‘কবরের পাশে গান রচনা হয়েছিল। আমি সংগ্রহ করেছি মাত্র। উকিল মুন্সির গান। বাউল রশীদউদ্দিনকে সাথে নিয়ে। মৃত লাশ। উকিল মুন্সির স্ত্রীর মৃত লাশটি কোলে নিয়ে গানটা গেয়েছিলেন কোন সুরে কোন তালে… আমি, আমি সংগ্রহ করেছি মাত্র।’
‘শুয়া চান পাখি’ গানের গল্প। একবার একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের লাইভ শোতে গাইতে এসে বলেছিলেন বারী সিদ্দিকী। তখন টিভির সামনে যে দর্শকরা ছিলেন, কিংবা যারা ছিলেন সেই টিভি স্টেশনে, কাজ করছিলেন শোটির জন্য, কিংবা কাজের ফাঁকে চাক্ষুষ দেখতে এসেছিলেন গুণী এই শিল্পীর পারফর্মেন্স, সবাই নিশ্চিত মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছিলেন। যেমন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে সবাই তার গলায় গান শোনেন, তার বাঁশির সুর শোনেন।
কেউ কি তখন ভাবতে পেরেছিলেন, বিদায় দিতে হবে তাকেও? অবশ্য এ এক অমোঘ সত্য, বিদায় নিতে হবে সবাইকেই। বিদায় নিতে হয় বারী সিদ্দিকীদেরও। কিন্তু সে বিদায়গুলো ঠিক যেন মেনে নেয়া যায় না। কেন যেন মনে হয়, বিদায়টা বড্ড তাড়াতাড়ি হয়ে গেল। আর কটা দিন পরে গেলে, বিদায়ের আগে আরও কয়েকবার তার ভরাট কণ্ঠ দেশের মানুষকে বিমোহিত করলে কী এমন ক্ষতি হতো!
তা সে ভাবনা যত কোটি মানুষই ভাবুক, তাতে দুনিয়ার অমোঘ নিয়মের কোনো ব্যত্যয় ঘটার সুযোগ নেই। সময় হয়ে গেলে বিদায় দিতে হয় বারী সিদ্দিকীদেরও। আর কারো সুযোগ হবে না বারী সিদ্দিকীর ভরাট গলায় লোকগান পরিবেশনের চাক্ষুষ সাক্ষী হওয়ার। সুযোগ হবে না তার হৃদয় নিংড়ানো বাঁশির সুরের মোহন জাদু চর্মচক্ষে উপভোগ করার।
তবে আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে অন্তত তার ভরাট গলার গান আর মোহন জাদুর সুর থেকে বঞ্চিত হতে হবে না। তা আছে, থাকবে হাজার হাজার বছর। আর তার মৃত্যুর সবচেয়ে বড় আয়রনিটাও এখানেই। মৃত্যুর আর শোকের লোকগান তারচেয়ে দরদ দিয়ে অমন ভরাট কণ্ঠে তো খুব বেশি মানুষ গাননি। তাই তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশের জন্য তার গাওয়া গানগুলোই সবচেয়ে যথার্থ; কেবল তার গান বলেই নয়, বরং সেগুলোতে প্রতিধ্বনিত শোকের মর্মন্তুদ যাতনার জন্য।
শুয়া চান পাখি
আমি একটা জিন্দা লাশ
আমার গায়ে যত দুঃখ সয়