আলবৎ বোঝে। নইলে কি আর এমন জ্বর ওঠে? আর যেনোতেনো জ্বর তো নয়, সাক্ষাৎ ভাইরাল ফিভার! এর পেছনে দায়ী ১৯ সেকেন্ডের একটা নিরীহ দর্শন ভিডিও ক্লিপ। ক্যাজুয়ালটিস অসংখ্য। ওই দুষ্টু চোখের ইশারায় যতোগুলো হৃদয়ের যতোবার করে বিট মিস্ হলো, ভ্রুযুগলের নাচনে কতোগুলো হাতে পায়ে কাঁপন শুরু হলো আর মুচকি হাসিতে কতোজন ঘায়েল হলো সে লিস্টি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালগুলোর দেয়ালে ঝোলাতে শুরু করলে দেয়াল শেষ হয়ে যাবে, রোগীর সংখ্যা শেষ হবে না।
খবরে প্রকাশ, বহু দিন ধরেই প্রেমের নতুন ব্যাকরণ শিখিয়ে চলেছে মালায়লাম মুভি ইন্ডাস্ট্রি। তা সে প্রেমামের বয়স-সময়-স্থান-কালজয়ী ব্যাকরণ বলুন, অসম ব্যাকরণের আনারকলি, নাছোড়বান্দা ব্যাকরণের ওম শান্তি ওশানা, ইনু নিন্তে ময়দিনের হার না মানা, ব্যাঙ্গালোর ডে’জের ভিন স্বাদ, চার্লির আনকনভেনশন কিংবা নিলাকশাম-পাচাকাদাল-চুভানা-ভূমির দুর্বার ছুটে চলা গতিময়তার কথাই বলুন, সহজ-সরল কিন্তু একটু ভিন্ন স্বাদের মন ভালো করা ব্যাকরণ দেখতে দেখতে আমরা ওই ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আরো উৎসাহী, আরো আশাবাদী হয়ে উঠছি। মিষ্টি চেহারায় ওই হালকা ভ্রুর নাচন সেই আশার হাওয়ায় জোর কাঁপন না হয়ে যায়-ই না। আর সময়টাও কোনটা দেখুন। ফাগুনের কেবল দু’দিন আগে, ভালোবাসার জোর প্লাবনের কালে। এমন সময়ে মন তো এমনিতেই গলতে প্রস্তুত। কঠিন ব্রত নিয়ে এক ঠ্যাংয়ে দন্ডায়মান সন্ন্যাসী হলে ভিন্ন কথা। সাধারণ মনুষ্যজাতি বিগলিত না হয়ে পারেই না। ওই কঠিন ব্যাকরণ ব্যাধিরই সাম্প্রতিক নমুনার চরম মাশুল গুনতে হচ্ছে ভাইরাল ফিভারে আক্রান্ত অগণিত জনসাধারণকে।
বিশেষ সূত্রে আরো জানা যায়, মনুষ্যহৃদয় গলনের এই নির্মম সময়ে ওই ভাইরাল ভিডিওর কারণে গলন প্রক্রিয়ার সংক্রমণ মাইলের পর মাইল কাউকে ছাড়ছে না। বছর পনেরো থেকে কুড়ির জেনারেশন তো বাই ডিফল্ট কাত্, ওদিকে ত্রিশের কোঠায় পা দেয়া মনে প্রাণে কিশোররা ভিডিওটির সুবাদে ওই প্রথম যৌবনের রেফারেন্সগুলো মনে করে ব্যাপক পুলকিত হচ্ছে। সাইকোলজিক্যাল ট্রমা-ও বলতে পারেন একে। এক ধাক্কায় একের পর এক ফ্ল্যাশব্যাক! আহা! এমন মধুর সময় কার না এসেছে। মনে পড়ে যায় লাইব্রেরির হাজারে হাজার বইয়ের মাঝে যখন একটা বই ‘বিশেষ’ হয়ে উঠেছিলো, বইয়ের ভাঁজে থাকা একটা চিরকুটের সুবাদে। কতোশত গোলাপ বইয়ের পাতায় আটকে থেকে বর্ণ-সুবাস-আকৃতি হারিয়েছে, কিন্তু গোলাপ বিনিময়ের সময় যে মিষ্টি হাসিটাও অগোচরে বিনিময় হয়ে গিয়েছিলো সে স্মৃতিটা দেখি এতোদিনেও একটুও বিবর্ণ হয়নি। শীতের সকালে প্রিয় ঘুমটাকে বিসর্জন দিয়ে সবার আগে স্যারের বাসায় গিয়ে বসে থাকার স্মৃতিটা উঁকি দিচ্ছে না বলতে চান? সাইকেল চালিয়ে যে গলিতে ঘন ঘন চক্কর কাটতেন সে গলিটার একটা বিশেষ বারান্দা চোখের কোণে ভাসছে না এটাও বিশ্বাস করতে হবে? পড়া বোঝার ছলে অনেক টিফিন পিরিয়ড কাটিয়ে দেয়ার ঘটনায় ক্লাসরুমগুলোও