১৬ দিন জুড়ে দেশী সিনেমার প্রদর্শনী! তাও পুরো বাংলাদেশ মানে ৬৪ জেলা জুড়ে! নিজ দেশেই যখন দেশী সিনেমাগুলোকে প্রায়ই চাপা পড়তে হচ্ছে যৌথ সিনেমার নামে নানা রকম কারসাজির আড়ালে সেখানে সিনেমা সংশ্লিষ্ট সকলের কাছেই এই উদ্যোগ আশার সঞ্চার করবার মত ঘটনা। প্রতিবেশী দেশের সাথে সিনেমা বিনিময়ের ফাঁদে যখন দেশী সিনেমার হলে ঠাঁই হয় না তখন এমন প্রদর্শনীর খবরে কে না চমকায়? সর্বশেষ সরকারী অনুদানের সিনেমা ‘খাঁচা’ মুক্তি পেয়েছিল ৬টি হলে, মাত্র এক সপ্তাহের জন্য।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একডেমীর উদ্যোগে ৬৪ টি জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সমন্বয়ে চলছে এই প্রদর্শনী। শুরু হয়েছে গত ৬ অক্টোবর। যেখানে হল মালিকেরা অথবা সিনেমার পরিবেশক-প্রযোজক অথবা পরিচালক প্রায় তাদের গচ্চা যাওয়া টাকার হিসেবের খাতা খুলে বসে, সেখানে সারাদেশে একযোগে এতদিনের সিনেমা প্রদর্শনী? বেশ ধুম পড়বার মত ঘটনাই বটে!
সিনেমার তালিকা গুলোও সম্ভবত সমগ্র বাংলাদেশের সকল দর্শকদের মুগ্ধ করবে। গেল বছরের হিট সিনেমা আয়নাবাজি থেকে জহির রায়হানের ’৭০ এর উত্তাল সময়ের সিনেমা জীবন থেকে নেয়া, থাকছে সবই। আরও থাকছে আমজাদ হোসেনের গোলাপী এখন ট্রেনে, ঋত্বিক ঘটকের তিতাস একটি নদীর নাম সিনেমাটিও প্রদর্শীত হবে দেশ জুড়ে একযোগে। ডুব নিয়ে আলোচনায় থাকা পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সিনেমা টেলিভিশনও রয়েছে তালিকায়। একঝলক সালমান শাহ দেখে ফেলতে পারেন এই সুযোগে, কারণ রয়েছে ছটকু আহমেদের সত্যের মৃত্যু নেই। রাজ্জাক-কবরীর ৭০ এর দশকের ঝড় তোলা সিনেমা রংবাজ দেখতে ভুল করবেন না কেউ।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসের গুণী অনেক নির্মাতার ছবিই একযোগে দেখার সুযোগ পাওয়া বেশ সৌভাগ্যের বিষয়ই বটে ।সুভাষ দত্তের অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী, খান আতাউর রহমানের আবার তোরা মানুষ হ, নারায়ণ ঘোষ মিতার লাঠিয়াল, আলমগির কবিরের সীমানা পেরিয়ে, আজিজুর রহমানের ছুটির ঘন্টা, তারেক মাসুদের অন্তর্যাত্রা অথবা তৌকির আহমেদের বহুল প্রশংসিত অজ্ঞাতনামাও দেখে নিতে পারেন ক’দিনে।
ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় চিত্রশালা ভবনের নিচতলায় সিনেমা প্রদর্শনীর পাশাপাশি চলছে পোস্টার প্রদর্শনীও। সেখানে আপনার দেখা হবে আমাদের দেশের অতীতে নির্মিত অনেক সিনেমার পোস্টারের সাথেই। নবাব সিরাজউদ্দোল্লা, মেঘের অনেক রঙ, রুপবান, এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী, সূর্য দীঘল বাড়ি, এসব বিখ্যাত সব সিনেমার পোস্টারের দেখা পেতে পারেন এখানে।
তাই দেরি নয়, ২১ অক্টবোর পর্যন্ত দিনের তিনটি প্রদর্শনীর সময়, দুপুর ৩ টা, বিকেল ৫.১৫ এবং ৭.৩০ এর কোন একটিতে দেখে ফেলুন সিনেমাগুলো। আয়নাবাজি ও আন্ডার কন্সট্রাকশন এর প্রদর্শনী চলবে শুধু ঢাকাতে। অনুপ্রেরণায় হয়তো ভবিষ্যতে তৈরী হবে ঢাকা অ্যাটাকের মত অন্যরকম গল্পের দর্শকপ্রিয় সিনেমা।