বেশ কয়েক বছর আগের কথা। মাত্রই টুইটারে অ্যাকাউন্ট খুলেছি। ব্যাপারটা নতুন নতুন শিখছি। জানলাম, টুইটারে ওয়ার্ড লিমিট দেয়া আছে। যা লেখার, লিখতে হবে ১৪০ ক্যারেক্টারের মধ্যেই। কী বিপদ!
এ বাবদে অবশ্য এক ছোট ভাই একদিন বেশ কড়া একটা কৌতুক ঝেড়ে দিল। আলাপ হচ্ছিল, বিশ্বজুড়ে টুইটার এত জনপ্রিয় হলেও, এ পোড়া দেশে তার কপাল পুড়ল কেন? তার নির্লিপ্ত উত্তর, ক্যারেক্টারের সীমাবদ্ধতা। বাঙালি কথা বলতে পছন্দ করে। একবার বলা শুরু করলে আর থামতেই চায় না। সুন্দর ভাষায় বললে, পরিমিতিবোধের বালাই-ই নেই। ফেসবুক এ বাবদে ভীষণ উদার। যত খুশি লেখা যায়। কিন্তু টুইটারে ক্যারেক্টার সীমাবদ্ধ। কাজেই বিশ্বজুড়ে ঠিক যে কারণে টুইটার জনপ্রিয়, বাঙালি মুল্লুকে ঠিক সেই কারণেই এটা অজনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম।
ব্যাপারটা বোধহয় বেশ ভাবিয়ে তুলেছিল টুইটার কর্তৃপক্ষকে। তাই মাইক্রো-ব্লগিংয়ের ধারণার মধ্যে থেকেও তারা ক্যারেক্টারের সংখ্যা দ্বিগুণ করে ফেলল। গত ৭ নভেম্বর থেকে টুইট করা যাচ্ছে ২৮০ ক্যারেক্টার পর্যন্ত।
কেবল সংখ্যা বাড়েনি চিনা, জাপানি আর কোরিয়ান ভাষার। এই তিন ভাষায় টুইট করার সর্বোচ্চ সীমা এখনো ১৪০ ক্যারেক্টার। কারণ এই তিন ভাষায় খুব কম ক্যারেক্টার ব্যবহার করেই অনেক কথা বলা যায়। এমনকি জাপানি ভাষাভাষীদের টুইটের গড় ক্যারেক্টার সংখ্যা নাকি মাত্র ১৫! পরিমিতিবোধের চূড়ান্ত পরাকাষ্ঠা আরকি।
এই ক্যারেক্টার বাড়ানোর কারণ হিসেবে অবশ্য তারা বলছে, যাতে মানুষ আরো ভালোভাবে তাদের মনের কথা বলতে পারে। ১৪০ ক্যারেক্টারে নাকি অনেকেই মনের কথা পুরো বলতে পারত না। ফলে প্রায়ই ইউজাররা ১৪০ ক্যারেক্টার ছুঁয়ে ফেলত। এখন নাকি আর ইউজাররা ২৮০ ক্যারেক্টারের সীমারেখাতে সহজে পৌঁছাবে না।
এজন্য অবশ্য তারা সেপ্টেম্বর জুড়ে কিছু ব্যবহারকারীদের নিয়ে একটা এক্সপেরিমেন্টের আয়োজন করেছিল। তার ফলাফলে সন্তুষ্ট হয়েই ক্যারেক্টার বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত। তাতে অনেকেই খুশি হয়েছেন বটে, বেজার হওয়ার সংখ্যাটাও কম নয়। তাদের দাবি, পরিমিতিবোধের পাশাপাশি এতে টুইটারের আসল সৌন্দর্যও ক্ষুণ্ণ হবে। সবার টুইট বড় হলে, টুইটার ফিডের যে হালকা ব্যাপারটা ছিল, সেটাই আর থাকবে না।
কিন্তু টুইটার কর্তৃপক্ষের দাবি, ক্যারেক্টার বেড়ে গেলেও হঠাৎ করেই মানুষের বড় বড় টুইট করার অভ্যাস গড়ে ওঠার সম্ভাবনা নেই। মানুষ আগের মতো ছোট ছোট টুইটই করবে। কেবল প্রয়োজন হলে যাতে বড় টুইটও করতে পারে, সেজন্যই ক্যারেক্টার বাড়ানো হয়েছে।
এই তালে যদি বাংলাদেশে টুইটারের জনপ্রিয়তাও খানিকটা বাড়ে, সেটাও কিন্তু মন্দ হয় না। অন্তত টুইটার কর্তৃপক্ষের জন্য তো বটেই। যত যাই হোক, ইউজার সংখ্যার হিসেবে বাংলাদেশ যে পৃথিবীর অনেক দেশের চেয়ে অনেক বেশি ওজনদার, তাতে তো আর সন্দেহ নেই।