গেম অফ থ্রোনস, দ্য ওয়াকিং ডেড, প্রিজন ব্রেক, দ্য ভাইকিংস প্রভৃতি জনপ্রিয় টিভি শো-এর কল্যাণে এখনও দর্শক ধরে রাখতে পারলেও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে বিনোদন ব্যবসার মাঠ দখলে ক্রমে পিছিয়ে পড়ছে স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো। বিনোদন জগতে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন, হুলু প্রভৃতি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের আবির্ভাব চ্যানেলগুলোর জন্য রীতিমতো হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষত টিভি সিরিজ থেকে আয়ের খাতগুলোতে।
স্যাটেলাইট চ্যানেল আর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাঠ দখলের লড়াইয়ে টিভি সিরিজগুলো জমে উঠেছে বেশ। চলতি বছর দুই পক্ষই বেশ কিছু নতুন সিরিজি নিয়ে দর্শকদের সামনে হাজির হয়েছে। এবার দেখে নেওয়া যাক, ২০১৭ সালের কোন কোন নতুন টিভি সিরিজগুলো আপনাকে অপেক্ষায় রাখবে পরবর্তী সিজনের জন্যে।
ডার্ক
নেটওয়ার্কঃ নেটফ্লিক্স
ইংরেজি ভাষাভাষী দর্শকদের জন্য চালু করা হলেও নেটফ্লিক্সের রয়েছে বিশ্ব জয়ের পরিকল্পনা। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ডিসেম্বরের ১ তারিখে মুক্তি দেওয়া হয়েছে জার্মান ভাষায় নির্মিত টিভি সিরিজডার্ক। বারান বো ওডোরের পরিচালনায় সুপারন্যাচারাল-সায়েন্স ফিকশন ঘরানার টিভি সিরিজটির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে জার্মানি উইডেন নাম্নী এক ছোট্ট শহরে। ৩৩ বছর পর আবারও শহর থেকে হুট করে উধাও হয়ে যেতে শুরু করেছে বিভিন্ন বয়সের শিশু-কিশোর। এ রহস্য ভেদের টানাপোড়েনের সময় ধীরে ধীরে উঠে আসে বিভিন্ন চরিত্রের প্রবল মানসিক দ্বন্দ্ব, লুকানো অতীত, এবং একই সাথে দ্বৈত জীবনযাপনের বিভিন্ন সামাজিক ও পারিবারিক টানাপোড়েন। বিষয়বস্তু বিচারে সিরিজটির সঙ্গে নেটফ্লিক্সেরই আরেকটি জনপ্রিয় টিভি সিরিজ স্ট্রেঞ্জার থিংস-এর সাথে সাদৃশ্য রয়েছে- এমন অধিযোগ কেউ কেউ করলেও সমালোচকদের মতে ডার্ক অনেক বেশি পরিণত, যা দর্শকদের ভাবতে বাধ্য করাবে।
লিজিয়ন
নেটওয়ার্কঃ এফএক্স
বড় পর্দার পাশাপাশি ছোট পর্দাতেও কমিক্স দুনিয়ার বিস্তৃতি সমানভাবেই ঘটছে। কমিক্স চরিত্রগুলোকে বোকাবাক্সের পর্দায় উপস্থানের টক্করে নেমেছে নেটওয়ার্কগুলোও। চলতি বছর কমিক্স অবলম্বনে বেশ কয়েকটি টিভি সিরিজ মুক্তি পেলেও নির্মাণশৈলী কিংবা চরিত্রের আবেদনের অভাবে অধিকাংশই দর্শকদের মনে দাগ কাটতে পারেনি। তবে সুপার হিরোদের উপজীব্য করে নির্মিত টিভি সিরিজের তালিকায় স্বমহিমায় উজ্জ্বল লিজিয়ন।
সিরিজটিতে এক্সমেন-এর অন্যতম প্রধান চরিত্র অধ্যাপক চার্লস জেভিয়ারের ছেলে ডেভিড হলারের বেড়ে ওঠা, নিজ ক্ষমতার সাথে পরিচয়, এবং নিজের আসল পরিচয় খুঁজে বের করার লড়াই চিত্রায়িত হয়েছে। সাধারণের চোখে ডেভিড মানসিকভাবে অসুস্থ হলেও মিউট্যান্টদের মধ্যে সে সবচেয়ে শক্তিশালী। গৎবাঁধা সুপার হিরো টিভি সিরিজের মত শুধু চরিত্রদের শৌর্য নয়, নির্মাতা নোয়া হওলি তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন মানবিক দিকও। টিভি শোতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় তারকা ড্যান স্টিভেন্স।
ডিয়ার হোয়াইট পিপল
নেটওয়ার্কঃ নেটফ্লিক্স
সমসাময়িক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের উইনচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে কালো শিক্ষার্থীদের প্রতি বর্ণবৈষম্যের বিষয়টিকে রূপক হিসেবে ব্যবহার করে সমগ্র দেশেরই একটি সাধারণ দৃশ্য ফুটিয়ে তোলার অভিপ্রায় দেখা গেছে ডিয়ার হোয়াইট পিপল টিভি সিরিজটিতে। জাস্টিন সিমিয়েন’র পরিচালনায় এ টিভি সিরিজটিতে প্রধান চরিত্র সামান্থা হোয়াইটের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন লোগান ব্রাউনিং। টিভি সিরিজটিতে আরও ফুটে উঠেছে ভালবাসা, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, বন্ধুত্ব, সমকামীদের সমাজে টিকে থাকার লড়াই প্রভৃতি বিষয়। শুধুমাত্র শেষ এপিসোডটি বাদে প্রতিটি এপিসোডেই কোন না কোন চরিত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে চলমান ঘটনাবলীকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
