গেল বছরের নভেম্বরের কথা। কাঁদছেন বুফন, সাথে কাঁদছে সারা দুনিয়ার ফুটবল অনুরাগীরা। কারণ ইতালির দেখা মিলছে না রাশিয়ায়। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের বাস মিস করেছে আজ্জুরিরা। চোখের জলের দলে অবশ্য ইতালির আগেই নাম লিখিয়েছে টোটাল ফুটবলের জনক নেদারল্যান্ডসও। রাশিয়ার ট্রেন মিস করেছে অ্যালেক্সিস সানচেজ আর আর্তুরো ভিদালের চিলিও।
ম্যাচ শেষে ইতালির গোলরক্ষক বুফন মিডিয়ায় বলেছিলেন, “আমার জন্য নয়; ইতালির ফুটবলের জন্য দুঃখিত। এভাবে শেষ করাটা আফসোসের।” নিজের ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে এমন ব্যর্থতায় আর কিইবা বলতে পারতেন বিশ্বের ইতিহাসের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক!
বাঁচা-মরার লড়াইয়ে নেমেছিল ইতালি ও সুইডেন। জয়ী দল পাবে ২০১৮ সালের মূল পর্বের টিকিট। মিলানের সান সিরো নভেম্বরের ১৩ তারিখ পর্যন্ত ছিল ইতালির পয়মন্ত ভেন্যু। এ মাঠে এর আগে ‘আজ্জুরিরা’ ৪২ ম্যাচের ৩১টিতেই জয় পেয়েছে, ড্র করেছে ১১টি ম্যাচে। কিন্তু বিশ্বকাপে খেলার সর্বশেষ সুযোগের ম্যাচে ইতিহাসের এসব হিসেব-নিকেশ আদতে কোনে কাজে দেয়নি। ওদিকে প্লে-অফ ম্যাচের প্রথম লেগে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে ছিল সুইডরা। তাদের শুধু প্রয়োজন ছিল সেদিন এটি ড্র।
কোয়ালিফায়ার বৈতরণী পার হতে নিজেদের চিরাচরিত রক্ষণাত্মক খোলস পাল্টে মরণপণ আক্রমণে নেমেছিল ইতালি। ৯০ মিনিটের খেলায় প্রায় ৭০ মিনিটই পায়ে বল রেখেছিল নিজেদের পায়ে, একের পর এক আক্রমণে সুইডেনের রক্ষণভাগ ভেদ করার ২৭টি শটের মধ্যে ছয়টি ছিল একদম গোলপোস্ট লক্ষ্য করে। বিধিবাম ছিল বলেই শেষ রক্ষা হয়নি, আজ্জুরিরা পায়নি গোলের দেখা। ফলাফল সুইডেন ইন, ইতালি আউট।
১৯৫৮ সালের সেই ধূসর দুঃস্বপ্ন আবারো আজ্জুরিদের সামনে এসে দাঁড়ায় হ্যালোইনের মাসে। ইউরোপে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদাটাও তারা হারিয়েছে জার্মানির কাছে। এতদিন ইউরোপ থেকে জার্মানি ও ইতালি সমসংখ্যক বা ১৮ বার বিশ্বকাপ ফুটবল খেলেছে। এবারের বিশ্বকাপ খেলে জার্মানি সেই সংখ্যাটি ১৯ করে নিতে চলেছে।
রাশিয়া বিশ্বকাপে দেখা যাবে না ফুটবল বিশ্বের আরেক পরাশক্তি নেদারল্যান্ডসকেও। ফুটবলের খেলায় ঝাঁক বেধে দ্রুতগতির আক্রমণ তথা টোটাল ফুটবলের প্রবর্তক এ দলটিও যে বাছাই পর্বের বৈতরণী পার হতে পারেনি। কমলা জার্সিতে আর দেখা হবেনা আর্জেন রোবেনকে। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ব্যর্থতায় ৩৩ বছর বয়স্ক আক্রমণভাগের এ খেলোয়াড় ইতিমধ্যে বিদায় জানিয়ে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে।
একেই কি বলে নিয়তির খেলা? হতেও পারে! সর্বশেষ ২০০৬ সালে বিশ্বকাপ জয় করেছিল ইতালি, আর ওই বিশ্বকাপেই সুইডেন সর্বশেষ খেলার সুযোগ পেয়েছিল। এখানেই শেষ নয়। বিশ্বকাপের আশা জিইয়ে রাখতে নেদারল্যান্ডসের সামনে ছিল শুধু মাত্র প্লে-অফ ম্যাচ। আর প্লে-অফ ম্যাচ খেলতে চাই সুইডেনের বিরুদ্ধে বড় ব্যবধানে জয়। সুইডেনের মাঠে ১-১ গোলে ড্র করে দল দুইটি। নিজেরদের মাঠে ২-০ জয়ও পায় তারা। কিন্তু পয়েন্ট টেবিলের হিসেব নিকেশের জন্য ওই জয় যথেষ্ট ছিল না। ফলে ইতালির সঙ্গে প্লে-অফ খেলার সুযোগ পায় সুইডেন। আর বাকিটুকু ইতিমধ্যে সবার জানা। তার মানে দাঁড়ালো, নীল কিংবা কমলা যে কোনো এক দলকে রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়তেই হত। কিন্তু সুইডেন বলতে গেলে একাই বাদ দিয়ে দিল দুই দলকে।
রাশিয়া বিশ্বকাপের টিকিট পায়নি আরও কয়েকটি দর্শক নন্দিত দল। এর মধ্যে রয়েছে কোপা আমেরিকা জয়ী ফুটবল দল চিলি। তাই এবারের বিশ্বকাপের মাঠে দেখা মিলবে না আলেক্সিস সানচেজ ও আর্তুরো ভিদালের অসাধারণ ফুটবল নৈপুণ্য। এছাড়া, এশিয়া থেকে দেখা মিলবে না, ২০৫০ সালের বিশ্বকাপ জয়ের লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া দল চীনেরও।
প্রতিবারের বিশ্বকাপে কোনো না কোন ফেভারিট দলের খেলা দেখা থেকে বঞ্চিত হয় ফুটবল বিশ্ব। কিন্তু ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে দেখা মিলবে না ইউরোপের দুই ফুটবল পরাশক্তি ইতালি ও নেদারল্যান্ডসের। এ আফসোস দর্শক-সমর্থকদের তাড়া করবে বহুদিন। ২০১৮ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচটি শুরুর বাঁশি বাজার আগ পর্যন্ত তাই বলাই যায় বেদনার রঙ নীল-কমলা।