বইয়ের মাঝে ডুব

চোখ বাড়াবার পন্থাটা কী? প্রথমত : বই পড়া এবং তার জন্য দরকার বই কেনার প্রবৃত্তি।

বলেছিলেন সৈয়দ মুজতবা আলী। সেই চোখ বাড়াবার সুযোগ কোথায়? এই ঢাকা শহরে? আর সারা দেশেই বা ক’টা জায়গা রয়েছে, যেখানে একটু মন ভরে ডুব দেওয়া যাবে বইয়ের সাগরে? বইতো আর শুধু ‘কিনতে যাও, বাড়ি ফের’ নয়। দোকানে রয়েছে বিক্রেতা। আর, ঘরতো স্রেফ পড়বার জায়গা। এর মাঝে আর কারো সাথে কোন যোগাযোগ নেই। কাজ চালানো কিছু বইয়ের দোকান এ শহরে আছে বটে। তবে সেখানে নেই একটুখানি আড্ডার আয়োজন, বইয়ের আড্ডার। শুধু নগদ টাকায় বই কিনে বাড়ি ফিরলে ভাবের আদান-প্রদান হবে কি করে, কার সাথে?  সুতরাং নতুন পাঠকও তৈরি হচ্ছে না, আর বাড়ছে না চোখও। সৈয়দ মুজতবা আলীর ফরম্যাটটা আসলে পড়েছি আমরা সবাই (পাঠ্য বলেই), এবং হয়ত সেকারণেই বাস্তব জীবনের সাথে তার আর কোন যোগ নেই!

বাঙালি মানেই মাছে ভাতে বাঙালি, দুপুরে একটু হলেও ভাত ঘুম। তারপর বিকেল বেলার অবসরে এক কাপ চা। এরপর  হাতে নিন আপনার প্রিয় কোন বই। কি? স্বপ্নের মত লাগছে? আসলেই তো, এমন সুখের জীবন এই কর্মব্যস্ততার মাঝে উপভোগের সময় কই! তবে যেটুকু সময় হাতে রয়েছে তারও সদব্যবহার তো করা চাই!

এমনটাই যদি হয় আপনার অবস্থা তবে নিন সুন্দরতম এক স্থানের সুলুক। হ্যাঁ, ঠিক শুনেছেন!  আসছে বেঙ্গল বই। রাজধানীর লালমাটিয়ায়।

আগামী ১৪ নভেম্বর উদ্বোধন হবে নতুন এই বইয়ের জগতের। জগতই তো! বেশ বড় পরিসরে আসছে বইয়ের এই বিপণি। যেখানে আসলেই রয়েছে বইয়ের মাঝে ডুব দেওয়ার সুযোগ। নানামুখী সাংস্কৃতিক চর্চার কর্মপ্রবাহের মধ্যে দিয়ে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন জনরুচি, জীবন ও মননে মাত্রা সঞ্চার করে চলেছে। তারই ধারাবাহিকতায় রুচিশীল পাঠক তৈরির লক্ষ্যে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির মিলন-আবহে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই বই বিপণি, বেঙ্গল বই। বেঙ্গল বইয়ের পরিসর সাজানো হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার বর্গফুট স্থানজুড়ে। বইয়ের তালিকায় রয়েছে দেশি-বিদেশি আরও বই। সাথে রয়েছে আরও অনেক আয়োজন, চলুন পরিচিত হই সেসবের সাথেও।

চা-শিঙ্গাড়ায় চলুক আড্ডা

বেঙ্গল বইয়ের নিচতলায় থাকছে সব শ্রেণির পাঠকের জন্য পুরোনো বই ও ম্যাগাজিনের বিশাল এক সম্ভার। প্রিয় বন্ধুদের সাথে আলোচনায় চায়ের কাপে ঝড় বইয়ে দিতে চান? আপনার জন্য বেঙ্গল বই রেখেছে চা-শিঙ্গাড়ার আয়োজনও। দুটো তেলে ভাজা মুখে পুরে তর্ক হবে জোরসে। গাঢ় হবে বন্ধুত্ব।

হাতে ম্যাগাজিন, চায়ের টেবিলে ঝড়

বারান্দায় রোদ্দুরের সাথে কফি

এক ফালি বিকেলের রোদ, এক কাপ কফি আর পছন্দের বই! আসছে শীতে এর থেকে ভালো আর কি হতে পারে? আপত্তি নেই গরম কালেও। ছুটির সকালে সাপ্তাহিক বাজারের ঝক্কি পেরিয়ে বারান্দায় খানিকটা সময় কাটিয়ে গেলে মন্দ হয় না মোটেই। আপনার শুভ সকালকে শুভতর করার আমন্ত্রণ জানাচ্ছে বেঙ্গল বই।

বারান্দায় সুখের আলাপ, বইয়ের সাথে

আকাশকুসুম

বেঙ্গল বইয়ের তিনতলার প্রায় পুরোটাই শিশুদের। ছোট্টদের উপযোগী পরিবেশে বই পড়া ছাড়াও গল্প বলা, আবৃত্তি, ছবি দেখা ও আঁকাআঁকির মধ্য দিয়ে শিশুদের স্বপ্ন ও কল্পনার জগৎ হবে আরও সুন্দর, তেমনটাই প্রত্যাশা বেঙ্গল বইয়ের। তবে শুধু বিনোদনের বাহারের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয় সোনামণিদের জন্য আয়োজন। বইয়ের পাশাপাশি রয়েছে লেখাপড়ায় সহায়ক নানা আকর্ষণীয় সামগ্রীও থাকছে সেখানে।

