ফটো এডিটিং অ্যাপঃ স্ন্যাপসিড

হাতের মুঠোফোনটির উপর আমাদের নির্ভরতা বেড়েই চলছে রোজ। একটা সময় এই মোবাইল ফোন ছাড়াই পুরো দুনিয়াটা কি করে চলতো তা ভাবলে কুল-কিনারা মেলে না। অবসর মানেই ফোনে গান শোনা, নয়তো কোন সোশ্যাল সাইটে স্ক্রল করা, গেম খেলা কিংবা বই পড়া। সব কিছুই এখন বড় বেশি মোবাইল ফোন নির্ভর। কিন্তু প্লে-স্টোরের লাখ লাখ অ্যাপের মাঝে কোন অ্যাপটি ব্যবহার করলে সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা জুটবে তা আমাদের অনেকেরই অজানা। এছাড়া ইউজার বান্ধব সহজ ইন্টারফেস সব অ্যাপে অ্যাভেইলেবলও না। তাই মুঠোফোনের বিভিন্ন কাজের জন্য সেরা অ্যাপটি কি হতে পারে সেই বিষয়ে আলোচনা থাকবে আমাদের এই অ্যাপ রিভিউ সিরিজে।

মোবাইল ফোনের প্রযুক্তি দিনদিন উন্নত হচ্ছে, সেই সাথে বাড়ছে ফোনের ছবি তোলবার ক্ষমতাও। মোবাইল ক্যামেরাকে এখন আর প্রফেশনাল ক্যামেরার চেয়ে কোন অংশে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। এমনকি ফটোগ্রাফি কম্পিটিশনগুলোতেও ‘মোবাইল ফটোগ্রাফি’ এখন আলাদা আস্ত একটা ক্যাটাগরির নাম। সেজন্যই প্রয়োজন হয় একটি এডিটিং অ্যাপের। প্লেস্টোরের শত শত ফটো এডিটিং অ্যাপের মাঝে একটি অ্যাপকে আমাদের চোখে সেরা মনে হয়েছে যার নাম ফটো এডিটিং অ্যাপ Snapseed নিয়ে। প্লেস্টোরের Editors’ Choice লিস্টেও জায়গা করে নিয়েছে এই অ্যাপটি।

Photo Editing: Snapseed

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক সফটওয়্যার ডেভলপার প্রতিষ্ঠান নিক সফটওয়্যার তৈরি করেছে এই অ্যাপটি। গুগল প্লে-স্টোর এবং অ্যাপল অ্যাপ-স্টোর, দু’জায়গাতেই পাওয়া যায়। ইন্টারফেসটিও এমনভাবে তৈরি যেন ‘ফটো এডিটিং’ সম্পর্কে যে কিছুই জানে না, তারও বুঝতে খুব বেশি সময় লাগবে না। ইউজার ফ্রেন্ডলিনেস বিবেচনায় নিলে স্ন্যাপসিড ১০০-তে ১০০ পাবারই যোগ্য।

অ্যাপটি খুলেই উপরের বামের ছবিটির মতো একটা উইন্ডো ওপেন হবে। তারপর স্ক্রিনের যেকোন জায়গায় ক্লিক করলেই সরাসরি মূল গ্যালারি থেকে আপনি যেকোন ছবি এডিট করার জন্য বেছে নিতে পারবেন। আর ছবিটি বেছে নেয়ার সাথে সাথেই ডানের ছবিটির মতো উইন্ডো দেখতে পাবেন। সেখানের ‘STYLES’ অপশনটিতে আপনি অনেক ‘ডিফল্ট এডিটিং থিম’-ও পাবেন। নিজের পছন্দমতো বেছে নিতে পারেন যেকোনটি।

এরপর ‘TOOLS’ অপশনে গেলে এডিট করার জন্য প্রয়োজনীয় প্যানেলটি আপনার স্ক্রিনে আসবে। ছবি ক্রপ করা, রোটেট করার মতো সাধারণ এডিট থেকে শুরু করে লেন্স ব্লার বা ডাবল এক্সপোজারের মতো সব টুলসই এখানে দেখতে পাবেন। প্রত্যেকটি টুলের নিচে সেটার নাম লেখা আছে। তাই কোন কিছু খুঁজে না পা‌ওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই।

TOOLS অপশন থেকে ‘Tune Image’ অপশনে গেলে আপনার ফোনস্ক্রিনে এরকম একটি উইন্ডো আসবে। সেখানে থেকে আপনি ছবিটির Basic যেকোন এডিট করতে পারবেন। ছবির উজ্জ্বলতা, স্যাচুরেশন, শ্যাডো, হাইলাইটস সহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণের সুযোগ আছে এখানে সহজেই। এছাড়াও হোয়াইট ব্যালেন্স টুলটির সাহায্যেও ছবিতে আলোর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। ‘Warmth’ টুলটি আপনাকে ছবির Color Temperature কমানো বা বাড়ানোর সুযোগ দিবে।

