ফেসবুক না থাকলে কী হতো ভাবতে পারবেন?
থাক থাক বাদ দিন। আপনার মস্তিষ্কের ক্ষমতার এতো কঠিন পরীক্ষা নেয়ার কোনো অধিকার নেই কারো। তারচে’ একটু সহায়তা করা যাক। ফেসবুক না থাকলে জানতে পারতেন না পাশের বাড়ির ভাবি আজ নতুন কোন রেসিপির এক্সপেরিমেন্ট করলেন, আপনার সহকর্মী শেষ ভ্যাকেশনটা কোথায় কাটালেন, ক্লাসমেটের বর্তমান গার্লফ্রেন্ড কে আর তার সাথে সর্বশেষ কোন রেস্টুরেন্টে সে খেতে গেলো। আবার কী করলে অসহায় জনতার পাশে অতি সহজেই দাঁড়াতে পারেন কিংবা জানতে পারবেন কোথায় গেলে পাবেন চিকন পিনের চার্জার বা নোয়াখালী বিভাগের দাবি জানানোর জন্য সঠিক প্ল্যাটফর্ম কোনটা- এসব জনগুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফেসবুক না থাকলে আমরা জানতেই পারতাম না। তবে জোকস অ্যাপার্ট, ফেসবুকের অনেক ভালো বিষয়ও আছে। অন্তত গত কয়েক বছরে অনেকগুলো বড় সোশ্যাল মুভমেন্ট ফেসবুক নামক প্ল্যাটফর্মের কারণেই গতি পেয়েছে। দেশে, সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা গেছে ফেসবুকের কল্যাণেই।
এদিকে আশ্চর্যের বিষয় কি জানেন? ফেসবুকের জন্মের দশ বছরেরও বেশি হয়ে গেছে। প্রযুক্তির আশীর্বাদধন্য কোনো পণ্যের (হুম, ভার্চুয়াল হলেও ফেসবুক একটা প্রোডাক্টই) জন্য দশ বছর কিন্তু অনেকটা সময়। এরপরও এর ব্যবসা রমরমা থাকার ব্যাপারটাই প্রমাণ করে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে নিজেদের প্রয়োজনীয় আপগ্রেডে ফেসবুক যথেষ্টই সচেতন।
জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে ফেসবুক ঠিকই, তবে সেটা একচেটিয়া নয়। মার্কেটে কঠিন চোখরাঙানি দিচ্ছে টুইটার, ইনস্টাগ্রাম আর স্ন্যাপচ্যাট। ক’দিন আগে নেটফ্লিক্স সিরিজ ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’-এর বাচ্চা বাচ্চা কাস্টগুলোর একটা ইন্টারভিউ ছাপা হয়েছিল। সেখানে তাদের সোশ্যাল মিডিয়া বিহেভিয়ার নিয়ে নানান প্রশ্ন করা হয়েছিলো। একটা প্রশ্ন ছিলো তারা কোন মিডিয়ায় স্বচ্ছন্দ? তো তাদের সোশাল মিডিয়ায় উপস্থিতিটা ঘুরেফিরে ইনস্টাগ্রাম আর স্ন্যাপচ্যাটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এরপরের সম্পূরক প্রশ্নটা ছিলো কেনো তারা ফেসবুকে নেই? উত্তরটা শোনার আগে মনটা শক্ত করে নিন পাঠক। কারন সদ্য টিনেজে পা দেয়া অভিনয়শিল্পীদের একজনের উত্তর ছিলো আঁতে ঘাঁ লাগার মতোই। একজন উত্তর দিলেন “ফেসবুক ইজ ফর ওল্ড পিপল”। মানে কিনা ফেসবুক বুড়োদের! আরেকজন বললেন, “আমার মা-বাবা ফেসবুক ব্যবহার করে। আমার ওগুলো ভালো লাগে না।” যে ফেসবুকের হোমফিড একটু পর পর না দেখলে আপনার মন ভরে না, সেই ফেসবুক নাকি এখন বুড়োদের। হালের পোলাপানদের অবস্থা দেখেছেন? রাগটা উঠছে না? তবে রাগটা ছাপিয়ে মনের কোণে কষ্টের দীর্ঘশ্বাসটাও কিন্তু ঠিক টের পাওয়া যাচ্ছে।