বিগ লিটল লাইস
নেটওয়ার্কঃ এইচবিও
সমুদ্রতীরের ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ছোট্ট শহরের তিন জন মাকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে বিগ লিটল লাইস সিরিজটি। আপাতদৃষ্টিতে একেবারেই যথাযথ জীবনযাপন করা তাদের জীবন পরিবর্তিত হয়ে যায় একটি আকস্মিক খুনের ঘটনার পর। হত্যারহস্য সিরিজটির প্রধান বিষয়বস্তু হলেও পুরো টিভি সিরিজটি জুড়েই রয়েছে প্রধান তিন চরিত্রের স্বাভাবিক জীবনপ্রণালীর বিভিন্ন রূপ দ্বন্দ্ব এবং এ আটপৌরে জীবনকে প্রত্যাখ্যাত করার অভিপ্রায়। শুরুতে মিনি সিরিজ হিসেবে নির্মাণ করলেও দর্শক সমালোচক উভয়ের প্রবল ভালবাসায় হওয়ায় এইচবিও সিরিজটির দ্বিতীয় সিজন নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে এইচবিও। লিয়ান মরিআর্টির উপন্যাস অবলম্ববে নির্মিত তারকাবহুল এ টিভি সিরিজটিতে অভিনয় করেছেন নিকোল কিডম্যান, রীজ উইদারস্পুন, শেইলিন শেইলিন উডলি, জো ক্রাভিটজ, আলেক্সান্ডার স্কার্সগার্দ প্রমুখ।
মাইন্ড হান্টারস
নেটওয়ার্কঃ নেটফ্লিক্স
অপরাধ ও রহস্যধর্মী চলচ্চিত্র নির্মাণে কিংবদন্তীতুল্য পরিচালক ডেভিড ফিঞ্চারের প্রযোজনায় মাইন্ড হান্টারস নেটফ্লিক্সে উন্মুক্ত হওয়ার পর থেকে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সাধারণ এফবিআই-অপরাধীদের ইঁদুর-বিড়াল খেলার মডেল থেকে বের হয়ে আসা টিভি সিরিজটিতে প্রধান চরিত্র রয়েছেন হোলডেন ফোর্ড ও বিল টেঞ্চ নাম্নী দুইজন এফবিআই এজেন্ট। আমেরিকা ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন পুলিশ স্টেশনের পুলিশদের অপরাধের আধুনিক ধরন সম্পর্কে শিক্ষাদান করার পাশাপাশি তারা যুক্ত হয়ে পড়েন এক নতুন ধরনের গবেষণায়। বিভিন্নি জেলে বন্দী সিরিয়াল কিলারদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার মাধ্যমে তাদের চিন্তা ভাবনার ধরনকে ছকে ফেলার গবেষণায় যুক্ত হয় বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক। সিরিজটিতে সিরিয়াল খুনীদের গভীর মনস্তত্ত্ব, বিদ্যমান প্রবল নারী বিদ্বেষ, এবং বিভিন্ন পারিবারিক সংঘাতকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পাশাপাশি এই অদ্ভুত চরিত্রদের নিয়ে গবেষণার সময়ে প্রধান চরিত্রগুলোর বদলে যাওয়াও সাধারণ দর্শকদের আলোড়িত করেছে।
দ্য হ্যান্ডমেইডস টেইল
নেটওয়ার্কঃ হুলু
চলতি বছর বোকা বাক্সের সিরিজপ্রেমিদের মধ্যে অন্যতম আলোচিত সিরিজ হচ্ছে মার্গারেট অ্যাটউডের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত দ্য হ্যান্ডমেইডস টেইল। সাই-ফাই ঘরানার সিরিজটির কাহিনী গড়ে উঠেছে নিকট ভবিষ্যতের ডিস্টোপিয়ান পৃথিবীকে ঘিরে। গৃহযুদ্ধ ও এক অদ্ভুত রোগের কারণে পৃথিবীতে সন্তান জন্মদানের হার অনেকাংশে কমে গিয়েছে, পাশাপাশি গড়ে উঠেছে গড়ে উঠেছে এক স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা। এ শাসন ব্যবস্থায় নারীদের সকল অধিকার হরণ করা হয়েছে। এমন অরাজক সময়ে নারীদের ব্যবহার করা হয় চাকর, গৃহিনী কিংবা ক্ষমতাবান পুরুষদের লালসা মেটাবার উপকরণ হিসেবে। টিভি সিরিজটি দর্শকপ্রিয়তা পাওয়ার পাশাপাশি ঘরে তুলেছে অসংখ্য পুরস্কার।
বছরজুড়ে আলোচনায় থাকা অন্যান্য টিভি সিরিজের মধ্যে রয়েছে সিবিএস’র ইয়ং শেলডন; নেটফ্লিক্স’র গডলেস, থারটিন রিজনস হোয়াই, ওজার্ক; অডিয়েন্স নেটওয়ার্ক’র মিস্টার মার্সিডিজ; আমাজন’র স্নিকি পিট; এবং ফক্স’র দ্যা মিক।
রিভিউ পেতে চোখ রাখুন আইস টুডে-তে; আর বোকা বাক্সে উপভোগ করুন আপনার প্রিয় সব টিভি সিরিজ।