অ্যাপটিতে আছে লেন্স ব্লারের সুবিধাও। এর ফলে ছবির যেকোন অংশকে ফোকাসে রেখে ইচ্ছেমতো বাকি অংশ ব্লার করে দেওয়া যাবে। এখানে আপনি প্রয়োজন মতো ব্লারের ডেপথ কন্ট্রোলও করতে পারবেন। অর্থাৎ, ফোকাসে থাকা সাবজেক্টের তুলনায় পিছনের ব্যাকগ্রাউন্ড কতটা ব্লার হবে তা আপনি নিজেই ঠিক করে নিতে পারবেন। এই অপশনের সাহায্যে নিমিষেই ‘পোর্ট্রেট’ ধাঁচের ছবি তৈরি করা যায়।

‘HDR Scape’ টুলটি আপনার ছবির আলো ছায়ার ভারসাম্য ফুটিয়ে তুলবে। এখানে আপনি ‘Filter Strength’ ঠিক করে দেয়ার সুযোগ পাবেন। অর্থাৎ, আপনি ছবিটিতে HDR ইফেক্টের Strength নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।

ছবিকে ‘ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট’ করার জন্য অ্যাপটিতে আলাদা বেশ মজার কিছু অপশন রয়েছে। ‘Dark’, ‘Film’, ‘Bright’ সহ বিভিন্ন আলাদা ইফেক্ট তৈরিই করে দেওয়া আছে ‘ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট’ টুলটির মধ্যে। বিভিন্ন টুলস ব্যবহারের পর সেগুলোতে আবার ইচ্ছেমতো কাস্টোমাইজ করার অপশনও পাবেন আপনি।

এছাড়াও যেকোন ফ্রেমও যোগ করতে পারবেন এই অ্যাপটির মাধ্যমে। মোট ২৩টি ফ্রেম আছে এই অ্যাপটিতে। এবং যেকোন ফ্রেম সিলেক্ট করার পর এর বর্ডার থিকনেসও ইচ্ছেমতো কমাতে বা বাড়াতে পারবেন।

‘পার্স্পেক্টিভ’ টুলটির সাহায্যে আপনি যেকোন ছবিকে ইচ্ছেমতো ফ্রেমে আনতে পারবেন। উপরের বামের ছবিটির ব্যাকগ্রাউন্ডটি একটু বাঁকা ছিলো, স্ন্যাপসিডের ‘পার্স্পেক্টিভ’ টুলের মাধ্যমে এডিটের পর ডানের ছবিটিতে তা সোজা হয়েছে। এভাবে ফ্রেমের কোন কিছু বাঁকা বা ছবির সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হলে এই টুলটির মাধ্যমে আপনি তা ঠিক করতে পারবেন।

‘Vignette’ টুলটির মাধ্যমে ছবিতে আপনার সাবজেক্টটিকে আপনি আরো ফোকাসে আনতে পারবেন। ছবির সাবজেক্ট ছাড়া বাকি অংশে আলো কমিয়ে দেয়ার জন্য এই টুলটি ব্যবহার করা হয়।

ছবিতে যোগ করতে পারবেন যেকোন লেখা। বিভিন্ন ধরনের ফন্ট ও প্যাটার্ন রয়েছে ‘Text’ টুলটিতে।

‘Double Exposure’ নামের এই মজার এডিটিং টুলটি অনেকেরই পরিচিত। এর মাধ্যমে দুটি ছবিকে একই ছবিতে ব্লেন্ড করতে পারবেন। ডাবল এক্সপোজার কি তা বুঝতে চাইলে দেখে নিতে পারেন সদ্যই বের হওয়া মিশন ইম্পসিবল ছবির শেষ কিস্তির পোস্টারটি।

এছাড়াও ‘স্পট রিপেয়ার’ অপশনের সাহায্যে আপনি সহজেই ছবির যেকোন অবাঞ্চিত অংশ ঠিক করতে পারবেন। এরকম সবমিলিয়ে ২৯টি আলাদা এডিটিং টুল রয়েছে এই স্ন্যাপসিড অ্যাপটিতে। তাই আর দেরি না করে নিজের ফোন ক্যামেরায় তোলা ছবিগুলোকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে এখনি প্লেস্টোর বা অ্যাপল স্টোর থেকে বিনামূল্যে নামিয়ে নিন এই অ্যাপটি।