ঢাকা শহরের শিক্ষা ও বুদ্ধিভিত্তিক জ্ঞান চর্চার প্রাণকেন্দ্র বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ। আজ থেকে আট বছর আগে ২০১১ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হয় ‘আমাদের ভাষা আমাদের শহীদ’– শীর্ষক পারফরমেন্স আর্ট বা কৃৎকলার একটি উপস্থাপনা। এই পারফরম্যান্স আর্টের অন্যতম উদ্যোক্তা শিল্পী সঞ্জয় চক্রবর্ত্তী বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সম্পর্ক নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর এই কাজের অভিজ্ঞতা ‘আমাদের ভাষা আমাদের শহীদ’ নামক পারফরমেন্স আর্টটির জন্ম দেয়। এই শিল্পের মূল বিষয়টি হলো আমাদের পাঁচ ভাষাশহীদ যারা ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তাদের কথা স্মরণ করে পাঁচজন শিল্পী সাদা পোষাকে সাদা মুখোশ পরিধান করে শিল্প উপস্থাপন করা।
এবারও তাঁর ব্যতিক্রম হয়নি। ২১শে ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টায় সকল শিল্পী এবং শিশুরা বাংলা একাডেমির লেখক মঞ্চ চত্বরে একত্রিত হয়েছিলেন। পারফরমেন্সের শুরুতে শিল্পীরা একাডেমি চত্বরে রাখা পাঁচ ভাষা শহীদের মুর্তিটি প্রদক্ষিণ করেন, এরপর বাংলা একাডেমি চত্বর থেকে শহীদ মিনার পর্যযন্ত পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করেন। যাত্রাপথে মুখোশ পরিহিত শিল্পীরা এবং শিল্পীদের সাথে থাকা শিল্পীবন্ধুরা সাধারণ মানুষকে লাল বর্ণমালার লকেট গলায় পরিয়ে দেন।
যেহেতু ভাষা শহীদরা ভাষার জন্য নিজেদের প্রাণ দিয়ে গেছেন তাদের এই উৎসর্গ যাতে কখনো ম্লান হয়ে না যায়, তাই আজকের প্রজন্মের শিল্পীরা শহীদদের হয়ে ভাষার প্রতীকী প্রচারের মাধ্যমে মানুষের মাঝে বাংলা বর্ণমালাকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
প্রথম কয়েক বছর তরুণ শিল্পীরা শহীদের হয়ে মুখোশ পরিধান করে শহীদের প্রতীকী ভূমিকা নিলেও ২০১৫ থেকে মূলত শিশুশিল্পীরা শহীদের মূখোশ পরিধান করে পারফরমেন্সের মূখ্য ভূমিকা পালন করে। যেহেতু শিশুরা সবসময় আগামীর ধারক তাই এই পারফরমেন্সের আয়োজক শিল্পীরা মনে করেন শিশুদের নতুন ধরনের শিল্পের সাথে এই সম্পৃক্ততা তাদের মাঝে ভাষার প্রতি ভালোবাসার জন্ম দিবে।
শিল্পী সঞ্জয় চক্রবর্ত্তীর ভাবনায় প্রথম এই পারফরমেন্স বেশ কিছু নবীন শিল্পীরা শুরু করেছিলেন যারা পরবর্তীতে ‘লাল’ নামক একটি শিল্পী দলের জন্ম দেয়। এই শিল্পীদের মধ্যে আবু নাসের রবি, সুমনা আক্তার, রূপক রাসেল, সজীব ঘোষ, মিঠুন মন্ডল, জিয়াউর রহমান জয়, বিমান কর্মকার, আফসানা শারমিন ঝুমা, নাদিয়া, সুবর্ণা বড়ুয়া, সেতু এবং বশিরুল্লা মজুমদার আলো ছিলেন উল্লেখযোগ্য। এছাড়া বিভিন্ন বছর বিভিন্ন শিল্পীরা এই পারফরমেন্সে যোগদান করেছেন।
বর্তমানে ‘লাল’ শিল্পীগ্রুপ এই পারফরমেন্স আর্টের আয়োজনে থাকলেও এর সাথে সহযোগী সংগঠুন হিসেবে কাজ করেছে ‘আলো আর্ট স্কুল’।