[বিঃদ্রঃ যা পড়বেন নিজ দায়িত্বে তো অবশ্যই পড়বেন, পড়ার পর কোন প্রকারের অনুভূতিতে আঘাত প্রাপ্ত হলে সেটিও নিজ দায়িত্বে পাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। কারণ মামুলি এই স্যাটায়ারটি কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কোনো ধরণের অনুভূতিতে বিন্দুমাত্র আঘাত দে্ওয়ার অভিপ্রায়ে লেখা হয়নি।]
টক–শো সঞ্চালক: সুপ্রিয় দর্শক, আই মিন পাঠক, আরো একটি বার্নিং ইস্যু নিয়ে টক-শো বানিয়ে আমরা আবারও হাজির হয়েছি আপনাদের দরবারে থুক্কু বরাবরে। আপনারা জানেন দেশে এখন কোটা পদ্ধতির সংস্কারের পক্ষে-বিপক্ষে চলছে তুমুল বিতর্ক। এমতাবস্থায় আমাদের চাই বস্তুনিষ্ঠ মতামত। তাই আমাদের শুনতে হবে দুই পক্ষের কথাই। প্রথম পক্ষের অবস্থানটি বোঝার জন্য আজ আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি কোটা-সুবিধাপ্রাপ্ত কয়েক জনকে। তাদের কাছ থেকে শুনবো কী কী কোটা সুবিধা তারা পেয়েছেন। আরো জানবো কোন কোন খাতে কোটা ব্যবস্থার সংস্কার তারা জরুরি বলে মনে করেন। আশা করছি তাদের আলোচনা থেকে একটি কার্যকর দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে। প্রথমেই আমাদের সাথে আছেন একজন বিশিষ্ট চাকুরিজীবী তরুণ। বলুন তো কবে থেকে আপনি কোটা-সুবিধা পেয়ে আসছেন?
চাকুরিজীবী: কোটা সুবিধা? কবে আবার? ছাত্রাবস্থা থেকে।
সঞ্চালক: ছাত্রাবস্থা! আচ্ছা আচ্ছা। বলতে থাকুন।
চাকুরিজীবী: হ্যাঁ। মেসে থাকি সে সময়। তখন কোটা-সুবিধা না পেলে রীতিমতো না খেয়ে থাকতে হতো।
সঞ্চালক: হুম, শোচনীয় অবস্থা। আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে আপনি এখনো কোটা-সুবিধা পাচ্ছেন।
চাকুরিজীবী: ঠিক শুনেছেন। প্রতি সপ্তাহে না হোক, দুই সপ্তাহে একবার নিতেই হয় কোটার সুবিধা। নাহলে বাসায় বউয়ের ঝাড়ি জুটবে। কখনো তো বাড়তি অর্থের বিনিময়ে পেতে হয় কোটা সুবিধা।
সঞ্চালক: ওহো। অবস্থা খুবই গুরুতর। বুঝতেই পারছেন দর্শক, আই মিন পাঠক। আমাদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটটাই আসলে কোটা-সুবিধা নেয়ার ক্ষেত্র তৈরির পেছনে দায়ী। না চাইলেও নিতে বাধ্য হতে হয়। আবার অবস্থা এমন যে নিতেই হবে। প্রয়োজনে বাড়তি টাকা খরচ করে হলেও। আচ্ছা এবার বলুন তো, কোন কোন ক্ষেত্রে এই কোটা-সুবিধা নিয়েছেন?
চাকুরিজীবী: আপাতত এখন পর্যন্ত বাজারে গেলে মাছের ক্ষেত্রেই এ সুবিধা পেয়ে থাকি। আর বাজারে না পেলে বুয়ার কাছ থেকে। আর বুয়ার কাছ থেকে সব্জি-টব্জির জন্য তো মাস্ট।
সঞ্চালক: মাছ? সবজি? মানে?
চাকুরিজীবী: মানে আবার কি? বাজারে গেলে মাছ কিনে সেটা কোটার সুবিধাটা নেই। তাও কি আর সবসময় ফাওয়ের সুবিধা পাই নাকি? ওই যে বললাম দু’টো টাকা বেশি দিয়ে তখন মাছ কোটার সুবিধা পেতে হয়। ওদিকে আবার তারা ছোটো মাছ-টাছ হলে ওই সুবিধা দেন না। কোটাব্যবস্থার এই জায়গায় আশু সংস্কার প্রয়োজন। আর বাড়িতে সবজি কোটাবাছার জন্য বুয়ার কাছে যেতে তো হবেই।
সঞ্চালক: আচ্ছা আচ্ছা… (টকব্যাকে, দাঁতে দাঁত চেপে) এই ভদ্রলোককে কোন হা**জাদা সিলেক্ট করেছে??
কোনো সদুত্তর না পেয়ে সঞ্চালক টক-শো অব্যাহত রাখেন। আফটার অল, হোয়াটেভার হ্যাপেনস, টক-শো মাস্ট গো অন।
সঞ্চালক: প্রিয় দর্শক, আই মিন পাঠক। আমরা এ মুহূর্তে চলে যাচ্ছি পরের অতিথির কাছে। তিনি একজন স্বঘোষিত বুদ্ধিজীবী। জ্বী, আপনি কখন কখন কোটা পেয়েছেন?
