ভদ্রলোককে নতুন করে চেনাতে যাওয়া একপ্রকার ধৃষ্টতা। ও পথে হাঁটবো না। এমনিতে স্পিলবার্গের সাথে আমার ব্যক্তিগত যোগাযোগের ঘটনা কিন্তু বেশ পুরোনো। বলতে পারেন আমার জন্মের পর থেকেই। কী সেই যোগাযোগের বৃত্তান্ত? বলছি পরে।
তবু বলতেই হবে, ফ্যান্টাসি কিংবা সাইফাই মুভির জগতে স্টিভেন স্পিলবার্গ একজন আইকন। ছোটোখাটো আইকন না, সুবিশাল আইকন। ই.টি., জুরাসিক পার্ক, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মাইনরিটি রিপোর্ট, ইন্ডিয়ানা জোনস কিংবা হাল জামানার বিগ ফ্রেন্ডলি জায়ান্ট বা বিগ ব্লকবাস্টার রেডি প্লেয়ার ওয়ান, ৭১ বছর বয়সী এই পরিচালকের ফ্যান্টাসি সুপারহিটের তালিকা করতে গেলে শেষ হবে না। শুধু কি ফ্যান্টাসি? জ’স, টোয়াইলাইট জোন, ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান, দ্য টার্মিনাল, শিন্ডলার্স লিস্ট, সেভিং প্রাইভেট রায়ান, অ্যাডভেঞ্চার্স অব টিনটিন, ব্রিজ অব স্পাইস, দ্য পোস্ট, ভিন্ন ভিন্ন ঘরানার দারুণ মুভিও তো ভুরিভুরি। আবার প্রযোজনাও করেছেন পলটারজিস্ট, ব্যাক টু দ্য ফিউচার, ম্যান ইন ব্ল্যাক-এর মতো চলচ্চিত্র। তবে এতকিছুর পরও সুপারহিরো মুভির সাথে তার নাম জুড়ে যায়নি কখনো। অবশেষে স্পিলবার্গ নামের সরসরার্স স্টোনের ছোঁয়া পড়তে যাচ্ছে সুপারহিরো জঁনরাতেও। আসুন, এবার সদলবলে নড়েচড়ে বসি।
তিন বছর আগে স্পিলবার্গ অবশ্য সুপারহিরো মুভিপ্রেমীদের একবার ভালোমতোই নড়িয়েই দিয়েছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে সুপারহিরো জঁনরাকে তুলনা করেছিলেন বিস্মৃত ওয়েস্টার্ন ঘরানার মুভির সাথে। একসময় যার ছিলো প্রচুর চাহিদা, প্রচুর দর্শক। তারপর মৃতপ্রায়। তারপর পুরোপুরি উধাও। সুপারহিরো মুভির রমরমা যুগে বসেই সেটির ভবিষ্যৎও তেমন হতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা ছিলো স্পিলবার্গের। ওটুক পড়ে সবার মধ্যে আলোড়ন তৈরির পর বক্তব্যটিকে বিশদ বুঝিয়ে কিছুটা হলেও শান্ত করতে পেরেছিলেন পরিস্থিতি। বলেছিলেন, ওয়েস্টার্ন মুভির চাহিদা আবারো তৈরির সম্ভাবনা কিন্তু ফুরিয়ে যায়নি। ভালো চিত্রনাট্য আর পরিকল্পনার ছাপ থাকলে ওই জঁনরা আবারো কামব্যাক করতে পারে। জানালেন, তিনি আসলে বলতে চেয়েছিলেন বিষয়টা আসলে সাইকেলের মতো। চাহিদা ফুরিয়ে গেলেই যে ফিরে আসবে না, তা নয়।
তো এর পরের বছরই সুপারহিরো নিয়ে আরেকটি মন্তব্য করে আলোচনায় এলেন তিনি। জানা গেলো তার পছন্দের সুপারহিরো মুভির নাম। জানালেন, রিচার্ড ডোনারের সুপারম্যান টু, নোলানের ডার্ক নাইট কিংবা প্রথম আয়রনম্যান মুভি তাকে মুগ্ধ করেছিলো ঠিকই। তবে তার পছন্দের সুপারহিরো মুভি মার্ভেল-এর গার্ডিয়ানস অব দ্য গ্যালাক্সি। কারণ কী? কারণ সেটা দেখার পর তার মনে হয়েছিলো একদম নতুন কিছু দেখলাম। হিরো আর সুপারহিরোর মধ্যে যে পার্থক্য আছে সেটা মোটাদাগে বুঝতে পারাও নাকি তার একটা কারণ।
এখন সত্তরোর্ধ্ব বয়সে তিনি যে সুপারহিরো ক্যারেক্টার দিয়ে হাতেখড়ি করতে যাচ্ছেন সেই ‘ব্ল্যাকহক’ কিন্তু একেবারেই সুপারপাওয়ারবিহীন। ‘ব্ল্যাকহক’ ডিসি-র বহু পুরোনো একটি কমিকস। ‘ব্ল্যাকহক’ নামের মুখ্য চরিত্রটি ‘ব্ল্যাকহকস’ বা ‘ব্ল্যাকহক স্কোয়াড্রন’ নামের তুখোড় পাইলটদের একটি দলকে নেতৃত্বের দায়িত্বে। সুপারপাওয়ার না থাকলেও পাইলটদের এই দলটিকে বলা হয় তাদের সময়ের সেরা যুদ্ধ-বৈমানিক দল। ওয়ার্নার ব্রাদার্স আর স্পিলবার্গ দুই পক্ষই ডিসি-র ব্ল্যাকহক প্রজেক্টে স্পিলবার্গের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। কয়দিন আগেই প্রযোজনা সংস্থাটির সাথে ‘রেডি প্লেয়ার ওয়ান’-এ কাজ করেছেন স্পিলবার্গ। সেটিতে বেশ কয়েকটি ডিসি ক্যারেক্টারকে ট্রিবিউট দেয়া হয়েছে। আর তার পরপরই এ ঘোষণা। ডিসি ভক্তরা এখন ব্ল্যাকহক-এর মতোই আকাশে উড়ছে।
স্পিলবার্গ ‘ব্ল্যাকহক’ চিত্রনাট্যের ভার ছেড়ে দিয়েছেন তার পুরোনো সৈনিক ডেভিড ওয়েপ-এর উপর। তিনি এর আগে জুরাসিক পার্ক, দ্য লস্ট ওয়ার্ল্ড, ইন্ডিয়ানা জোনসের স্ক্রিনপ্লে লিখেছেন। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে এক্ষেত্রে খুব বেশি ঝুঁকি স্পিলবার্গ নিতে চাইছেন না। যদিও এরপর অন্য বিষয়আশয়, কাস্টিং কিংবা মুক্তির তারিখ সংক্রান্ত কোনো ঘোষণা এখনো আসেনি।
শুরুতে স্পিলবার্গের সাথে আমার ব্যক্তিগত যোগাযোগের কথা বলেছিলাম। ঘটনা তেমন কিছু না। ভদ্রলোক আর আমি একই জন্মতারিখ শেয়ার করি। একজন ফ্যানের জন্য এটুকু বিষয় মিলে যাওয়া অনেক এক্সাইটিং ব্যাপার তো অবশ্যই। তো এই স্পিলবার্গ নামের ভদ্রলোকটি সুপারহিরো মুভি পরিচালনা করছেন। তাও আবার ডিসি মুভি। এই খবরে আমার মতো কমিকস-মুভিপ্রেমী কতোটা এক্সাইটেড তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে?