সৌন্দর্যের জয়গানে পাঁজরে চন্দ্রবান

ঠিক এই মুহূর্তে এ পৃথিবীর সবচেয়ে আলোচিত বিষয়টি হল- শরণার্থী সমস্যা। বিভিন্ন দেশের নানা সম্প্রদায়ের মানুষ নানা ভাবে নিজেদের ভৌগোলিক অবস্থান থেকে বিতাড়িত হয়ে শরণার্থীর মানবেতর জীবন যাপন করছে। শরণার্থীদের জীবনের এই প্রভাব শুধু ব্যক্তি জীবনেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, এই জঘন্য ঘটনার প্রভাব আজ বিশ্বের সাংস্কৃতিক মণ্ডলেও দৃশ্যমান। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর করা অত্যাচারের কথাতো আমরা সবাই জানি। কিন্তু এই রোহিঙ্গাদের বেঁচে থাকার লড়াই, তাদের মনের কথা যে থিয়েটারের ভাষাতেও ব্যাখ্যা করা যায় তাই দেখিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ। পাঁজরে চন্দ্রবান নামের তাদের প্রযোজনায় উপস্থাপিত হয়েছে শরণার্থী মানুষদের জীবনের কথা, তাদের সুখ-দুঃখের কথা। নিজেদের সর্বস্ব হারিয়ে আজ যারা কোনো মতে কেবল বেঁচে আছেন তাদের কথাই বলে পাঁজরে চন্দ্রবান

আর দু-দশটা নাটকের মতো নয় পাঁজরে চন্দ্রবান । নাটকে নির্দিষ্ট কোনো গল্প নেই। নেই কোনো সিকোয়েন্স, কিন্তু প্রত্যেকটি দৃশ্যে রয়েছে মানুষের দুর্দশার কথা এবং তাদের বেঁচে থাকার ইচ্ছার কথা। নাটকে রয়েছে ৫টি দৃশ্য। জীবনের বহুমুখী সমস্যার মাঝেও জীবনের সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে চায় তারা। নাটকে তিক্ত অভিজ্ঞতায় জর্জরিত এক তরুণীর জীবনের কথা বলা হয়েছে । যে বর্তমান সমাজেরই প্রতীক। নাটকের প্রতিটি দৃশ্যেই নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে মানুষকে বাধা দিয়ে আসা সেই তরুণীই নাটকের শেষে বৃদ্ধের অশ্রুতপূর্ব জীবন-দর্শনে মোহিত হয়ে তার সঙ্গী হতে চায়। দুজনেই চলে যায় এক অনন্ত সৌন্দর্যমণ্ডিত মৃত্যু চাক্ষুষ করতে।

নাটকের বিভিন্ন দৃশ্যে উঠে এসেছে বর্তমান পৃথিবীর নানা সমস্যা। দ্বিতীয় দৃশ্যে জ্যোৎস্না রাতে সমুদ্র উপভোগ করতে করতে বৃদ্ধ যখন নিজের পরিবার নিয়ে পথ চলতে থাকে তখন তরুণী তাদের সমুদ্রে ভেসে থাকা লাশের কথা বলে তা যেন দর্শককে সিরিয়ার আয়লান কুর্দির কথা মনে করিয়ে দেয়। এখানেই পাঁজরে চন্দ্রবানের সার্থকতা। নাটকের কোনো সীমান্ত নেই, ধর্মের বিভেদ নেই, নেই কোনো হানাহানি। থিয়েটারের নিজস্ব ভাষা আছে সেটা হলো মানবতা। থিয়েটার মানবতার জয়গান গায়।

নাটকটি রচনা করেছেন থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহমান মৈশান এবং নির্দেশনা দিয়েছেন একই বিভাগের অধ্যাপক ড. ইসরাফিল শাহীন। অভিনয় করেছেন বিভাগের এম. এ. ২য় সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরা। সংগীত পরিচালনা ও পরিকল্পনা করেছেন বিভাগের শিক্ষক কাজী তামান্না হক সিগমা ও সাইদুর রহমান লিপন। মঞ্চ ও আলোক পরিকল্পনা করেছেন বিভাগের শিক্ষক আশিক রহমান লিয়ন।

নাটকটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটমণ্ডলে প্রদর্শিত হয়েছে ৫ই মার্চ এবং শিল্পকলা একাডেমিতে প্রদর্শিত হবে আগামী ৬ থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত। ভারতের ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা আয়োজিত থিয়েটার অলিম্পিকে ১৩ মার্চ পাটনায় এবং ১৪ মার্চ দিল্লিতেও প্রদর্শিত হবে এই নাটকটি।