ডেডপুল টু মুভি রিঅ্যাকশন: অ্যাকশনের চেয়ে ভালো

ডেডপুল-টু দেখার পরিকল্পনা আছে? তাহলে অবশ্যই মিড-ক্রেডিট সিন শেষ করেই বেরুবেন। আমার মতামতের আদৌ কতটুকু মূল্য আছে জানিনা, তবে আমার মতে এ যাবৎকালের ক্রেজিয়েস্ট আফটার-ক্রেডিট সিনটি ডেডপুল-টু এরই। ইদানিং সুপারহিরো মুভির ক্ষেত্রে পোস্ট ক্রেডিট সিনের জন্য অপেক্ষা করার কথা বলে দেয়া লাগে না। পুরো মুভির উত্তেজনার সাথে তাল মিলিয়ে সেই দৃশ্যগুলোও এক্সাইটমেন্ট উদ্রেককারীই হয়। কিন্তু এরপরও যখন থিয়েটারে এন্ড টাইটেল ওঠা শুরু করলে দর্শকদের সিট ছেড়ে বেরিয়ে যেতে দেখি, মায়াই লাগে। হুম, মায়াই হয়েছে। অন্তত ডেডপুল-টু এরটা দেখার পর মায়া হওয়াই স্বাভাবিক।

আর মুভি কেমন ছিলো? ডেডপুল-টু একটা ঘোরলাগা মুভি। খুব মন ছুঁয়ে যাওয়া গল্প দেখে একটা রোমান্টিক ঘোর তৈরি হয়। টুইস্টেড থ্রিলার দেখে মাথা ভনভন করে আরেকরকম ঘোরের মধ্যে থাকতে হয়। ডেডপুল-টু’ দেখেও আপনি ঘোরে পড়বেন। সেই ঘোর উইট আর হিউমারে আপনার মস্তিষ্কের বিশ্রাম না পাওয়ার দরুণ পাওয়া ঘোর। হাস্যকর সব পপ কালচার রেফারেন্স, অকল্পনীয় সব টুইস্ট, ব্যাটম্যান-ডিসি-থ্যানোস-গ্রিন ল্যান্টার্ন-উলভারিন-হকআই কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় না দেয়া লেগপুলিং, প্রচুর প্রচুর স্ল্যাং আর একের পর এক উদ্ভট কর্মকাণ্ডে আপনার চোয়ালও একটুও বিশ্রাম পাবে না। অবশ্য শুরুর দিককার খানিক ইমোশনাল পরিস্থিতি বাদ দিয়ে। আর এরপর ওই ক্রেডিট টাইটেল মিলিয়ে টিলিয়ে যে নেশাতুর ঘোরে আটকে যাবেন তা ছুটতে লাগবে খানিকটা সময়। যেমন হয়েছে আমার সাথেও। সে সুবাদে মুভি দেখার প্রায় সপ্তাখানেক বাদে রিঅ্যাকশন লিখতে বসেছি। মুভি প্রতিক্রিয়া টাটকা টাটকা লেখাই শ্রেয়। কিন্তু ওই ঘোরে থাকার জন্যেও স্মৃতি এখনো একদম তরতাজা।

ইনফিনিটি ওয়্যার-এর স্পয়লার দেয়া না দেয়া নিয়ে যে ঢাকঢাক গুড়গুড় চলেছিলো, সে অনুপাতে ডেডপুল টু একেবারেই ঢিলে দড়ি। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেদারসে স্পয়লার দেয়া চলছে। যেখানে মুভি শুরু হতে না হতে ওয়েড উইলসন নিজেই শেষে কি হতে যাচ্ছে তার ইঙ্গিত দিয়ে দেয়, দর্শকদের আর কি দোষ। তবে এবারের স্পয়লারগুলো ছড়ানো হচ্ছে অভিনব উপায়ে। ফ্যানরা বিচিত্র উপায়ে মুভির সাথে সম্পর্কিত কিছু ছবির কোলাজ শেয়ার করছেন, তবে সেগুলোর প্রসঙ্গ উল্লেখ ছাড়া। অর্থাৎ মুভিতে কি কি ঘটেছে তা মুভি না দেখা দর্শকের চোখের সামনেই ঘুরছে, কিন্তু নিজ চোখে না দেখলে ঘটনা বোঝা তাদের জন্য বেশ কঠিন। এই যেমন এই ছবিটি দেখে ডেডপুল টু না দেখা দর্শকের জন্য এখানে কী বলা হয়েছে তা সামান্য আন্দাজ করার ক্ষমতা নেই।

