অস্কারের নব্বইতম আসর বসবে এবার। প্রতি বারের মত এবছরও জল্পনা কল্পনা চলছে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মনোনীত সিনেমা ও শিল্পীদের নিয়ে। সেরা সিনেমা, সেরা অভিনয় নিয়ে তো প্রচুর আলোচনা প্রতিবারেই হয়। যদিও সে উত্তেজনার ভীড়ে অনেক সময়েই খুঁজে পাওয়া যায় না অ্যানিমেটেড সিনেমাগুলোকে। তবে অ্যানিমেটেড সিনেমার বাজার কিন্তু আজ আর ছোট নয়। জাপানিজ মাঙ্গা কার্টুনের বিশাল ভক্তমহল যেমনি আছে, তেমনি আছে পিক্সার-ডিজনির ভক্তরাও। এবং ফিচার ফিল্মের দর্শকদের মতো এরাও পুরো বছর অপেক্ষা করেন বিভিন্ন অ্যানিমেশন ফিল্মের জন্য। অস্কার নমিনেশনের সময় তাদের মনোযোগও থাকে আলাদা করে এই ক্যাটাগরিতে। আর একটা সময় অ্যানিমেশন ফিল্ম মানেই ধরে নেয়া হতো কার্টুন। এখন আর সে দিন নেই। পিক্সার, ড্রিমওয়ার্কসের মতো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন মানবিক গল্পকে তুলে ধরেছেন অ্যানিমেশনের মাধ্যমে। ফিচার ফিল্মের বিখ্যাত নায়ক-নায়িকাদের নিয়ে আসা হচ্ছে অ্যানিমেশন সিনেমাগুলোয় ভয়েস-ওভার দেওয়ার জন্য। সবমিলিয়ে অ্যানিমেশন সিনেমাকে এখন আর ‘কার্টুনছবি’ তকমা দিয়ে হালকা করে নেয়ার সময় নেই। গুণে-মানে যেকোন ফিচার ফিল্মকে যেকোন সময় চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বসতে পারে নতুন দিনের অ্যানিমেশন সিনেমা।
চলুন না, এক চক্কর দেখে নেওয়া যাক অ্যানিমেটেড ফিচার ফিল্মের ক্যাটাগরিতে মনোনীত এবারের পাঁচটি সিনেমা।
The Breadwinner
আফগানিস্তানের প্রেক্ষাপটে নির্মিত খুব মানবিক একটি গল্প। ১১ বছরের পারভানা তার স্কুলশিক্ষক বাবার আদর্শে বড় হচ্ছিলো; এরই মধ্যে ওর বাবাকে অপহরণ করে তালিবানরা। পারভানা ছেলের ছদ্মবেশ নেয়। তার মা, বড় বোন আর ছোট ভাইয়ের পরিবারকে টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব নেয় সে নিজের ছোট কাঁধে। নিজের বাবার কথা সে বারবার স্মরণ করায় নিজেকে আর ছোট ভাইকে- এভাবে তার নতুন পরিচয় বজায় রাখার অনুপ্রেরণা খুঁজে নেয়। নোরা ট্যুমি-র পরিচালনার এই ছবির প্রযোজকদের মধ্যে আছেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি।
Ferdinand
নিনা নামের ছোট্ট এক মেয়ের পোষা ষাঁড় ফারদিনান্দ। বিশালাকৃতি হলেও ফারদিনান্দ বেশ ভদ্র। তবে হঠাৎ একদিন এক দুর্ঘটনা ঘটায় বলে পরিবার আর নিনার থেকে আলাদা করে ফেলা হয় তাকে। নিয়ে যাওয়া হয় ষাঁড় লড়াইয়ের কেন্দ্র কাসা দেল তরো-তে। সেখান থেকে তার প্রত্যাবর্তনের গল্পই এই সিনেমা। স্পেনের একটা শিশুতোষ বই থেকে নেয়া এই কাহিনীতে ফারদিনান্দের কণ্ঠ দিয়েছেন রেসলার জন সিনা।
Coco
