বেশিদিন আগের কথা নয়, যখন অশ্লীলতায় ভরে গিয়েছিল আমাদের চলচ্চিত্র। মানুষ সপরিবারে হলে গিয়ে দেখার মতো সিনেমাই খুঁজে পেতনা। পরিস্থিতি এমনই সংকটময় হয়েছিল যে, সাধারণ দর্শকদের কাছে হল পরিণত হয়েছিল অশ্লীল সিনেমা প্রদর্শনের জায়গা। অগত্যা রুচিশীল দর্শকরা হল বিমুখ হতে শুরু করেছিলেন। দর্শকদের হল বিমুখতায় চরম মূল্য দিতে হয়েছে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পকে। এমন অচলায়তনের মাঝে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পকে আবারও প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছেন দেশের কিছু নবীন চলচ্চিত্র পরিচালক। তাদের নির্মিত চলচ্চিত্র আবারও দর্শকদের হলমুখী করতে পেরেছে। যাদের জন্য আমাদের সিনেমা হলগুলো দর্শকদের উপস্থিতিতে আবারও প্রাণ ফিরে পেয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন গিয়াসউদ্দিন সেলিম, শিহাব শাহীন, অমিতাভ রেজা চৌধুরী, দীপংকর দীপন ও মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
গিয়াসউদ্দিন সেলিম (মনপুরা)
আমাদের সকলেরই হয়তো মনপুরা সিনেমাটির কথা মনে আছে। সম্পূর্ণ গ্রামবাংলার পটভূমিতে পারিবারিক ও প্রেমের গল্পের চমৎকার সিনেমা মনপুরা। প্রথম সিনেমাতেই বাজিমাত করেন পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিম। তরুণ-তরুণীরা দল বেঁধে সিনেমা হলে গিয়েছিল মনপুরা দেখার জন্য। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহেও দর্শকদের মধ্যে দেখা গিয়েছিল উৎসবের আমেজ। দর্শকদের হলে ফিরিয়ে ২০০৯ সালের সবচেয়ে ব্যবসা সফল সিনেমার তকমা অর্জন করেছিল মনপুরা।
শিহাব শাহীন (ছুঁয়ে দিলে মন)
২০১৫ সালের ১০ই এপ্রিল মুক্তি পায় শিহাব শাহীন পরিচালিত চলচ্চিত্র ছুঁয়ে দিলে মন। ‘তুমি ছুঁয়ে দিলে মন, আমি উড়বো আজীবন’ এমন কোন তরুণ-তরুণী হয়তো নেই, যে এই গানটা জানেনা। শুধু এ গানটি নয়, সিনেমাটির অধিকাংশ গানই বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। দর্শকদের ভিড় লেগেছিল হলগুলোর টিকিট কাউন্টারে। দর্শকদের এমন ভালোলাগা ও আগ্রহ মনে করিয়ে দেয়, বাংলা সিনেমার সুদিন ফেরা নির্ভর করছে রুচিশীল সিনেমার ওপরই।
অমিতাভ রেজা (আয়নাবাজি)
গেল বছরের অন্যতম সেরা ছবি আয়নাবাজি। পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী আয়নাবাজি সিনেমাটির মধ্য দিয়ে ঢাকাই চলচ্চিত্রে এক ভিন্নামাত্রা যোগ করেছিলেন। দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলতে পেরেছিলেন তিনি। প্রতিদিনই সিনেমা হলগুলি ছিল পরিপূর্ণ। এমনকি অনেক দর্শককেই টিকেট না পেয়ে ফিরে যেতে হয়েছিল। দর্শকদের পাশাপাশি সমালোচক মহলেরও প্রশংসা কুড়েয়েছিল সিনেমাটি।
দীপংকর দীপন (ঢাকা অ্যাটাক)
আশির দশকের কুংফু-কারাতের নির্ভর অ্যাকশন সিনেমা দেখা যেত। এরপর এ ঘরানায় তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য সিনেমা দেখা যায়নি। কেন্দ্রিয় চরিত্রে পুলিশকে রেখে হলিউডি অ্যাকশন থ্রিলার ধাচে এই প্রথমবারের মতো কোনো সিনেমা তৈরি করা হলো। ঢাকাই সিনেমার ভক্তদের এ নতুন আমেজ এনে দিয়েছে দীপংকর দীপন। তার পরিচালনায় নির্মিত ঢাকা অ্যাটাক ঢাকাসহ সারাদেশের ১২২টি সিনেমা হলে মুক্তি পায়। মুক্তির প্রথম দিনেই বাজিমাত করে ‘ঢাকা অ্যাটাক, আয় করেছিল প্রায় কোটি টাকা। আর টাকার অঙ্কই বলে দিচ্ছে দর্শকদের মাঝে সাড়া কেমন পড়েছিল। হলগুলোতে উপচে পড়া ভিড়তো ছিলই, এমনকি অনেকেই টিকিট না পেয়ে হলগেট থেকে ফিরে গিয়েছিলেন। কেবল দর্শকদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়নি ঢাকা অ্যাটাক, সিনেমা সমালোচকদেরও প্রশংসাও কুঁড়িয়েছে বেশ।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী (ডুব)
চিত্রনাট্যের বিষয়বস্তুকে ঘিরে মুক্তির আগেই ডুব সিনেমার ট্রেলারটি বেশ আলোড়ন তুলেছিল। দর্শকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা ছিলেন কবে মুক্তি পাবে ডুব। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত ২৭ অক্টোবর মুক্তি পায় সিনেমাটি। ডুব নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক থাকলেও মুক্তির পর থেকে সিনেমা হলগুলোতে ‘ডুব’ দেখতে দর্শকদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। অবশ্য মোস্তফা সরয়ার ফারুকী’র সিনেমা নিয়ে সব সময় দর্শকদের এক ধরনের কৌতুহল থাকে।
সব কিছু মিলিয়ে ঢাকাই ছবির শুদিন ফিরেছে বলা চলে। মানুষ এখন সিনেমা দেখতে ছুটে যাচ্ছে সিনেমা হলগুলোতে। আর তার একমাত্র কারণ সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র। আর এর পিছনে অবশ্যই এ সকল গুণী নির্মাতাদের বড় অবদান রয়েছে ।