সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব সকলে। অকস্মাৎ যে দেখা মিলেছে রঙ মাখানো দেয়ালের। তবে কারণ কি শুধুই রঙ্গিন দেয়াল? নাহ। চমক লুকিয়ে আছে অন্য কোথাও, অন্য কোন খানে। কারণ, স্থান- শাহবাগ।, পাত্র- ডাস্টবিন।
হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন। চিরচেনা সেই শাহবাগের ডাস্টবিন। ফুলের দোকানগুলো পার হয়েই যে এলাকায় নাক চেপে ধরবার প্রস্তুতি নিতে হয় সবাইকে সেই ডাস্টবিনই হয়ে উঠেছে বর্ণিল। যেখানে সৌন্দর্য ফুরিয়ে যেত ঠিক সেখানেই আজ শোভা পাচ্ছে নতুন এই রঙ্গিন দেয়াল। কারা করেছে? শিল্পী তালিকা রইল আপনাদের জন্য-
“টপোগ্রাফি অফ মিরর সিটিস” নামক শিল্পকলা ভিত্তিক আয়োজন চলছে এশিয়ার আরও ছয়টি শহরে। আমাদের প্রাণের শহর ঢাকাও এই আয়োজনের অন্তর্ভুক্ত শহরগুলোর একটি। কিউরেট করছেন স্যান্ডি শিউ ছিহ-লো। ঢাকার শিল্পকলা ভিত্তিক আয়োজনটির নাম “শহরনামা”, যার কিউরেটোরিয়াল দায়িত্বে আছেন শিল্পী মাহবুবুর রহমান।
শিল্পকলা ভিত্তিক এই আয়োজনের মোট তিনটি পর্ব। যার প্রথম অংশের সূচনা হয়েছে গত ২ জানুয়ারি, ‘মুভিং অবজেক্ট’ শিরোনামে। তিন সপ্তাহ ব্যাপী কর্মশালায় ১০ জন শিল্পী অংশগ্রহণ করেছিলেন। কর্মশালায় অংশগ্রহণকৃত শিল্পীদের নির্মিত কাইনেটিক শিল্পকর্মের প্রদর্শনী এরই মাঝে শুরু হয়েছে ‘বৃত্ত স্পেস ফর কনটেম্পোরারি হাবে। ৩০ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যেখানে প্রদর্শিত হবে কাজগুলি। অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের তালিকা-
মুভিং অবজেক্ট শিরোনামের এই প্রদর্শনী এবং কর্মশালার কাজগুলোরও মূল চিন্তার কেন্দ্র এই শহর, এই ঢাকার শহর। যে শহরের অনেক রঙ। সময়ের সাথে সাথে বদলেছে যে শহরের অনেক চেহারা, অনেক দৃশ্য। তাই ‘শহরনামা’ এখানে গল্প বলেছে ‘মুভিং অবজেক্ট’ হয়ে।
‘শহরনামা’র ২য় পর্বে ছিল ২২ জন শিল্পীর পারফরম্যান্স, ৪টি ফিল্ম স্ক্রিনিং এবং এবং গারবেজ কন্টেইনারের উপর গ্রাফিতি শিল্পকর্ম নির্মাণ। গত ৩ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় এই ৩য় পর্ব। তিন দিনব্যাপী এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকায়।
শহর জুড়ে সাড়া জাগিয়েছে গ্রাফিতি শিল্পকর্ম। সুন্দর কিছু হতে পারে এই দুর্গন্ধময় স্থানেও! কে ভেবেছিল! সমাজের সকল স্তরের মানুষের বিতাড়িত আবর্জনা তো একত্রিত হয় এখানেই। যেখানে আর ভেদাভেদ থাকেনা, বরং সেই আবর্জনা সরিয়েই কেউ হয়ে উঠেন উদ্ধারকর্তা। অথচ কি অদ্ভুত এই শহর। এই ‘নায়ক’ আমাদের কাছে উল্লেখযোগ্য কেউ নন কখনোই। সুন্দর এই গ্রাফিতিতে তাই সুন্দরতম ‘নায়ক’ হয়ে ধরা দিয়েছেন এক পরিচ্ছন্নতা কর্মী।
