গুরুর পদাঙ্গে বাঁচিয়ে রেখেছেন ট্যাপেস্ট্রি শিল্প

গুরু-শিষ্য পরম্পরায় শিল্প চর্চার রীতি সমকালীন সময়ে খুব একটা দেখা যায় না। ভিন্ন আঙ্গিকে আদৌ কেউ ভাবছেন কিনা, কিংবা কারও ভাবনার সঙ্গে নিজের ভাবনাকে মিলিয়ে কাজ করা যায় কিনা, এমন খোঁজ নেওয়ার সময়ইবা কোথায়। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ছুটছে সবাই। তবুও এই নাগরিক শহরে হঠাৎ দেখা মেলে কিছু অন্যরকম মানুষের সাথে; ভালো লাগা ছুঁয়ে যায় তাদের কাজ দেখে। হ্যাঁ, বলছি শিল্পী তাজুল ইসলামের কথা। গুরু শিল্পী রশীদ চৌধুরীর সাথে কাজ শুরু করেছিলেন সেই ১৯৬৫ সালে। শিখেছিলেন বুননের সব  রকম কলা-কৌশল। গুরুর কাছে শেখা বয়ন বিদ্যার কলা-কৌশলের চর্চা আজও করে চলেছেন তিনি। অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা তার জন্য, এখনো ধরে রেখেছেন বাংলার ঐতিহ্যবাহী বয়ন চিত্রের চর্চাকে।

শিল্পী তাজুল ইসলাম শিক্ষার পাঠ চুকিয়েছিলেন প্রাচ্যকলার কৌশল শিখে। নিজে ব্যক্তিগতভাবে কাজ করেছেন নানা মাধ্যমে। কিন্তু এই বয়ন চিত্রের সাথে যেন সারা জীবনের আত্মার বন্ধন। শিল্পী রশীদ চৌধুরীর পরে তিনিই বাংলাদেশে বয়ন চিত্রের চর্চাকে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছেন। সমকালীন অনেকেই এই শিল্প মাধ্যম নিয়ে আগ্রহী হয়েছেন, তবে দেখার বিষয় এ শিল্পের প্রতি তাদের একাগ্রতা কত দিন বজায় থাকে।

ভাবছেন বয়নচিত্র কি? ট্যাপেস্ট্রি বা বয়নচিত্র হল বুননের মাধ্যমে করা চিত্রকর্ম। মূলত ঐতিহ্যবাহী শতরঞ্জি ছিল ট্যাপেস্ট্রি’র একমাত্র পুরাতন নিদর্শন। অনেক সময় সাপেক্ষ এ কাজটিতে ব্যয়ও কিন্তু কম নয়। শৈল্পিক মাধ্যম হিসেবে ট্যাপেস্ট্রি যাত্রা শুরু করে শিল্পী রশীদ চৌধুরীর হাত ধরে। পরম মায়ায় তিনি এই শিল্প মাধ্যমের নাম দেন তাপিশ্রী। শিল্পী তাজুল ইসলামের এরই মাঝে দেশে-বিদেশে এ যাবতকালে তার ১০টি প্রদর্শনী প্রর্দশনীও অনুষ্ঠিত হয়েছে।

যেভাবে হয় বুনন

তাজুল ইসলামের কাজে রয়েছে নানা রকম ফর্ম ও কম্পোজিশনের খেলা। সময়ের সাথে সাথে পরিপক্কতা ও ডিজাইনের জায়গা থেকে তিনি হয়ে উঠেছেন আরও পরিপূর্ণ। সেই পরিপূর্ণতা দেখা মেলে তার প্রতিটি প্রদর্শনীতে।

বয়ন চিত্রে ফর্মের খেলা

শিল্পী তাজুল ইসলাম কেবল গল্প বলা বা ফর্ম নিয়ে কাজ করেছেন এমন না। তার কাজে ক্যালিগ্রাফীর দেখাও মেলে।

রঙিন পটভূমিতে ট্যাপেস্ট্রি

ফিগার নয়, বরং নকশা নিয়েই কাজ করেছেন বেশি। গাছপালা অথবা প্রাণী সব কিছু নিয়েই তার কাজ নীরিক্ষার পর্যায় পার করেছে। গভীরভাবে কাজ করেছেন পিকাসোর কিউবিজম ধারার ফর্ম নিয়ে। তবে শুধু নিজের কাজ নয়, তিনি রশীদ চৌধুরীর বেশ কিছু কাজও পুনরায় করেছেন।

চলছে প্রদর্শনী

আগামীকাল শুক্রবার ছুটির দিন অবধি মহাখালী ডিওএইচএস-এর কসমস গ্যালারীতে সকাল ১১ টা থেকে রাত ৮ টা অবধি উপভোগ করতে পারবেন তাজুল ইসলামের মোট ৩৮টি শিল্পকর্ম।