হয়েছে কী, আমাদের এখানেও অনেক লম্বা লম্বা কমার্শিয়াল তৈরি হচ্ছে। আজকাল টিভিসি (টেলিভিশন কমার্শিয়াল) হয় কম, ওভিসি (অনলাইন ভিডিও কমার্শিয়াল) বেশি। এসব কমার্শিয়ালের গল্পগুলো ইমোশনে থাকে ঠাসা, সেন্টিমেন্টে টইটম্বুর। তবে এমন ভরা আর উপচানো আবেগ ছলছল জলের কারণে ওতেই আটকে থাকে দর্শকের মনোযোগ, এমনকী জলাধারের দিকেও নজর যায় না। যাবে কি করে? চোখ তো তখন আবেগে ভেজা। তাহলে ধরুন ওই ওভিসি-টা যে কলসি, জগ, গ্লাস বা মগ, বালতিরও না হয়ে ফার্নিচার, ওয়াল পেইন্ট কিংবা মোবাইল ফোন ব্র্যান্ডের সৌজন্যে প্রাপ্য তা ছোট্ট করে দেখারও বা জানারও সুযোগ হয় না, কারা কেনো বানিয়েছিলো সে প্রশ্ন অবান্তর। এভাবে প্রোডাক্ট, ব্র্যান্ড বা ব্র্যান্ড ম্যাসেজের সাথে বিন্দুমাত্র সম্পর্ক না রেখে অসংখ্য মানুষের (হ্যাঁ মানুষের, কনজ্যুমার বা ভোক্তার নয়) হৃদয় জয় করতে অগণিত ‘ওভিসি’ ক্রমাগত ভিনি-ভিডি-ভিসি করে চলেছে।
আজকেও একটা ‘ওভিসি’ দেখি চলুন। এখানেও একটা গল্প আছে। দৈর্ঘ্যে প্রায় তিন মিনিট। এতে আবেগের কমতি নেই কিন্তু। তবে ব্র্যান্ডের সাথে কানেকশনও আছে। ভালোমতোই। এই বিজ্ঞাপন, থুক্কু ওভিসি-টি ব্রাজিলের আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত শিশুদের ক্যান্সার ট্রিটমেন্ট সেন্টার ‘দি হসপিটাল দ্য ক্যান্সার দ্য ব্যারেটোস’-এর। সম্প্রতি এটি তার নাম পরিবর্তন করে ‘হসপিটাল দ্য আমোর’ বা ‘হসপিটাল অব লাভ’ করেছে। যার উদ্দেশ্য- ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভালোবাসার শক্তিটাই যে সবচে’ কার্যকর তা প্রতিষ্ঠা করা। এই নামবদলের প্রচারণারই (এক অর্থে রি-ব্র্যান্ডিং) ক্যাম্পেইন এটি।
ক্যান্সারের ভয়াবহতা আঁচ করার জন্য ক্যান্সার রোগী হবার প্রয়োজন নেই। ক্যান্সার শুধু রোগীর কোষকেই আক্রান্ত করে না, নির্মমভাবে হানা দেয় রোগীর পরিবারের সদস্যদের জীবনেও। চোখের সামনে আপনজনকে নিঃশেষ হতে দেখার মতো নৃশংস ভয়াবহতা আর কিছু নেই। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থাকায় কিছুটা হলেও জানি রোগীর ও রোগীর পরিবারের জন্য ক্যান্সারের বিরুদ্ধে এ লড়াইটা কতোটা মর্মঘাতী। এ লড়াইয়ে মানসিক, শারীরিক শক্তির সাথেও আরো কিছু দরকার। হসপিটাল দ্য আমোর বলতে চাইছে এই আরো কিছুটা হচ্ছে ‘ভালোবাসা’। আক্রান্ত শিশুটির পরিবারের সদস্য, চিকিৎসক, সহায়তাকারী এমনকী শিশুর বাড়ির পোষা কুকুরটির ভালোবাসার শক্তিতেই ক্যান্সারকে হারিয়ে ফিরে আসতে পারে তারা। কারণ ‘লাভ নেভার লেটস ইউ ডাউন’। হাসপাতালটির নতুন পরিচিতি, নতুন নামের সাথে যে মেসেজটি পুরোপুরি মানানসই।
ব্রাজিলের সাও পাওলোর এজেন্সি ডব্লিউ ম্যাকান-এর কাছে চ্যালেঞ্জ ছিলো এ বিষয়টিকেই হৃদয়স্পর্শী গল্পের মধ্য দিয়ে উপস্থাপন। তাই এই রিব্র্যান্ডিং ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে তারা গল্পটা বলতে চেয়েছে ক্যান্সার আক্রান্ত এক শিশুর পয়েন্ট অব ভিউ থেকে। ডায়াগনোসিসের পর শিশুর মধ্যে যে পরিবর্তনগুলো আসতে শুরু করে, তার মা-বাবার উপর এর প্রভাব, তার যন্ত্রণা, তার প্রতিদিনের লড়াই আর সেটাতে প্রিয়জনের, আশেপাশের মানুষজনের ভালোবাসার বার্তা নিয়ে এগিয়ে আসার গল্পটাই দেখানো হয়েছে ‘দ্য ফল’ নামের অ্যানিমেটেড ফিল্মটিতে। ইন্টারেস্টিংলি, গল্পটি বলা হয়েছে একটি গানের মাধ্যমে। কোনো ডায়ালগ ছাড়া। প্রোডাকশন হাউজ জম্বি স্টুডিও আর মিউজিক প্রোডাকশন হাউজ ‘লাউড’-এর যৌথ প্রয়াসে তৈরি হয়েছে হৃদয়ছোঁয়া এই ভিডিও কমার্শিয়ালটি। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন রেবেকা পিটার্স।
গল্পের শেষে সবার ভালোবাসার শক্তিতে ক্যান্সারকে হারিয়ে আবার হেসে ওঠে শিশুটি। আবার ফিরে যায় শিশুসুলভ চঞ্চল জগতে। এ দৃশ্যগুলো মন ভালো করে দেয়। ক্যান্সার জয় করার সৌভাগ্য সবসময় যে সবার হয় না। কে জানে, হয়তো ভালোবাসার কমতির কারণেই।