যে জন জীবে প্রেম করেনি

মানুষ নাকি সৃষ্টির সেরা জীব! কিন্তু সেই মানুষই হরহামেশা মেতে থাকে ধ্বংসের খেলায়। যুগ-যুগান্তরের অপরিবর্তনীয় এই বিনাশের ধারা বিভিন্ন আঙ্গিকে ঘটে চলছে প্রতিনিয়ত। নিজ প্রজাতিকে ধ্বংস করে সম্ভবত একঘেয়েমিতে পেয়ে বসেছে অনেককে; তাই এবারে তারা নেমেছে সবচেয়ে প্রভুভক্ত প্রাণি, কুকুর নিধনে। সারমেয়গুলো কি জলাতঙ্কের ব্যামোয় ভুগছিল? কী লাভ সেসব জেনে আর জানা-জানিরই বা কি দরকার, মানুষের জীবন বিকোয় যেখানে নিত্য, বড় সস্তায়; সেখানে কুকুরের কুষ্ঠী জানার চেষ্টা করলে পাগলাগারদে ঠাঁই জুটতে পারে।

থাক সেসব কথা, গুনে গুনে ১৪ টি কুকুর নিধন করে একদল মানুষ(?) যে মানব জাতিকে উদ্ধারের বিশাল এক যজ্ঞ শেষ করেছে। তো সেই সব বীরপুঙ্গবদের কথা ছেড়ে দেই। জীবে দয়া যে শেখেনি, তাকে কিভাবে শেখাবেন যে এই পৃথিবীতে, তাদের চারপাশের সবার আছে নিজস্ব অধিকার।

স্যোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে হইচই শুরু হয়েছে যথারীতি চোর পালানোর পর। ঘটনা কিন্তু বেশ পুরোনো। গেল সপ্তাহে রামপুরার বাগিচারটেক জামে মসজিদ কল্যাণ সমিতি এলাকার বাসিন্দাদের কল্যাণে কুকুরগুলোকে মেরে ফেলার নির্দেশ দেয়। দু’টি মা কুকুর এবং মোট ১২টি বাচ্চা কুকুরকে পিটিয়ে আধমরা করে নাইটগার্ডরা। তাদেরই বা অত সময় কোথায়? কুকুরকে মরার জন্য সময় দিতে কি তারা বাধ্য? তাদের আরও কতশত কাজ!!! মরার আগেই তাই অর্ধমৃত কুকুরগুলোকে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়। এরপরও কুকুরের কাজ ,কুকুর করেছে –এ কথাটি কি মানুষের মুখে শোভা পায়? আপনারাই বলুন?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তো কত কিছু নিয়েই সাড়া পড়ে, কিন্তু ফলোআপ হয় কটা? দেরিতে হলেও নড়েচড়ে বসেছে প্রাণিদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ার ও কেয়ার ফর পজ’-এর স্বেচ্ছ্বাসেবীরা।

এই গণ কুকুর হত্যার জেরে বিস্ময়কর মনে হলেও, রামপুরা পুলিশের সহায়তায় এদেশে প্রথমবারের মতো প্রাণি হত্যার ময়না তদন্ত; এমনকি মামলাও হয়েছে থানায়। তবে কি বলা যায়, এই ১৪টি প্রাণ বৃথা যায়নি? এহেন নিষ্ঠুর ও ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হতে ভবিষ্যতে যে কারো হাত কাঁপবে? মনে তো হয়না।

দিন শেষে, মানুষের আদলে পশুর কাজ করে সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতাকে মিথ্যা প্রমাণ করে এদেশের কিছু মানুষ (?) এগিয়ে (?) চলছে ভালোই। তাই নয় কি? এদেশ হাচিকোর জাপান নয়। আমরা কুকুরকে কৃষ্ণের জীব বলি আর লাথি মেরে পাশবিক আনন্দ নেই কিন্তু এত সবকিছুর পরও কুকুর প্রভুভক্তই থাকে, আমরা আর ‘মানুষ’ থাকি না।