তাই এ মুহূর্তে ফেসবুক মোটামুটি ভালো অবস্থায় থাকলেও কিছু একটা না করতে পারলে সামনে মার্কেট শেয়ার হারাতে হতে পারে জুকারবার্গকে। এই যখন ফেসবুকের বর্তমান ভয়, তখন প্রোমোশনই একমাত্র ভরসা। মনোযোগ দিতে হবে নতুন ক্যাম্পেইনে। সে উদ্দেশ্যে গেলো মাসে ভারতভিত্তিক চারটা বিজ্ঞাপন নামায় ফেসবুক। ভারতের বড় বাজারকে টার্গেট করার বুদ্ধিটা খারাপ নয়। বিজ্ঞাপনগুলোর প্রত্যেকটাই চারটা আলাদা ফেসবুক ইউজারের কথা বলছে। আমরা বলার সময় যেভাবে একদল মানুষকে একেকটা ক্যাটেগরি যেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজনেসম্যান ইত্যাদির মধ্যে ফেলে দেই, আলাদাভাবে মানুষগুলো কিন্তু প্রত্যেকেই আলাদা। প্রত্যেকের গল্পগুলোও আলাদা। আর এটাই বিজ্ঞাপনগুলোর মূল কথা।
এই যেমন নেহার গল্পটা দেখুন। নেহা থমাস একজন চিকিৎসক। কিন্তু শুধু ডাক্তারিচর্চার মধ্যেই কি ওর জীবনের প্রেসক্রিপশন আটকে আছে? থাকতেই পারে না। তাইতো নেহা ভালোবাসে সুইমিং, ওর বয়সীদের মতো পার্টিতেও যায়। তাও নেহা আর ৫টা নেহার মতো কি? নোপ্! আর ৫টা নেহা কি ছেলেদের নাচতে দেখতে কিংবা মেয়েদের বক্সিং লড়তে দেখতে ভালোবাসে? বিয়েবাড়িতে শাড়ির সাথে স্নিকার্স পরে নাচতে নেমে যায়? এই তো সেই ডক্টর নেহা, যে নেহাকে আপনি অন্তত কখনো দেখেননি।
আর বাইকার সানির গল্পটাও মন্দ নয়। সানির আছে দু’টো গার্লফ্রেন্ড আর চারটা বাচ্চা। সে অবশ্য তার বাইককে গার্লফ্রেন্ড আর পোষা কুকুরগুলোকে নিজের বাচ্চা বলে ডাকে। বাইকের খুটিনাটি আর স্টান্ট দেখানো তার নেশা, আর দশটা বাইক-ফ্রিকের মতোই। কিন্তু তাকে বাইকারের স্টেরিওটাইপে ফেলে দেবেন? পারবেন না। কারণ বইপড়া আর রেস্টুরেন্ট বিজনেসের শখটাও যে তার আছে। ওগুলা কি জানতে পারতেন ফেসবুক না ঘাঁটলে? এইসব মিলেই সানির গল্প। সে যা যা ভালোবাসে তা নিয়েই।
কিংবা ধরুন বিজনেসম্যান সন্দীপ সিং ওরফে স্যান্ডি বা স্কুলটিচার হিনা ইকবাল। ওদের গল্পটাও কি আর সবার মতো এক কাতারে ফেলে দিতে পারবেন? পারবেন নাম শুনে ওদের সম্পর্কে চোখ বুজে বলে দিতে? পারবেন না দেখেই তো ফেসবুকে থাকতে হবে। ফেসবুক দেখতে হবে। তবেই বোঝা যাবে ওদের একেকজনের গল্প যে আরেকজনের চে’ কতোটা আলাদা।
বিজ্ঞাপনগুলোর ক্যারেক্টার বাছাইয়ের বিষয়টা খেয়াল করেছেন? আপনি আমি ভাবার আগেই ফেসবুক এখন জেনে গেছে কোন টার্গেট গ্রুপটাকে নিয়ে কাজ করতে হবে। তাই টিনেজ গ্রুপ তাদের বিবেচনায় নেই। বরং পাখির চোখ করেছে ম্যাচিওর জনগোষ্ঠীকেই। তার মানে বাচ্চারা যখন ‘বুড়ো’ হবে, তখন যাতে সাথে ‘ফেসবুক’ই থাকে।
এমন স্ট্র্যাটেজি সামনে কতটুক কাজে লাগে সেটা ভবিষ্যৎই বলুক।