা। ওহ্, ঋত্বিক রোশানের ‘কৃশ’-এর কথা মিস্ করে গিয়েছি? ওটা তো বক্স অফিস হিট, কিন্তু মৌলিকত্বের বিবেচনায় প্রশ্নবিদ্ধ। তাই হলিউডি সুপারহিরো আয়রনম্যান, সুপারম্যান, ব্যাটম্যান যেমন ঘরে ঘরে পরিচিত নাম হয়েছে, ভারতীয়দের কাছেও নিজেদের সুপারহিরোরা বাচ্চারা বাদে অন্যদের অতোটা মন ভজাতে পারেনি।

এবারও হবে, তেমনটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে ‘ভাবেশ জোশি সুপারহিরো’ হয়তো বড়দের মনে দাগ কাটতে সমর্থ হবে। কারণ এবারকার এই ডার্ক, গ্রিম সুপারহিরোর পেছনে আছেন বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানে। যিনি এর আগে পরিচালক হিসেবে উপহার দিয়েছেন ট্র্যাপ্ড, ‍লুটেরা আর উড়ান-এর মতো মুভি। লুটেরা আর উড়ান-এর পাশাপাশি চিত্রনাট্য লিখেছেন বহুল চর্চ্চিত ‘দেব-ডি’রও। এগুলো বাদে ফ্যান্টম ফিল্মস-এর অনেক প্রশংসিত প্রডাকশনের প্রযোজক হিসেবেও জুড়ে আছে তার নাম। এবার তো ‘ভাবেশ জোশি সুপারহিরো’র জন্য চিত্রনাট্য, প্রযোজনা আর পরিচালনা- তিনটির সাথেই আছেন তিনি। তাই একটু হলেও আশাবাদী হওয়া যায়। মুখ্য চরিত্রে হর্ষবর্ধন কাপুর কেমন করেন তা  নিয়ে খচখচানি আছে। তারপরও ট্রেলার কিন্তু প্রমিজিং।

যা আন্দাজ করা যায় তাতে একে একটু হলেও আলাদা লাগেই। ভাবেশ জোশির এজেন্ডা ভয়ংকর প্রতাপশালী শত্রুর হাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করার না। শুরুতে হর্ষবর্ধন কাপুরের চরিত্রটি আর তার তিন বন্ধুর প্রচেষ্টা থাকে সমাজ থেকে দুর্নীতি আর সামাজিক যতো বদভ্যাস দূর করা। একটা পর্যায়ে উল্টো তারাই রাজনৈতিক নেতাদের গ্যাঁড়াকলে ফেঁসে যায়। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ভাবেশ জোশি ভিজিলান্তের যুদ্ধ শুরু। ট্রেলার রিলিজের পর টুইটারে অনেকেই এর সাথে ডেডপুল-এর সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন। কেউ কেউ বললেন এটি ডেডপুল আর ব্যাটম্যান ক্যারেক্টারের মিশেল। অন্ধকারের মাস্কড-ম্যান হলেই ব্যাটম্যানের রেফারেন্স আসবে। যদিও আমি কোথাও কোথাও ডেয়ারডেভিল-এর টোন পাচ্ছিলাম। দেখা যাক।

ফ্যান্টম ফিল্মস-এর যে প্রডাকশনই বেরোয়, কেমন যেন নিভৃতেই চলে যায়। মার্কেটিংয়ে তাদের অনীহা নাকি বাজেটটাই প্রধান ইস্যু বোঝা যায় না। নইলে যে ফিল্ম মুক্তি পাবে মে মাসের ২৫-এ, তার ট্রেলার কেনো প্রথম দেখতে হবে মে-র ২ তারিখ?

যা হোক, ছবির ব্যবসা নিয়ে পাশের দেশের এই অসাধু দর্শকের খুব বেশি মাথাব্যথা নেই। ভাবেশ জোশি সুপারহিরো হয়ে উড়বে নাকি মুখ থুবড়ে পড়বে সেটাই দেখার বিষয়।