চলচ্চিত্রের টিকে থাকা

বাংলাদেশি সিনেমাগুলো আমরা খুব উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে যতটা সম্ভব দেখার চেষ্টা করি। আমদের ভালো লাগলে আমরা ভালো বলি, আর খারাপ লাগলে খারাপ বলি। যেহেতু নিজের পকেটের টাকা খরচ করেছি, তাই এ বিষয়ে ভালো-মন্দ মন্তব্য করার অধিকার আমাদের আছে।

একটি চলচ্চিত্র প্রদর্শনের পর মূলত দুটি শ্রেণি দেখা যায়; একটি দর্শক শ্রেণি, অপরটি সমালোচক শ্রেণি। একজন সাধারণ দর্শক তার মন্তব্য প্রদান করতেই পারেন। সাধারণ দর্শক মূলত নিজস্ব আবেগ, অনুভূতি, এবং ভালোলাগা-মন্দলাগা নির্ভর মন্তব্য করেন। কিন্তু, দর্শকের মন্তব্য কোনোভাবেই একটি চলচ্চিত্রকে বিচারের প্রকৃত মানদণ্ড হতে পারে না। সারা বিশ্বে একটি চলচ্চিত্র মুক্তির পর সমালোচকদের এ বিষয়ে মন্তব্য করার জন্য আহবান জানানো হয়; যাতে এর শিল্পমান, ত্রুটি-বিচ্যুতি জানা যায়। সমালোচকরা চলচ্চিত্রটির শিল্পমান নিরীক্ষণ ও আদ্যোপান্ত বিচার-বিশ্লেষণ করে গঠনমূলক সমালোচনা করেন। এতে চলচ্চিত্রটি সম্পর্কে সবাই সম্যক ধারণা পায়।

মুক্তির প্রথম দিনেই প্রায় কোটি টাকা আয় করা ছবি ঢাকা অ্যাটাক

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কারা চলচ্চিত্রের সমালোচক? তারাই মূলত চলচ্চিত্রের সমালোচক, যারা দীর্ঘ দিন ধরে চলচ্চিত্র মাধ্যমের সাথে সরাসরি জড়িত, যাদের চলচ্চিত্র নির্মাণের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে, যাদের চলচ্চিত্র নিয়ে গবেষণাপত্র আছে এবং যারা বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বা সেমিনারে চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা করে থাকেন। বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সমালোচকদের মধ্যে অন্যতম হলেন মুহম্মদ খসরু, মতিন রহমান, ফাহমিদুল হক, বিধান রিবেরু প্রমুখ।

সাম্প্রতিক সময়ের বেশ আলোচিত-সমালোচিত ছবি ডুব

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, আমাদের গণমাধ্যমে চলচ্চিত্র বিষয়ক লেখাগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো চলচ্চিত্র সমালোচকের নয়। ওই লেখাগুলো মূলত লেখকদের নিজেদের ভালোলাগা-মন্দলাগাকে উপজীব্য করে ব্যক্তি মতামতকে চলচ্চিত্র সমালোচনার মোড়কে উপস্থাপন করা হয়। এ ধরনের লেখা-লেখির প্রভাব সরাসরি গিয়ে পড়ে চলচ্চিত্রটির আয় রোজগারে। এতে দেখা যায় তুলনামূলকভাবে ভালো সিনেমা ব্যবসায়িকভাবে মার খেলেও সস্তা দরের কোনো সিনেমা ব্যবসায়িকভাবে বেশ সফলতা লাভ করছে। এ ধরনের ঘটনা সামগ্রিকভাবে আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য বড় ধরনের অশনি সংকেত।

এমনিতেই একটি সংকটময় সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প। অনেক প্রতিকূলতা, ত্রুটি-বিচ্যুতি, অসামঞ্জস্যতা, অনেক কিছু মাথায় রেখে এ দেশের চলচ্চিত্র পরিচালকদের কাজ করতে হয়। আমাদের চলচ্চিত্র পরিপূর্ণ চলচ্চিত্র হয়ে উঠছে কিনা, সে প্রসঙ্গ ভিন্ন। কোনো চলচ্চিত্রই সমালোচনার উর্ধ্বে নয়। তার জন্য বিজ্ঞ সমালোচকরা কথা বলবেন, চলচ্চিত্র মাধ্যমের অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা আলোচনা করবেন। সাধারণ দর্শক বা অপেশাদার ব্যক্তিরা তাদের শখের লেখা দিয়ে চলচ্চিত্রকে মূল্যায়ন করার জন্য উপযুক্ত নয়।

দেশে বিদেশে প্রসংশিত সিনেমা অজ্ঞাতনামা

একটি দেশের সিনেমা শিল্পে সব সিনেমাই একই ধাচের হয় না। বিনোদনে ভরপুর বাণিজ্যিক সিনেমার পাশাপাশি বিকল্প ধারার সিনেমাও তৈরি হয়ে থাকে। আমাদের দেশেও তাই হয়। দেশিয় চলচ্চিত্র শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে আমাদের সবারই নিজেদের অবস্থান থেকে সহযোগিতা করতে হবে। নচেৎ আমাদের চলচ্চিত্রশিল্পও এক সময় বিদেশিদের আগ্রাসনে হারিয়ে যাবে। তখন আফসোস করা ছাড়া কিছুই করার থাকবে না।