এবার আসি মুভির ঘটনায়। আগের মুভির কাহিনীর মিটমাটের পর ক’বছর ডেডপুল ভাড়াটে গুন্ডার দায়িত্বে নিয়োজিত। তেমনই এক দায়িত্বপালন শেষে তার অ্যানিভারসারির দিনে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় ওয়েড উইলসনের জীবনের মোড় ঘুরে যায়। তবে তাতে করে ভাববেন না ওয়েড একেএ ডেডপুল তাতে একদম ভব্য-সভ্য স্বাভাবিক মানুষ হয়ে গিয়েছে। কথা আর কাজে নষ্টামি, দুষ্টামি বজায় থাকে আগের মতোই। মুভিতে আগের পর্বের কলোসাসের সাথে নেগাসনিকও আছে। আছে ওয়েডের গার্লফ্রেন্ড ভেনেসা, ড্রাইভার দোপিন্দার আর বন্ধু উইসেল-ও। ওদিকে নেগাসনিকের সাথে তার বান্ধবী হিসেবে মুভিতে নতুন যুক্ত হয়েছে ‘ইউকিও’। সুপারহিরো মুভির ইতিহাসে রিলেশনশিপ দেখানোর ক্ষেত্রে এটাও একটা চমক। তো মুভির প্লট অনুযায়ী অভদ্র আর নষ্টামির বে-লাইনগামী ওয়েডকে লাইনে আনতে চায় কলোসাস। তার ইচ্ছা ডেডপুল এক্স-মেনদের দলে যোগ দিক। অনেক কষ্টে তাকে বুঝিয়ে তাকে নিয়ে এক মিশনেও যায়। সেখানেই ওয়েড জড়িয়ে যায় প্রায় উচ্ছন্নে যাওয়া নাদুসনুদুস এক টিনেজারের (রাসেল কলিনস/ফায়ারফিস্ট) সাথে। সেই জড়ানো লেজ ধরে কাহিনীতে ঢুকে পড়ে ভয়ংকর অস্ত্রধারী টাইম ট্রাভেলার ‘ক্যাবল’। ক্যাবল-এর হাত থেকে টিনেজারটিকে রক্ষা করতে ডেডপুল বানায় নিজের বাহিনী- ‘এক্স ফোর্স’। কেনো ওই বদ টিনেজারকে বাঁচানোর কাজে ডেডপুল জড়িয়ে গেলো সেটা জানতে মুভি দেখতে হবে। আর শেষমেশ ফায়ারফিস্টকে বাঁচাতে গিয়ে আর কোন কোন ফ্যাসাদে ফাঁসলো ডেডপুল সেটা নিয়েই গল্প।

দাঁড়ান দাঁড়ান, যতোটা সোজাসাপটা বলে গেলাম কাহিনী ওতোটাও সরলরৈখিক না। আবার তাই বলে আপনার মাথার উপর দিয়ে যাবে এমনটাও না। সবই আপনার অ্যান্টেনায় ধরা পড়বে, কাহিনীর অস্বাভাবিকতায় মজাও পাবেন। কিন্তু দুর্দান্ত গতিতে ঘটে যাওয়া উদ্ভুতুড়ে কাণ্ডকারখানায় বারবার হাসতে হাসতে ‘কী হচ্ছে কী এসব’ আওড়াতে আওড়াতে পাশের সিটের দর্শকের গায়ে গড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা অনেক তীব্র। ডেডপুল টু এতোটাই উপভোগ্য। এতোটাই উপভোগ্য যে মুভির শুরুর টাইটেল ক্রেডিটগুলোও আপনাকে যথেষ্ট বিনোদন জোগাবে। আর প্রথম ডেডপুল যদি প্রথমবারের মতো একটা ভাল্গার কমেডিওয়ালা সুপারহিরো মুভি বানানোর সফল এক্সপেরিমেন্ট হয়ে থাকে, তবে এই সিক্যুয়েলটায় নির্মাতা ডেভিড লিচ (যিনি জন উইক-এর পোষা কুকুরের মৃত্যুর জন্য দায়ী) অ্যান্ড তার বাহিনী মন দিয়েছে ক্যারেক্টার আর ইউনিভার্স বিল্ডআপে। এক্স-ফোর্স গঠনের ঘটনাটা তো সামনের আরো সিক্যুয়েল তৈরির দরজা ভালোভাবেই খুলে দিয়েছে। ক্যাবল চরিত্রে রূপদানকারী জশ ব্রলিন এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন মোটমাট এই সিরিজের চারটি মুভিতে অভিনয়ের জন্য প্রাথমিকভাবে ‍চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তিনি। আরো জানিয়ে রাখি, কমিকবইয়ের ঘটনা অনুযায়ী ক্যাবল কিন্তু এক্স-ফোর্সের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এই মুভিতেই না ঘটনা একটু ঘুরে গেছে। এক্স-ফোর্সের সদস্য হিসেবে মুভিতে কিন্তু খুবই পরিচিত একজন অভিনেতার স্মরণকালের সবচে’ স্বল্পসময়ের একটা ক্যামিও-ও আছে। না না, যা ভাবছেন সেই স্ট্যানলি সাহেবের কথা বলছি না। ওই চমকটা পেতে হলেও মুভিটি দেখতে হবে। হয়তো কনটেক্সট বিহীন স্পয়লার কোলাজ দেখে অজান্তেই টের পেয়ে গেছেন তিনি কে। তবে চরিত্রটির উপস্থিতি এরপরও ইউনিক।

আর হ্যাঁ, মারভেল সুপারহিরো মুভি বলেই বাচ্চাদের নিয়ে দেখতে যেতে পারবেন, ডেডপুল-টু এমন মুভিও না। প্রচুর খুনখারাবী, প্রচুর ভাল্গার দৃশ্য, প্রচুর রক্তারক্তি (যেগুলো একেবারেই সেন্সর্ড বা শালীন না) এবং এফ ওয়ার্ডের ছড়াছড়ি রয়েছে। তাই বাচ্চাদের নিয়ে যেতে হলে নিজ দায়িত্বে নেবেন। আর আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছি, এন্ড ক্রেডিট না দেখে একদম সিট ছেড়ে উঠবেন না।

সব মিলে ডেডপুল টু সুপারহিরো মুভি হয়েও ওতে সুপারহিরোসুলভ অ্যাকশনের চেয়ে অন্য বিষয়াদির অনেক বেশি ও বিপরীত মাত্রার রিঅ্যাকশনই বেশি। ওহ্, ডেডপুল তো আবার সুপারহিরো নয়, অ্যান্টি-হিরো হিসেবেই নিজেকে পরিচয় করাতে ভালোবাসে। তাহলে ওই মাত্রাতিরিক্ত বিপরীত রিঅ্যাকশনের কথাটা বোধহয় ঠিকই আছে।