কে বলে কমিকসে ডুবে থাকলে ভালো মার্কস পাওয়া যায় না?

আগের ওই দিন সত্যিই বাঘের পেটে। আগে, মানে আশি-নব্বইয়ের দশকে কমিক বই বা যাকে বলতো ‘আউট বই’ সেসবের গল্প-চরিত্রে যারা মত্ত থাকতো তাদের চোখ বুজে বাতিলের খাতায় ফেলে দেয়া হতো। এমনকি স্কুলেও বাকি ছেলেপেলেদের কাছে তারা ছিলো এলিয়েন। রীতিমতো হাসির পাত্র। রেফারেন্স: নেটফ্লিক্স সিরিজ ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’ দ্রষ্টব্য। কিন্তু এখন সময় পাল্টেছে। ওই গিক্, নার্ডদেরই এখন জয়জয়কার। স্কুল-কলেজে যে যতো বেশি পপ-কালচার্ড সে ততো বেশি হিট। দিন দিন ওদের সংখ্যাটাও বাড়ছে। বোঝা যায়। সিনেপ্লেক্সে কমিক বুক বেসড কোন মুভি দেখতে গেলেই টের পাবেন।

যাক সে কথা। একটা দিক দিয়ে এই সময়ে এসেও পপ কালচার রয়েছে আগের মতোই। মেইনস্ট্রিম পড়ালেখার সাথে এর কোনো সম্পর্ক ছিলো না। তবে ভবিষ্যতে থাকবে না সেকথা নিশ্চিত হয়ে বলা যাচ্ছে না। আজকাল কমিক মুভি দেখার সুবাদেও নাকি বাচ্চারা ভালো গ্রেড পাচ্ছে!

ঘটনাটা গত সপ্তাহের। ঘটিয়েছে আমেরিকার টেক্সাসের এক হাইস্কুলের প্রিন্সিপাল অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক জেফরি স্কট ডেভিস আর তার জনৈক শিক্ষার্থী। জেফরি স্কট স্কুলের কারিকুলামের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের ‘রিজ্যুমে’ বা কর্মক্ষেত্রে চাকরির আবেদনের জন্য ‘জীবনবৃত্তান্ত’ লেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে একটা অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছিলেন। সেটার কাভার লেটার আর জীবনবৃত্তান্ত লিখতে হতো পছন্দের ‘মার্ভেল’ ক্যারেক্টারের উপর। বলিহারি শিক্ষকের ক্রিয়েটিভ থিংকিং। তবে শিক্ষককেও টেক্কা দিয়েছে তার এক শিক্ষার্থী। যেখানে স্বাভাবিকভাবে বাকিরা টনি স্টার্ক-এর ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি, ‘হাল্ক’ ব্রুস ব্যানারের রিসার্চ ফাইন্ডিংস কিংবা ডক্টর স্ট্রেঞ্জ কোন মেডিকেল কলেজ থেকে সার্জারি শিক্ষা নিয়েছিলেন তা দিয়ে পৃষ্ঠা ভরিয়েছে, সেখানে ওই স্টুডেন্টটি এমনই চমকপ্রদ ও সাহসী অ্যাসাইন্টমেন্ট সাবমিট করে যা পড়ে জেফরিই বনেছেন স্পিচলেস। এতোটাই চমকে যান যে সেটি ফেসবুকে শেয়ার না করে পারেননি। আর আপলোডের অল্প সময় পরেই তা তুমুল ভাইরাল।

জেফরি স্কট ডেভিসের ভাইরাল হওয়া সেই পোস্ট

দেড় লাখেরও বেশি রিঅ্যাকশন আর অনেক অনেক বেশি শেয়ার। ওহ্, কী এমন রিজ্যুমে লিখলো যে এতো হৈচৈ তা বোঝা যাচ্ছে না? দেখুন তাহলে। তবে তার আগে জেনে নিন, তুখোড় মেধাবী এ শিক্ষার্থী পছন্দের ক্যারেক্টার হিসেবে বেছে নিয়েছিলো গার্ডিয়ানস অব দ্য গ্যালাক্সি’র গ্রুট-কে।

আপনারা হয়তো জানেন কিংবা জানেন না যে কথা বলার ক্ষমতায় কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে গ্রুট শুধু তিনটা শব্দ বলতে পারে- “আই অ্যাম গ্রু-উ-ট!”

গ্রুটের রিজ্যুমেতে তিনটি শব্দেরই জয়জয়াকার।

এইটুক দেখেই যদি আপনার ‘হাহাপগে’ অবস্থা না হয়ে থাকে তবে আপনার জন্য রয়েছে মেধাবী শিক্ষার্থীর লেখা পরের পৃষ্ঠা। যে অংশে রয়েছে প্রার্থীর যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বিশদ (!) বর্ণনা!

এই হল প্রার্থীর যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বিশদ (!) বর্ণনা

বলা বাহুল্য, সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতির এ পরীক্ষায় উল্টো শিক্ষককেই বিপুল ব্যবধানে পরাজিত করেছে শিক্ষার্থীটি। নেটিজেন সাম্রাজ্যেও চলছে এই শিক্ষক-ছাত্র ডুয়োর সেন্স অব হিউমারের বিপুল প্রশংসা। তার পরেই আসে সেই কাঙ্ক্ষিত প্রশ্ন। শিক্ষার্থীটি প্রতিভাবান, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু অ্যাসাইনমেন্টে মার্কস পাবে তো? যে শিক্ষার্থীটির কল্যাণে একজন সাধারণ শিক্ষকও ইন্টারনেটে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গিয়েছেন তিনি কিন্তু তার স্টুডেন্টের গুণের কদর করতে একদম ভুল করেননি। দু’দিন বাদেই ফেসবুক মারফত জানালেন দারুণ ক্রিয়েটিভিটি আর মেধার পরিচয় দেয়ায় অ্যাসাইনমেন্টে তাকে দেয়া হয়েছে ভালো গ্রেড।

দারুণ ক্রিয়েটিভিটি আর মেধার পরিচয় দিয়ে অ্যাসাইনমেন্টে ভালো গ্রেড পেয়েছে সেই বিখ্যাত ছাত্র

তবে এতোকিছুর পরও জেফরি স্কট ছাত্রের নাম প্রকাশ করেননি। নাম প্রকাশ পেলে তাকে নিয়ে হার্ভার্ড, এমআইটি, অক্সফোর্ড, কেম্ব্রিজে এখনই কাড়াকাড়ি পড়ে যাক সেটাতো তিনি না চাইতেই পারেন।

তাহলে বাচ্চারা, এরপর কমিকস পড়া নিয়ে আম্মু-আব্বু বকা দিলে কী করতে হবে বোঝা গেছে তো?