আর ‘নায়ক’ তারাও, যারা এই নোংরা আবর্জনার ডাস্টবিনকে সুন্দর করে তোলার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সেখানে ছিল গন্ধ, ছিল আবর্জনা। তবুও তিন দিন নিরলস কাজ করেছেন তারা, সুন্দর এক শহরের স্বপ্নে।
শাহবাগ ও চারুকলা ক্যাম্পাসের প্রাঙ্গণের জুড়ে ২২জন শিল্পী তাদের পারফরম্যান্স আর্ট প্রদর্শন করেছেন তিন দিন ব্যাপী। দেখে নিন অংশগ্রহণকৃত শিল্পীদের তালিকা, তাদের পারফরম্যান্সের স্থান-
‘শহরনামা’ শিল্প প্রদর্শনীর কিউরেটর মাহবুবুর রহমান ব্যক্তি জীবনে সাক্ষী হয়েছেন এই শহরের চিত্রবদলের। উপলদ্ধি করেছেন সময় ও বাস্তবতাকে। প্রকৃতি কিংবা প্রানী, আর শিল্পী নিজে, এই নিয়েই শিল্পী মাহবুবুর রহমানের পারফরম্যান্স।
এই শহরে আগমন ও প্রতি দিনের নানামুখী বাস্তবতার উপলদ্ধি অনুপ্রাণিত করেছে শিল্পী ফারাহ নাজ মুনকে। তার পারফরম্যান্স ছিল এই শহরের বন্ধনবিহীন সম্পর্কগুলো নিয়ে। যেখানে টিকে থাকবার খাতিরে কেবলই ‘হাত তালি’ দেয়ার মতই অংশগ্রহণ থাকে আমাদের। আনন্দটুকুও যেন আমাদের আর ছুঁয়ে যায়না। তাই পারফরম্যান্সের অংশ হিসেবে একসময় তিনি হাত তালি দিতে থাকেন ক্লান্তিময়তার সাথে।
তিনদিন ব্যাপী এই কার্যক্রমের শেষদিনে এসেছিলেন এই শহরের দক্ষিন অংশের মেয়র সাঈদ খোকন। ‘শহরনামা’ কি মুগ্ধ করেছে তাকে?
‘শহরনামা’ যাত্রা শেষ করেছে এই দফায়। প্রথম দুই পর্ব মুগ্ধ করেছে শহরবাসীকে। সুন্দর সজ্জিত ডাস্টবিন কিংবা শিল্পীদের শহরকেন্দ্রীক পারফরম্যান্স আর্ট শেষ হয়েছে এরই মাঝে। ৩য় পর্বটি অনুষ্ঠিত হবে ২রা মার্চ ২০১৮ থেকে। ডেইলি স্টার বেঙ্গল আর্ট প্রিসিঙ্কট এবং জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক বিদ্যাপীঠে প্রদর্শনী চলবে ১৬ই মার্চ পর্যন্ত। ১ম ও ২য় পর্বের আর্কাইভাল ডকুমেন্টেশন এবং এর সাথে ৫জন শিল্পীর শিল্পকর্ম সহ প্রদর্শনীটি উন্মুক্ত থাকবে প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা অবধি। ৩য় পর্বের প্রদর্শনীর শিল্পীরা হলেন সালাউদ্দিন আহমেদ, তৈয়বা বেগম লিপি, নাজমুন নাহার কেয়া, শিমুল সাহা এবং জুন হন (তাইওয়ান)। নাগরিক জীবনে সময় মিললে দেখে আসতে পারেন ‘মুভিং অবজেক্ট’ শিরোনামে প্রদর্শনীটি। অপেক্ষা এখন শেষ পর্বের।