দশমবারের মতো ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার’ প্রদান করা হয় গতকাল ৩০ জানুয়ারি। ২০১৭ সালের কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কারের পাঁচটি বিভাগে বিজয়ীর সংখ্যা ছয়। কবিতায় যৌথভাবে ‘জুমজুয়াড়ি’ গ্রন্থের জন্য মিজানুর রহমান বেলাল ও ‘নিশিন্দা পাতার ঘ্রাণ’ গ্রন্থের জন্য হোসনে আরা জাহান, কথাসাহিত্যে ‘এই বেশ আতঙ্কে আছি’ গ্রন্থের জন্য তাপস রায়, প্রবন্ধ গবেষণা ও নাটক বিভাগে ‘নৃত্যকী’ গ্রন্থের জন্য আলতাফ শাহনেওয়াজ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাহিত্যে ‘মুক্তিযুদ্ধের অজানা ভাষ্য’ গ্রন্থের জন্য মামুন সিদ্দিকী এবং শিশু-কিশোর সাহিত্যে ‘হরিপদ ও গেলিয়েন’ গ্রন্থের জন্য রাজীব হাসান।
বিজয়ীদের মোট পাঁচ লক্ষ টাকা, প্রত্যেককে একটি করে ক্রেস্ট ও শংসাবচন প্রদান করা হয় কালি ও কলম কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে। জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি, সম্মানীয় অতিথি বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক ও প্রাবন্ধিক মার্টিন কেম্পশেন, বিশেষ অতিথি কথাসাহিত্যিক, শিল্প-সমালোচক ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, কালি ও কলম’র প্রকাশক আবুল খায়ের, এমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান এবং পত্রিকাটির সম্পাদক আবুল হাসনাত। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কালি ও কলম সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি এমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। বক্তব্য রাখেন কালি ও কলম’র প্রকাশক আবুল খায়ের। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কালি ও কলম’র সম্পাদক আবুল হাসনাত। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। বিজয়ীদের উদ্দেশে শংসাবচন পাঠ করেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ, অধ্যাপক মাহবুব সাদিক এবং কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। অনুষ্ঠানে কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কারের ওপর নির্মিত একটি ভিডিওচিত্রও প্রদর্শন করা হয়। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে প্রকাশিত সাহিত্যকর্মগুলোই শুধু এ পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হয়েছে। অনূর্ধ্ব ৪০ বছর বয়সী বাংলাদেশি তরুণ কবি ও লেখকরাই কেবল এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন ‘বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির ঐতিহ্য চার হাজারের বছরের। পুরস্কারপ্রাপ্তদের লেখায়ও নিশ্চয়ই সে ধারা বহমান’। বাঙালির সংস্কৃতির ঘাটতি পূরণের জন্য বাংলা সাহিত্যের চর্চা দৃঢ় ও অব্যাহত রাখার আহবানও জানান তিনি। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘কালি ও কলম এদেশের পাঠকদের জন্য সাহিত্য রুচি গড়ে দিয়েছে। অনেক কণ্ঠকে বাঙ্গময় করে দিয়েছে’। সম্মানীয় অতিথি ড. মার্টিন কেম্পশেন শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, ‘আমি খুবই গর্বিত যে এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরেছি’। পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা একটা কাজ শুরু করেছেন, যেটা আমাদের প্রত্যেক সংস্কৃতির জন্য খুবই প্রয়োজন। অনেকে অনেক কিছু হতে চায়, কিন্তু লেখক হতে সবাই চান না। কিন্তু আমার মনে হয় এই লেখক হওয়ার কাজটা সবচেয়ে কঠিন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, পুরস্কারপ্রাপ্তরা একাকী ধৈর্য্য ধারণ করে দিনের পর দিন তাদের সাহিত্যচর্চা অব্যাহত রাখবেন। কালি ও কলম’র প্রকাশক আবুল খায়ের বলেন, ‘আমি অত্যন্ত ভাগ্যবান যে গত ১৫ বছর ধরে কালি ও কলম নিয়মিত প্রকাশ হয়ে আসছে’। এজন্য তিনি ড. আনিসুজ্জামান ও কালি ও কলম সম্পাদক আবুল হাসনাতকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকে স্বপ্ন ছিল কালি ও কলম’।
অনুষ্ঠানের সভাপতি এমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান পুরস্কৃতদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘কালি ও কলম পুরস্কার পাওয়া তরুণদের অনেকেই সাহিত্যক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। সাহিত্যিকের কাজ সৌন্দর্য ও সত্যের মেলবন্ধন ঘটানো’। প্রতিবছরই বইমেলার পরিধি বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে প্রমাণ হচ্ছে বাংলাদেশে মুদ্রণ মাধ্যম এখনও টিকে আছে এবং বহুদিন টিকে থাকবে’। অনুষ্ঠানে বিজয়ীরাও তাঁদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। সবশেষে রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী লাইসা আহমেদ লিসা।
কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কারের প্রতিটি আয়োজন নিয়ে অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত ভিডিওটি দেখুন এখানেঃ