পদ্মাবতী নিয়ে হচ্ছে তুমুল হইচই। ছবিটি মুক্তি পাওয়া নিয়ে নানান জল্পনা-কল্পনা তো ইতিমধ্যে কম হয়নি, মুক্তি না পাওয়ার শঙ্কাটাও এবার বেশ প্রবল হয়ে উঠছে। গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ ও বিহারের রাজ্য সরকার এই সিনেমা মুক্তির আগেই ব্যান ঘোষণা করে দিয়েছে। যেই রাজা-রাণীর অস্তিত্ব নিয়ে ঐতিহাসিকরাও এখনো নিশ্চিত নন, তাকে নিয়েই হয়ে যাচ্ছে হুলুস্থুল কান্ড।
তবে বানসালির ইতিহাসে এ কিন্তু নতুন কিছু নয়। নিজে ইতিহাস থেকে সিনেমা বানাতে পছন্দ করেন, বই থেকে সেলুলারে গল্প এডাপ্ট করতেও পছন্দ করেন। কিন্তু প্রতিবারই কিছু না কিছু বিতর্কের জন্ম তার দেয়া চাইই চাই। সেই ইতিহাসটা এবার একটু জেনে নেয়া যাক।
বানসালির তৃতীয় সিনেমা ‘দেবদাস’ বলিউড ইতিহাসের অন্যতম ব্যবসাসফল সিনেমা নিঃসন্দেহে। দর্শকজনপ্রিয়তার দিক থেকেও শাহরুখ-ঐশ্বরিয়া-মাধুরীর এই সিনেমা সামনের সারিতেই থাকবে। কিন্তু শরৎচন্দ্রের আসল গল্পের কতটুকু সফল এডাপ্টেশন হতে পেরেছিলো এই সিনেমাটি?
কলকাতার বাঙালী পরিবারের যেই রূপ বানসালি দেখিয়েছেন তা তো বাস্তবের ধারেকাছে নেইই, উপরন্তু সেই চাকচিক্যের বাহার শুধুই যে সিনেমাটিকে আরো বলিউডি করে তোলার জন্যই তা বুঝতে সিনেমাবোদ্ধা হবার প্রয়োজন নেই। শরতের মূল গল্পে চন্দ্রমুখী ও পার্বতী কখনো মুখোমুখিই হয় নি। বানসালির দেবদাসে তারা শুধু যে মুখোমুখি কথা বললো, দেখা করলো তাই নয়, ৫ মিনিট ধরে অসম্ভব খরুচে এক সেটে তাদের এক সাথে নাচতেও দেখা গেলো। এই নিয়ে বিতর্ক কিন্তু কম হয়নি সেই সময়।
চতুর্থ সিনেমা ব্ল্যাক মুক্তি পায় ২০০৫ সালে। অমিতাভ বচ্চন ও রাণী মুখার্জির অসাধারণ অভিনয় মুগ্ধ করেছিলো সবাইকে। সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেতা, সেরা সিনেমা, সেরা অভিনেত্রী সহ সেবছর ১১টি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয় এই সিনেমা। অথচ কিছুদিন পরই জানা গেলো, সিনেমার গল্পটি ১৯৬২ সালের “The Miracle Worker” নামের হলিউডি এক সিনেমা থেকে সুনিপুণ ভাবে মেরে দিয়েছেন বানসালি।
পরের সিনেমা ‘সাওয়ারিয়া’। মুক্তি পায় ২০০৭ সালে। এটি মুক্তির আগেও তৈরি হয়েছিলো বিতর্ক। রনবীর কাপুরের একটি দৃশ্যকে ‘Male Nudity’ হিসেবে জব্দ করেছিলো সেন্সর বোর্ড।
২০১৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘গোলিও কি রাসলীলা রাম-লীলা’ সিনেমটিও মুক্তির আগেই জন্ম দিয়েছিলো যথেষ্ট বিতর্কের। সিনেমটির নাম প্রথমে ছিলো ‘রামলীলা’। হিন্দুধর্মের দেবতা রামের নাম টাইটেলে থাকায় অনেক হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এই নামের বিরুদ্ধে আপত্তি জানান। কোর্ট পর্যন্ত গড়ায় এই বিতর্ক। পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে এই সিনেমা মুক্তি দেন বানসালি।
সর্বশেষ ২০১৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘বাজিরাও মাস্তানি’-ও ছিলো না বিতর্কের উর্ধ্বে। কাশিবাই ও মাস্তানিকে ‘পিঙ্গা’ নামের একটি গানে নাচতে দেখা যায় এই সিনেমায়। পেশওয়া বাজিরাও এর বংশধররা এই গানের চিত্রায়ন নিয়ে আপত্তি জানান। ইতিহাস বিকৃতি ও চিত্রায়নে মারাঠা সংস্কৃতির সাথে অসামঞ্জস্যতা নিয়ে অভিযোগ তুলেন তারা। এছাড়াও, বাস্তব জীবনে যে রাণী কাশিবাই আর্থ্রাইটিস ও অ্যাজমা সমস্যায় ভুগেছেন বহুদিন ধরে, তাকে হঠাৎ করে পর্দায় নাচতে দেখে খুশি হতে পারেনি পেশওয়া বংশধররা।
আগেই বলেছিলাম, বানসালির নিজের ইতিহাসে বিতর্ক একদমই নতুন নয়। তাই, ‘পদ্মাবতী’ নিয়ে এখন যা হচ্ছে, তাও কিছুটা অনুমেয়ই ছিলো। তবে, এমনও হতে পারে যে, বলিউড দর্শকরা ইতিহাসের সাথে সিনেমার ফিকশন কখনোই খুব বেশি নিতে পারে না, কিংবা ইতিহাস নিয়ে তারা খুবই স্পর্শকাতর। কেননা, আশুতোষ গোয়ারিকরের ‘যোধা আকবর’ নিয়েও কম বিতর্ক হয় নি। নাকি, এসব বিতর্ক শুধুই পাবলিসিটি স্টান্ট? উত্তরটা বোধহয় বানসালিই সবচেয়ে ভালো দিতে পারবেন।