একদা এক শহর ছিল। তাকে আগলে রাখতো প্রমত্তা এক নদী। ভোরের আলো আলতো করে ছুঁয়ে যেত এলোমেলো সব সবুজ গাছেদের কপাল। মিস হয়ে যেত কলেজের বাস, সারা দিন ক্যাসেটে বাজতো ‘ছোট্টবেলার প্রেম, আমার কালো মেম’। লেপের মাঝে গুটি মেরে ঘুমের অভিনয় করতো মাখো মাখো ন্যাপথলিনের গন্ধ মাখা অযাচিত এক কৈশোর, তুলো তুলো ভালোবাসার ওমে।
বাইকে চেপে দূরের ব্রিজ পাড়ি দিয়ে এক যুগলের শূন্যে হারিয়ে যাওয়ার গল্প চালু ছিল সে শহরে। এভাবেই রোজকার আমদানি ছিল সবুজ ঘাসের চাদরে ঢাকা রূপকথাদের। সে শহরে সন্ধ্যারাতে দূর থেকে ভেসে আসা কীর্তনের সুর ছিল, কবিতার খাতা ছিল। মন খারাপের একলা রাতে সুনীল-জীবনানন্দ ছিল। কারও একজনের এলোমেলো সব দুঃখের ভাগিদার হওয়ার শর্ত ছিল। গ্রীষ্মে পোলারের সবুজ ললি আইসক্রিম ছিল, শরতে মায়াবী কাশফুল ছিল।
তারপর, তারও অনেক পর, সে নদী হয়তো ভুলে যাবে বিকেলের সোনা সোনা রোদে অকস্মাৎ হাসিতে ভেঙ্গে পড়া এক অবুঝ বালিকাকে। ফাগুনে যাকে খুঁজে পেতে শহরের সব গোলাপ এনে দিয়েছিল এক কিশোর। জোনাকির মোচ্ছবে মাঝরাতে সে শহরের ঘুম ভাঙাতো তারারা; আকাশ জুড়ে রুপোলি সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে যেখানে চাঁদ করেছে কত অপেক্ষা।
সপ্তাহের একটা দিন ছিল গানের স্কুল, ছিল মায়ের কাছে অবুঝ আবদারে টিউশনের চেয়ে বাড়তি টাকা হাতখরচ নেওয়া। মনের ঘরে বসত ছিলো অপটু হাতে আলপনা আঁকা এক অবুঝ কন্যার। হিমেল হাওয়ার রাতে লুকিয়ে ল্যান্ডফোনে ছিল তার সাথে এলোমেলো বেড়াল ছানাদের গল্প করার। উড়ু উড়ু সেই দিনেরা সব উড়ে উড়ে ঘুরে ফেরে পাকসাট খেয়ে, নস্ট্যালজিয়ার আঙুল ছুঁয়ে সাদাকালো মেঘ বয়ে নেমে আসতো নদীর ঘাটে। আকণ্ঠ অপেক্ষার নামে; পায়ে পায়ে চলা বাতিল হওয়া রেল লাইনে। জানলার ধার ঘেঁষে ভেসে যাওয়া আসমুদ্র মেঘ আর পরিযায়ী শীত পালানো পাখিদের দলেরা চিঠি নিয়ে ফিরে ফিরে আসে ডাকযোগে; তাদের কাছ থেকেই হয়তো চেয়ে নিতে হয়, ভালোবাসার খোঁজ। অনন্তের দিকনিশান দেওয়া এক একটা দিন যেন গাছের মতোই গেঁথে বসে শিকড় বিছিয়ে, মাটির প্রতিটি কণায় কণায়। চোখ মুদলেই ফিরে আসে সেসব না-ফেরত সময়। অন্য রকম সেসব দিনের জন্য, আনমনে গুনগুন করা সুরের জন্য মূল্যেরও অধিক হয়ে ওঠে মানুষের জীবন। বেঁচে থাকাকেই কি ভালোবাসতে ইচ্ছে করে না আবার?
এই ভাবে ফিরে আসে ভালোবাসা। স্মৃতির সেই শহরের আনাচ কানাচ ধরে, বৃষ্টির দিনে বাবার ছাতায় ভর করে, মায়ের রোজ জল দেওয়া গোলাপ গাছের পাতায় পাতায় যেন ফিরে আসে কিশোর বেলার প্রেম।
ভালো থেকো ভালোবাসা।
ভালোবাসার গল্প দেখতে আসুন আপনার পছন্দের সিনেমা হলে, ৬ এপ্রিল। মনপুরার এক দশক পর গিয়াসউদ্দীন সেলিম যে আসছেন তার নতুন সিনেমা স্বপ্নজাল নিয়ে। বেঙ্গল ক্রিয়েশনস্-এর প্রযোজিত ও অলটাইম পরিবেশিত স্বপ্নজাল চলবে সারা দেশে, আপনার পছন্দের প্রেক্ষাগৃহে।