ছবির গল্প হয় অনেক রকম। ছাপচিত্রের ধাপগুলিতে কোথাও ভালোবাসা গড়ে ওঠে কাঠের সাথে আবার কোথাও বা তরল রাসায়নিকের প্রক্ষেপণ হয়ে ওঠে ছবির প্রাণ। শুধু খসড়া রেখায় গল্প ফুরোয়না। বরং শিল্পীর ধৈর্য্য নিয়ে যেন খেলা করে শিল্প। ঠিক কতখানি আন্তরিকতায় জন্ম নেয় একটি ছাপাই ছবি? সে শুধু শিল্পীর সাথে কাটানো সময়েই উপলদ্ধি করা সম্ভব।
ছাপাই ছবির কয়েক প্রকারের মাঝে একটি এচিং। এসিডের সাথে আত্মিকতায় সেখানে সৃষ্টি হয় গল্পের। বিখ্যাত শিল্পী রেমব্রান্ট অথবা গয়ার মতো অনেকেই নিজেদের দক্ষতার ছাপ রেখেছেন এচিংয়ে। এদেশে এচিংয়ের চল শুরু দেশ ভাগের পর, শিল্পী সফিউদ্দীন আহমেদের হাত ধরে। এরপর শিল্পী কিবরিয়া কিংবা আব্দুর রাজ্জাক অনুসরণ করেছেন তাদের পদাঙ্ক। অনুপ্রাণিত করেছেন রোকেয়া সুলতানার মত শিল্পীদের যিনি আজও সেই মাধ্যমে ধরে রেখেছেন চর্চা।
দেশে বর্তমানে বেশ কয়েকটি ছাপাই ছবির কাজ করার স্টুডিও রয়েছে। পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যবস্থা তো আছেই। সম্প্রতি এচিং নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করেছিল গ্যালারী কসমস, তাদের নিজস্ব স্টুডিওতে। যাতে অংশ নেন ১২ জন শিল্পী। আর নেতৃত্বে ছিলেন চিত্রী রোকেয়া সুলতানা নিজেই। সমযোগে ছিলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিল্পী উত্তম কুমার বসাক। সে কর্মশালা চলেছে দুই ধাপে, গত ৩ নভেম্বর থেকে ৮ নভেম্বর। কর্মশালায় কাজের পাশাপাশি যেন মিলন ঘটেছিল শিল্পীদেরও, একসাথেই হয়েছে কাজ-গল্প-আড্ডা।
এচিং পদ্ধতিতে ধাপ রয়েছে বেশ কয়েকটি। সেই ধাপগুলোতে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। নইলে নষ্ট হবে যত্নে গড়ে তোলা কাজ।
অক্লান্ত পরিশ্রম, শিল্পীর একাগ্রতায় অবশেষে জন্ম নেয় এমন কাজ, যার দর্শনে প্রাণ জুড়োবে যে কারোর।
কর্মশালায় অংশ নেওয়া ১৪ জন শিল্পীর কাজগুলো নিয়ে কসমস গ্যালারী প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে গত ১০ নভেম্বর থেকে। প্রদর্শনীর শেষ সময় ৩০ নভেম্বর।
ছাপাই ছবির সৃষ্টির গল্প, ছবির গল্প কিংবা শিল্পীর গল্প সব কিছুই যেন এক চলমান কাহিনির আবহ তৈরি করে, প্রতিটি দিনের সাথে সাথে। সেই কাজগুলোর সাথে যদি আত্মিকতা প্রকাশ করতে চান তবে দেখে আসুন এই প্রদর্শনীটি।