একেকটা দিবস এলে থাকতে হয় ভয়ে। দিবসগুলো উপলক্ষে ব্র্যান্ডগুলো পিছিয়ে থাকতে চায় না। কিছু না কিছু তাদের দিতেই হবে। সেগুলো নিয়েই ভয়। কতো কী-ই না দেখতে হয়। ভালো কাজ যে হয় না তা নয়। তবে সবকিছুতেই ব্র্যান্ড/প্রোডাক্ট ঢোকাতে গিয়েই বিপত্তি হয়। এই যেমন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে দেখতে হয়েছে ছুরি-কাটা আর প্লেট দিয়ে বানানো শহীদ মিনার। তাতে মাঝখানে গোল প্লেটটা সাদার জায়গায় লাল হলো না কেনো এমন যৌক্তিক(!) প্রশ্নও দেখতে হয় কমেন্ট সেকশনে।
প্রডাক্টের সাথে এই জিনিস দেখাই শুধু ভয়ের, তা না। আবার ‘ভালো কাজ’ বলে সেগুলো শেয়ার হয়েছে বলেই ‘ভয়’, বিষয়টা তেমনও নয়। কোনটা ভালো-খারাপ সেটা দৃষ্টিভঙ্গির উপর ছেড়ে দিন। আসলে ক্লায়েন্ট-ভগবানের চাপে পড়ে বা অনুরোধে এমন জিনিস প্রসব করা এজেন্সিগুলোর নিয়তি। না না, কোনো ক্লায়েন্টকে হেয় করার এখতিয়ার কারো নেই। এখানে তা করাও হয়নি। কেনো হবে বলুন? ক্লায়েন্টের জন্যই না এজেন্সিগুলো দু’টো খেয়েপড়ে টিকে আছে। আর ভালো ক্লায়েন্ট নেই বলতে চান? পৃথিবীতে অ্যাডভারটাইজিংয়ে প্রতিবছর যে কত-শত ভালো কাজ হয়, ক্লায়েন্টের অ্যাপ্রুভাল ছাড়া সেগুলো কি আলোর মুখ দেখতো?
তো গেলো সপ্তায় গেলো নারী দিবস। আর দিনভর সোশাল মিডিয়ায় বেগুনি রং আর ইংরেজি আট অক্ষর দিয়ে নানান ওয়ালপোস্ট আপনাকেও নিশ্চয়ই না চাইতেও হজম করতে হয়েছে। এও আমাদের নিয়তি। এখন কী করলে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটবে তা নিয়ে আলোচনার অভিপ্রায়-আগ্রহ কোনোটাই নেই। বরং চলুন দেখি নারী দিবসে বিশ্বে ক্লায়েন্টরা নয়, এজেন্সিরা কী করলো সেগুলো দেখি। এখন তাদের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করা টেকেন ফর গ্রান্টেড। আফটার অল, তাদের তো আর ব্র্যান্ডের সাথে মিলিয়ে ‘কিছু একটা করে দেন না’ প্রোডিউস করার প্রেশার নেই।
এ বছরের নারী দিবসের স্লোগান ছিলো “প্রেস ফর প্রোগ্রেস”। #PressForProgress-এর সাথে গলা মিলিয়ে বলতে গেলে- নারীর উন্নতি, সর্বোপরি দেশ-সমাজ-বিশ্বের উন্নতি তখনই হবে যখন নারী নিজে থেকে এগিয়ে এসে ধাক্কাটা দেবে। গত বছরটা এমনিই ছিলো হ্যাশট্যাগের। #MeToo আর #TimesUp হ্যাশট্যাগের জোয়ারে সব বাধাকে পেছনে ত্যাগ করে এ বছরটাও শুধু সামনে এগোনোর।
কীভাবে এগোনো যায় তা জানাতে অগিলভি এগিয়ে এলো #WomenOfOgilvy আর #PressForProgress হ্যাশট্যাগ নিয়ে। সেগুলোর সাথে জুড়ে দিয়েছিলো বিশ্বের নানা দেশে অগিলভি-র শাখাগুলোয় শীর্ষস্থানীয় নারী কর্মকর্তাদের ছবি আর তাদের অনুপ্রেরণাদায়ী মন্তব্য।
বিবিডিও নিউ ইয়র্ক লঞ্চ করেছিলো একটি পাবলিক সার্ভিস অ্যানাউন্সমেন্ট ক্যাম্পেইন ‘ইটস টাইম টু রিডিফাইন’ হ্যাশট্যাগ জুড়ে দিয়ে। অনলাইন ডিকশনারিগুলোয় ‘নারী’র সমার্থক যে সব অসম্মানসূচক শব্দ পাওয়া যায় সেগুলো পাল্টে নারীর নতুন নতুন প্রতিশব্দ লেখানোর জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান রয়েছে সেটিতে।
এফসিবি ইনফার্নো অব লন্ডন ‘কুইন রুলস’ হ্যাশট্যাগে বেশ কিছু কার্ড ছাড়ে যেগুলোয় কুইন বলতে আমাদের আশেপাশের পরিচিত নারীচরিত্রগুলোই দেখা যায়।
নিজেদের ৩৩টি গ্লোবাল অফিসে বিতরণের জন্য কিউট কিন্তু বোল্ড মেসেজওয়ালা কার্ড তৈরি করেছে ভিএমএল-ও।
সেন্স নিউ ইয়র্কের কার্ডগুলোও ছিলো বেশ সুন্দর।
ওদিকে পারফরমেন্স মার্কেটিং এজেন্সি মার্কেল এবং প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক লেভো আন্তর্জাতিক নারী দিবসে একটি তথ্যসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশ করে ‘হোয়াই মিলেনিয়াল উমেন বাই’ শিরোনামে। যাতে তাদেরকে পারচেজিং পাওয়ারহাউজ আখ্যা দিয়ে আমেরিকার বাণিজ্যের সার্বিক প্রেক্ষাপটে তাদের প্রায় ৮৫% ভূমিকা আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে জবরদস্ত ধাক্কাটা দিয়েছে ডব্লিউপিপি-র মালিকানাধীন ব্রাজিলের এফ বিজ। ইংরেজি উওমেন-এর ডব্লিউ আর ও-কে অন্যভাবে খেলিয়ে জোরগলায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে প্রডিউসার হার্ভে ওয়েনস্টেইন আর ল্যারি ন্যাসারের মতো প্রমাণিত নারী ও শিশু নিগ্রহকারী ‘পুরুষ’দের ব্যাপারে।
সূত্র: অ্যাডউইক