বুদ্ধিজীবী: বলুন যে কোন সময়টা পাইনি! ছোটোবেলায় দাদার কোটা, দাদীর কোটা, খেতে গেলে বোনের কোটা, স্কুলে থাকতে কিছু চাইলে বাবার কোটা, কলেজে বান্ধবীদের কোটা, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যারদের কোটা, চাকরি না পা্ওয়ার পর মায়ের কোটা, ট্রিট দিতে না চাইলে বন্ধুর কোটা, বিয়ের পর বউয়ের কোটা। সারাটা জীবন জুড়ে শুধু কোটা, কোটা আর কোটা!
সঞ্চালক: অ্যাঁ! বলেন কি! কোটাময় জীবন। আপনাকেই তো খুঁজছি। বলুন বলুন, এত এত কোটা কীভাবে ম্যানেজ করলেন?
বুদ্ধিজীবী: ও কি আর ভেবেচিন্তে, বলেকয়ে ম্যানেজ করা যায়? হয়েই যায়। এই ধরুন, আগের ভাই যেমন বলছিলেন মাছ কেনার কথা …
সঞ্চালক: না না আগের ভাইয়ের কথা বাদ দিন …
বুদ্ধিজীবী: বাদ দেবো কেনো, ধরুন বাজার থেকে মাছ নিয়ে এলাম। দাম দিয়ে। কিন্তু আনার পর বউ কোটা দেবেই!
সঞ্চালক: কীহ্! এ আবার কোন আপদ হলো!
বুদ্ধিজীবী: হু। বলবে চোকের মাথা কেয়েছো? দাম দিয়ে কেউ এই মাছ কেনে? উহ্… মাছে কি গন্ধ! এমন হাজারটা কোটা দিনের পর দিন পেয়ে আসচি। এই কোটা প্রতিদিন শুনতে আর ভালো লাগে না। হয় এই কোটা-নীতি বন্ধ করুন। অথবা দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা নিন।
সঞ্চালক: আচ্ছা আচ্ছা… (টকব্যাকে, আবারো দাঁতে দাঁত চেপে) এই লোক যে ‘খ’ কে ‘ক’ উচ্চারণ করে এইটা দেখে নাই কোন বেয়াক্কেল?? কীসব লোক ধরে এনেছে আজ??
সঞ্চালক মাথা ঠান্ডা করার জন্য পর পর দুই গ্লাস পানি খেলেন। এরপর শেষ অতিথিকে আমন্ত্রণ জানালেন কথা বলার জন্য।
সঞ্চালক: দর্শক, আই মিন পাঠক। অনিবার্য কারণে আজ টক-শোটি ঠিকঠাক পরিচালনা করতে না পারার জন্য দুঃখিত। তবে আশা হারাবেন না। এখনো একজনের সাথে কথা বলা বাকি। আর তিনি হলেন একজন গৃহবধূ। জ্বী আপা বলুন। একজন গৃহিণী হয়েও আপনি কীভাবে ক্রমাগত কোটা সুবিধা পেয়ে চলেছেন।
গৃহিণী: ভাই, আমার স্বামী একটা, সন্তান দুইটা। কিন্তু কোটার অভাব হয়নি কখনো।
সঞ্চালক: ওকে। কোন কোন কাজে কোটা পেয়েছেন?
গৃহিণী: ঘরের নানা কাজে। চিন্তাও করতে পারবেন না।
সঞ্চালক: ঘরের কাজে? ইন্টারেস্টিং।
গৃহিণী: আর বলছি কি ভাই। রান্নাঘরে তো কোটার ছড়াছড়ি। হলুদের কোটা, মরিচের কোটা, ধনিয়া-জিরা-গোলমরিচের কোটা। আর একটা কোটাও কি সুবিধা ছাড়া পেয়েছি? মশলা কিনলে কোটা ফ্রি, সাবান কিনলে কোটা ফ্রি, ডায়াপার কিনলে কোটা ফ্রি…
সঞ্চালক: আচ্ছা … এবার কৌটা … জ্বী… ধন্যবাদ আপনাকে। দর্শক, আই মিন পাঠক। কোটা-সংস্কার সংক্রান্ত আমাদের আজকের টক-শো’র এখানেই সমাপ্তি টানতে বাধ্য হচ্ছি। এই মুহূর্তে আমাদের কিছু মানুষজনের সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা অনিবার্য হয়ে পড়েছে। যা হোক। আজকের মতো বিদায়।
এর অব্যবহিত পরেই সঞ্চালক সেটে তার নির্ধারিত স্থান ছেড়ে দ্রুত ব্যাকস্টেজের দিকে গমন করেন। সেখান থেকে ক্ষণে ক্ষণে সশব্দ সংস্কার কার্যক্রমের মুহূর্মুহূ আভাস পাওয়া যেতে থাকে।
* ফিচারে ব্যবহৃত ছবিটি কোটা সংস্কার আন্দোলন ফেসবুক গ্রুপ থেকে নেওয়া