কোকো ১২ বছর বয়সী মেক্সিকান বালক মিগ্যুয়েল রিভেরার গল্প; যে গীটার বাজাতে ভালোবাসে। তার পরিবারে গান বাজনা পুরোপুরি নিষিদ্ধ, তার দাদীর দাদীর যে প্রেমিক তাকে ছেঁড়ে চলে গিয়েছিলেন, তিনি ছিলেন গায়ক। মিগ্যুয়েল যখন এই পারিবারিক নিষেধ অমান্য করেও গীটার বাজানো শুরু করে তখন সে এক লহমায় পৌঁছে যায় মৃতদের দেশে- সেখানে তাকে প্রমাণ করতে হবে তার সংগীতের প্রতিভা, নিজের পূর্বপুরুষদের সাথে বোঝাপড়াও করতে হবে। কোকো ডিজনি স্টুডিও-র সর্বশেষ কাজ পিক্সারের সাথে। পিক্সারের অন্যান্য কাজের মতো এটাও চমৎকার এক দৃষ্টিসুখকর অভিজ্ঞতা- বেশ বর্ণিল করে দেখিয়েছে তারা এই মৃতদের দেশ। এবারের অক্সারে কোকো অ্যানিমেশন ফিল্মের ক্যাটাগরিতে তাই বেশ শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী।
The Boss Baby
৭ বছর বয়সী টিম এর জীবন বেশ সহজ, তার বাবা-মা এর যথেষ্ট আদর ভালোবাসা পায় সে সবসময়। তার জীবন পরিবর্তিত হয় যখন তার বাবা-মার হাত ধরে আসে তার নবজাতক ছোট ভাই- এই সদ্য জন্মানো বাচ্চা নিজেকে পরিচয় করায় ‘দ্য বস’ হিসেবে। সবসময় স্যুট পরনে, ব্রিফকেস হাতে তার ছোট্ট ভাই একজন কর্পোরেট হোমড়াচোমড়া- এই বুঝে টিমের বিস্ময়ের শেষ থাকেনা। খুদে বস বেবি টিমের পরিবারের সব আদর আর যত্নের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে থাকলো। টিম আর বস বেবির সম্পর্ক যদিও শুরুতে খুব মধুর থাকেনা, ধীরে ধীরে তাদের খাতির জমে উঠতে থাকে। ড্রিমওয়ার্কস এর ব্যানারের এই কমেডি অ্যানিমেশন ইতিমধ্যেই তার ১২৫ মিলিয়ন ডলার বাজেটের বিপরীতে বিশ্বজুড়ে আয় করেছে ৪৯৮ মিলিয়ন ডলার। মুহম্মদ জাফর ইকবালের পাঠকদের হয়তো মনে পড়ে যাবে মেকু কাহিনী-র কথা!
Loving Vincent
লাভিং ভিনসেন্ট কিংবদন্তি চিত্রশিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গগ এর জীবন ও মৃত্যু নিয়ে বানানো। এই সিনেমা প্রথম অ্যানিমেশন ফিল্ম যার প্রত্যেকটি ফ্রেম একটা তেলরঙের চিত্রকর্ম। পুরো ছবিটাই বানানো হয়েছে ভ্যান গগ এর তুলির স্টাইলে, ১২৫ জন শিল্পীর একটা দল কাজ করেছেন এই সিনেমার ফ্রেমগুলো তৈরিতে। এই সিনেমা দেখার অনুভূতি দর্শকের জন্য একদম নতুন, ভ্যান গগের গতিশীল রঙের জগতে প্রবেশ করার সুযোগ হবে আরো প্রত্যক্ষভাবে। ব্যক্তিগত জীবনে অসুখী আর পাগলাটে স্বভাবের ভিনসেন্ট ভ্যান গগ সারাজীবনই চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ রেখেছিলেন তার ভাই থিওর সাথে; গগের জীবন সম্পর্কে জানার উৎস আমাদের ঐ চিঠিগুলোই। থিওকে লেখা তার জীবনের শেষ চিঠিটা থেকেই এই ছবির গল্প শুরু। অসাধারণ রঙের ব্যবহার আর অন্যরকম ফিল্মমেকিং এর কারণে এই সিনেমা ইতিমধ্যেই সমালোচকপ্রিয়তা পেয়েছে বেশ।