কিন্তু সাক্ষী। আপনি ভুলে গেলে কী হবে। ক্লাসের ব্রেকে নোট আদানপ্রদান তো শুধু বাহানা, তার ছুঁতোয় আঙুলগুলো একবার ছুঁয়ে গেলে কতোবেলা হাত না ধুয়ে কাটিয়েছেন সেই বিষয়টা কি মনে পড়েনি? বিশেষ একটা মোড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিতেন শুধু একটা চেহারা মোড়টা পেরিয়ে যাবার সময় একবার ঘুরে তাকাবে সেই আশায়। শুধু একজনের একটু নজর কাড়বেন বলে কোনো একটা খেলায় দিনের পর দিন চলেছে নিরন্তর প্র্যাকটিস। সব স্মৃতি ভিড় জমাচ্ছে শুধু একটা, শুধুমাত্র একটা ১৯ সেকেন্ডের ভিডিও হোমফিডে ঘুরছে বলেই তো। এই একটা ভিডিও ছেলে-জোয়ান-বুড়ো সবার ভাইরাল জ্বর বাঁধিয়ে ছাড়লো। কোন ঘামে সে জ্বর ছাড়বে তা বোঝার জন্য ভালোবাসাবাসির এই মৌসুমটা শেষ হতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মতপ্রকাশ করেছেন। সিজনাল জ্বর কি না সেটা তখনই বোঝা যাবে।
গবেষণা ও তদন্তে জানা যায়, মস্তিষ্কে আর স্মৃতিতে আলোড়ন তৈরির মূল হোতার নাম প্রিয়া প্রকাশ ওয়ারিয়র। ভাইরাল হওয়া ভিডিও ক্লিপটি ‘ওরু আদার লাভ’ নামের মুক্তিপ্রতিক্ষীত মালায়লাম চলচ্চিত্রের গানের অংশ। গানের শিরোনাম ‘মাণিক্য মালারায়া পুভি’। যার অর্থ ‘যে নারী দেখতে মুক্তোর ফুলের মতো’। খুবই বিভ্রান্তিকর এই উপমা নিয়ে আপাতত রোগীদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তারা এখন কেবল ১৯ সেকেন্ডের ওই লুপের মধ্যেই আটকে রয়েছেন।
ভাইরাল ফিভারের জন্য দায়ী বছর বিশের প্রিয়া ওয়ারিয়র ইতিমধ্যে বহু জায়গায় ‘গ্লোবাল ক্রাশ’ হিসেবে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। প্রথম যৌবনের স্মৃতি উসকে দেয়ার জন্য তার নামে অনেকে জেনারেল ডায়েরি খুলেছেন বলে জানা যায়। ওই মানে বাসাবাড়িতে বছরের শুরুতে যে জেনারেল টাইপ ডায়েরি দেখা যায় সেগুলোর একটা খুলেছেন। নিজেকে জয় গোস্বামী বা রফিক আজাদ মনে করার এই তো সময়! ওদিকে রাতারাতি ইনস্টাগ্রামে প্রিয়ার ফলোয়ার সংখ্যা মিলিয়ন ছাড়িয়েছে। এ থেকেও অনেক বিশেষজ্ঞ ভাইরাল সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করছেন। বিশিষ্ট স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান জাকির খান তো এটিকে জীবনের জন্য ভয়াবহ হুমকি মনে করে একটি টুইটে সবাইকে সতর্কও করেছেন। কেউ কেউ আবার এই ১৯ সেকেন্ড থেকে ক্যাটরিনা কাইফ, শ্রদ্ধা কাপুরসহ আরো যাদের যাদের এক্সপ্রেশনে ঘাটতি রয়েছে তাদের শিক্ষা নেবার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।
সামনে এই ফিভারের আরো ভয়াবহ প্রকোপ দেখা দিতে পারে। এ অবস্থায় সবাইকে যতোটা সম্ভব ইন্টারনেট থেকে দূরে থাকার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। বিটিআরসি-র পক্ষ থেকে ইন্টারনেট বন্ধ রাখার ঘোষণাটা আমাদের জন্য শাপে বর হতে পারে বিবেচনায় ঘোষণাটি পুনঃর্বহালের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের বরাবর এই লেখা মারফত বিশেষ আর্জি জানানো হলো।