সোনামণিদের স্বর্গ

বেঙ্গল বইয়ে আরও রয়েছে নানা ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। সামাজিক সম্পর্কগুলোকে সচল রাখতে, বিশেষ করে তরুণদের সঙ্গে শিশু ও অগ্রজদের সম্পৃক্ত করতে আগ্রহী তারা। বয়স্কদের জন্য রয়েছে বইয়ে বিশেষ ছাড় এবং বাগানে বসে আড্ডা দেওয়ার সুযোগ। প্রবীণ-নবীন আর শিশু, এক দারুণ সেতু তৈরি করতেই যেন আসছে বেঙ্গল বই।

বেঙ্গল বইয়ে নিয়মিত আয়োজিত হবে পাঠচক্র, লেখক শিবির, কবিতা পাঠের আসর, নতুন লেখা ও লেখকের সঙ্গে পরিচিতি মূলক সভা, প্রকাশনা উৎসব, চিত্র ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজন। প্রতি শুক্রবার ও শনিবার সকালে বাগানে চলবে আড্ডা, সাথে মিলবে নাস্তাও।

বেঙ্গল বই এর উদ্বোধন উপলক্ষে পাঁচ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানসূচিঃ

মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বরঃ

বিকাল ৪.৩০ এ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস প্রফেসর  ড. আনিসুজ্জামান বেঙ্গল বইয়ের দ্বার উন্মোচন করবেন। এ উপলক্ষ্যে বেঙ্গল পাবলিকেশনস থেকে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের ব্যক্তিক আখ্যান Stories From The Edge: Personal Narratives of the Liberation War বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হবে। বইটির অন্যতম সম্পাদক ড. নিয়াজ জামান আলোচনা করবেন গ্রন্থটির ওপর। অনুষ্ঠানের শুরুতে সংগীত পরিবেশন করবে এক্সেল একাডেমির শিশু শিক্ষার্থীরা।

বুধবার, ১৫ নভেম্বরঃ

সকাল ১১টায় থাকবে বয়স্বী কল্যাণ সমিতির সদস্যদের নিয়ে অগ্রজদের জন্য গান, গল্প ও আড্ডা। সেখানে বক্তব্য রাখবেন শিল্পী মিতা হক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। সন্ধ্যা ৫.৩০ এ লেখক আলী আনোয়ারের প্রবন্ধ-সংকলন সাহিত্যের বিরল আঙিনায় বইটির মোড়ক উন্মোচন করবেন কথাসাহিত্যিক ওয়াসি আহমেদ। বইটিতে লেখক আলী আনোয়ারের ভাবনায় ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সাহিত্য-মূল্যায়নের নানা দিক এবং আন্তর্জাতিক সাহিত্যের পর্যবেক্ষণ রয়েছে। রচনাগুলোর প্রকাশকাল ১৯৭৩ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত। সন্ধ্যায় স্যাক্সোফোন পরিবেশন করবেন শিল্পী মনিরুজ্জামান।

বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বরঃ

ইউডার শিক্ষার্থীরা সমবেত গান করবেন সকাল ১১টায়। পরে থাকছে পাঠশালা ও ইউল্যাব শিক্ষার্থীদের নির্মিত চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন চিত্রী মনিরুল ইসলাম ও চিত্রনির্মাতা নূহাশ হুমায়ূন। সন্ধ্যায় আবু ইসহাক হোসেন রচিত বাংলার রেনেসাঁস ও লালন ফকির বইটির মোড়ক উন্মোচন করবেন গবেষক, প্রাবন্ধিক ও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ। সন্ধ্যায় শিল্পী ফরিদা পারভীন গাইবেন লালনের গান। তাঁর সাথে লালন ফকিরের গান ও দর্শন নিয়ে কথা বলবেন লেখক আবু ইসহাক হোসেন।

শুক্রবার, ১৭ নভেম্বরঃ

সকাল ১০.৩০ এ শুরু হবে শিশুদের জন্য চিত্রকর্মশালা, পরিচালনা করবেন চিত্রী মুস্তাফিজুল হক। জাদু পরিবেশন করবেন উলফাৎ কবীর। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন চিত্রী কনকচাঁপা চাকমা।

শনিবার, ১৮ নভেম্বরঃ

এ দিনটার আয়োজন হবে অন্যরকম। সকাল ১০.৩০টায় ব্যাপ্টিস্ট চার্চ স্কুলের দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী শিশুদের গান দিয়ে শুরু হবে দিনের অনুষ্ঠানের। এছাড়া থাকবে সুরের ধারার শিক্ষার্থীদের সমবেত গানও। গল্প শোনাবেন রূপা চক্রবর্তী। বিশেষ অতিথি হিসেবে আয়োজনে উপস্থিত থাকবেন শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। এরপর সন্ধ্যা ৬টায় খালেদ হোসেইন ও সাজ্জাদ আরেফিন সম্পাদিত সমর সেন : জন্মশতবার্ষিকী শ্রদ্ধাঞ্জলি বইটির মোড়ক উন্মোচন করবেন গবেষক ও প্রাবন্ধিক বেগম আকতার কামাল। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে থাকবে সমকালীন কবিদের কবিতা পাঠের আসর।