আলফনসো কুঁয়ারন, আলেহান্দ্রো গঞ্জালেজ ইনারিতু এবং গিলের্মো দেল তোরো- এ তিন মেক্সিকান চলচ্চিত্র পরিচালককে চলচ্চিত্রপ্রেমীরা ভালোবেসে “দ্য থ্রি আমিগোস অফ সিনেমা” নামে ডাকে। দর্শকদের পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে চলচ্চিত্র সমালোচকরাও অপেক্ষায় থাকেন কবে আসবে তাদের নতুন চলচ্চিত্র। ২০১৭ সালে এই তিন আমিগোর অন্যতম গিলের্মো দেল তোরো দর্শকদেরকে আরও একবার মোহিত করেছেন নিজের সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ও ফ্যান্টাসির মিশেলে নির্মিত চলচ্চিত্র “দ্য শেইপ অফ ওয়াটার” দিয়ে। মাত্র ১৯ মিলিয়ন বাজেটের দ্য শেপ অফ ওয়াটার দর্শকদের হৃদয় জয়ের পাশাপাশি এরই মাঝে জিতে নিয়েছে অসংখ্য স্মারকও। ৯০তম অস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্য, শ্রেষ্ঠ পরিচালকসহ ১৩ টি নমিনেশন বাগিয়ে অব্যাহত রয়েছে দেল তোরোর অগ্রযাত্রা।
কিংবদন্তী রুশ লেখক আলেক্সান্দার বেলায়েভের কালজয়ী সৃষ্টি “দ্য অ্যাম্ফিবিয়ান ম্যান”-এর গল্পের সাথে দ্য শেইপ অফ ওয়াটারের কাহিনীর প্রচুর মিল খুঁজে পাবেন বইপোকারা। কিন্তু চলচ্চিত্রটির রক্ত-মাংস-অস্থি-মজ্জা বড় বেশি গিলের্মো দেল তোরোর। যার ঠিঁকুজি হদিস মিলবে পরিচালকের নির্মিত আগের সিনেমা প্যানস ল্যাবিরিন্থ ও ক্রোনোসেও। গল্প গোপন এক সরকারি গবেষণাগারের সাধারণ কর্মচারী এক মূক নারীকে ঘিরে। যে কিনা গবেষণাগারেই বন্দী এক মাছ ও মানুষের সমন্বয়ে অদ্ভুত প্রাণীর সাথে তার ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই ভালবাসাকে পূর্ণতা দেয়ার যুদ্ধই যেন চিত্রায়িত হয়েছে এ চলচ্চিত্রে। “প্যানস ল্যাবিরিন্থ” এর মত এ চলচ্চিত্রেও মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের বিভিন্ন রূপকে এক শৈল্পিক জাদুবাস্তব আখ্যানে জীবনদান করেছেন দেল তোরো।
পরিচালক গিলের্মো দেল তোরো এ চলচ্চিত্রটিকে আখ্যা দিয়েছেন নিজের ড্রিম প্রোজেক্ট হিসেবে। সত্তর-আশির দশকের হরর-সাইফাই ঘরানার ভক্ত এ পরিচালকের চলচ্চিত্রে তাই সেই উপাদানগুলোর উপস্থিতি লক্ষনীয়।
প্রধান চরিত্রে স্যালি হকিন্সের অনবদ্য অভিনয় দর্শক মাতিয়েছেচলচ্চিত্রটির প্রধান আকর্ষণ কলাকুশলীদের অনিন্দ্য সুন্দর অভিনয়। বিশেষ করে এলিসা এসপোসিতো চরিত্রে স্যালি হকিন্সের অনবদ্য অভিনয় মাতিয়ে দিয়েছে দর্শকদের। যদিও স্যালিকে নাকি প্রচন্ড মাতাল অবস্থায় সিনেমার গল্প শুনিয়ে ছিলেন দেল তোরো। যদিও অস্কারের সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কারের বাজির দরে স্যালিই আছেন অনেকটাই এগিয়ে।
মুক্তির পরে সমালোচক আর দর্শকদের প্রশংসার সাগরে ভাসলেও শুরুতে প্রযোজক পেতে কিন্তু বেশ বেগ পেতে হয়েছিল দেল তোরোকে। ১৫ বছর আগে প্রথম ক্রিয়েচার অফ দ্যা ব্লু ল্যাগুনের রিমেকে পরিচালকের আসনে বসতে চেয়েছিলেন এ পরিচালক। সে স্বপ্ন পূরণ না হওয়ায় ধীরে ধীরে তৈরি করতে থাকেন “দ্যা শেইপ অফ ওয়াটার” এর গল্প। মনস্টার মুভির প্রযোজক হিসেবে বিখ্যাত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সাল প্রথমেই ফিরিয়ে দেয় তাকে। পরবর্তীতে ফক্স সার্চলাইটের ব্যানারে নির্মিত হয়েছে এ চলচ্চিত্র। মুক্তির পর থেকেই দর্শকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে এখন আলোচনা চলছে কতটি বিভাগে অস্কার জিততে পারে চলচ্চিত্রটি- সেটি নিয়ে।