সুবোধ সমাচার থুক্কু স্যাটায়ার

চলতি সব গরম হাওয়া অথবা রাজনৈতিক উৎকণ্ঠাকে আরও খানিকটা উসকে দিয়ে বিশ্বজুড়ে বেশ হৈ ফেলে দিয়েছেন ব্যাংকসি। তার মাধ্যম? অতি জনপ্রিয় এক পদ্ধতি। যাকে বলা হয় গ্রাফিতি, যার চল সেই কবেই শুরু হয়েছিল, মিশরীয় সভ্যতার আমলে। নমুনা কিছুটা এমন-

মিশরীয় সভ্যতায় গ্রাফিতির নিদর্শন

কালে কালে তার দেখা মিলেছে রোমেও। নিজের পরিচয় লুকিয়ে ব্যাংকসি কাজ শুরু করেন নব্বইয়ের দশকে। এরপর থেকেই আড়ালে থেকেও তিনি সরব! সেই আড়ালে থেকেই তিনি সামনের আলাপ নিজ যুক্তিতে করছিলেন বেশ। তারই সুবাদে ব্রিটিশ কালচারাল আইকন, সেরা ক্ষমতাবানদের তালিকায় নামের পাশাপাশি খ্যাতি-কুখ্যাতি অনেক কিছুই জুটেছে তার ঝুলিতে।

ব্যাংকসির কাজের নমুনা

এমন অস্থিরতার মাঝে বর্তমানে যেখানে মুখ বন্ধ না রাখলেই ‘জীবন যাই যাই দশা’ তখন এই গ্রাফিতিকে অনেকেই ব্যাংকসির মত বেছে নিয়েছেন নিজের মতপ্রকাশের বাহন হিসেবে। নব্বইয়ের দশকেই আমাদের দেশেও এসেছিল গ্রাফিতি। শহরের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য জায়গায় যার দেখা মিলত “কষ্টে আছি- আইজুদ্দিন” শিরোনামে। তাই নিয়ে বেশ রবও পড়ে গিয়েছিল। আইজুদ্দিনের মত, কষ্ট তখন যে বাস করতো অনেকের বুকে।

কিন্তু আইজুদ্দিনের খড়ির আদল একসময় ব্যবহৃত হতে শুরু করে সিনেমার প্রচারণায়। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া সেই সিনেমার নাম বাপজানের বায়োস্কোপ। কখনো মনের ভাব, কখনো প্রসারের আলাপ। গ্রাফিতি মনে জায়গা করে নিয়েছে সবার। বরাবর মতোই শিল্পী রয়ে গেছেন সবার চোখের আড়ালে।

আইজুদ্দিনের পরে ঢাকার শহরে গ্রাফিতি ফিরে এল সুবোধ শিরোনামে। সেই সুবোধ জানতে চায় বিভিন্ন দেয়ালে, ‘হবে কি? আরও প্রশ্ন আছে তার, ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা, সময় তোর সঙ্গে নেই’। একতালে বেশ ক’দিন সবাইকে নাড়া দিয়েছিল সুবোধ। তবে সে কি কেবলই সুবোধ নামের বালক, নাকি বিশেষ কোন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি নাকি সমাজ ও জাতির সু-বোধ! শিল্পী তার জানান দিয়ে যায়নি।

এ শহরে সুবোধের রবরবা এমনই যে, পানির অপর নাম জীবন- এটা বোঝাতে আস্ত ২ ঘণ্টার সিনেমা বানিয়ে ফেলা অনিমেষ আইচও নিজের সিনেমা চালাতে ভর করেছিলেন সুবোধের কাঁধে।

ভয়ংকর সুন্দর সুবোধ

বিবিসি দায় নিয়ে যখন বললো যে, ওমুক শিল্পীই ব্যাংকসি (প্রমাণ হয়নি, এবং ব্যাংকসিকে বারবার গ্রেফতারের খবরও মিডিয়ায় এসেছে) তখনই আমাদের দেশের গণমাধ্যমও উত্তাল। সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত ৫৭ ধারা নিয়ে যেই ঝড় যখন বয়ে যাচ্ছিল তা নিয়ে কিছু সরেস(!) আলাপ করেছিল এক ইংরেজি পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ। আর তক্ষুনি বাকিরাও শুধু নাম দেখেই, ঝাঁপ দিয়াছি যমুনার জলে! মুহূর্তে ছড়িয়ে গেল সন্দেশ- সুবোধ গ্রেফতার । হুজুগে বাঙালির অতি দ্রুত নিজেকে প্রমাণের চেষ্টার শেষে দায় স্বীকার করে অনলাইন শেষমেশ বেশ বড় করেই লিখে দেয়, ‘ইহা সন্দেশ নহে, স্যাটায়ার’।

যা হোক, দেওয়ালে দেওয়ালে সুবোধ যেসব প্রশ্ন করেছিল তার সমাধান কিন্তু কেউ করেনি। বরং ছুটির দুপুরে ঘরে বসে চিলে কান নিয়ে গেছে টাইপ বিনোদন এমন কিছু খারাপ হয়নি তা বলাই যায়।