গল্প বা উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণ এখন খুব বেশি অবাককর বিষয় নয়। তবে চলচ্চিত্রটি যদি হয় সাহিত্যেরই আরেকটি জনপ্রিয় ধারা ‘নাটক’ থেকে অনুপ্রাণিত তবে সেটি ব্যতিক্রম বটে! দর্শক যখন ভালোবাসে দুধরনের শিল্পকেই তবে নির্মাতা পিছিয়ে থাকবেন কেন? বরং লড়াই হতে পারে গল্প বলার ধরন নিয়ে। সে লড়াই শিল্পের সব মাধ্যমেই উপজীব্য বটে। তবে যদি হতে হয় সমাদৃত , তবে জরুরী হয়ে পরে তার নিজস্ব ভাষা বলয়।
অনেক মঞ্চ নাটকই চলচ্চিত্র পরিচালকদের মনে ব্যাপক সাড়া ফেলে। আর এরপরই মঞ্চ থেকে গল্পের যাত্রা শুরু হয় সেলুলয়েডে। মঞ্চ নাটক থেকে বড় পর্দার ক্যানভাসে নির্মিত চলচ্চিত্রের সংখ্যা বেশ ভারি। রোমিও জুলিয়েট থেকে শুরু করে ডেথ অফ এ সেলসম্যান এর মত জনপ্রিয় চলচ্চিত্র কিন্তু এসেছে মঞ্চ নাটক থেকেই।
এ স্ট্রীটকার নেমড ডিসায়ার (১৯৫১)
টেনেসি উইলিয়ামসের লেখা এই গল্পটি জিতেছিল পুলিৎজার পুরস্কার। এলিয়া কাজানের পরিচালনায় গল্পের আত্মপ্রকাশ হয়েছিল বড় পর্দা এবং মঞ্চ দু জায়গাতেই। সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল মার্লোন ব্রান্ডো এবং ভিভিয়ান লেই এর দুর্দান্ত অভিনয়। চলচ্চিত্রটির সঙ্গীত পরিচালনা করেন এলেক্স নর্থ। এলিয়া কাজান এটির নির্মাণের সময় টেনেসির মূল স্ক্রিপ্ট এর কিছু পরিবর্তন করেন যা ঘটনাটিকে আরো প্রাসঙ্গিক করে তোলে।
ক্যাট অন এ হট টিন রুফ (১৯৫৮)
টিনেসি উইলিয়ামস এর আরেকটি বিখ্যাত নাটক ক্যাট অন এ হট টিন রুফ এর স্ক্রিপ্টে একই নামে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন রিচার্ড ব্রুকস। আর এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এলিজাবেথ টেলর, পাউল নিউম্যান, বার্ল আইভস। সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন চার্লস ওয়ালকোট আর চিত্রগ্রাহক ছিলেন উইলিয়াম ডেনিয়েল। ১৯৫৮ সালের বক্স অফিসের সেরা ১০ টি চলচ্চিত্রের মধ্যে এটি ছিলো।
হুজ এফ্রেইড অফ ভার্জিনিয়া উলফ? (১৯৬৬)
এডওয়ার্ড আলবির বহুল প্রচারিত ব্লাক কমেডি ধারার মঞ্চনাটক “হুজ এফ্রেইড অফ ভার্জিনিয়া উলফ” এর চলচ্চিত্রায়ন করেন মাইক নিকোলাস। এতে মার্থা চরিত্রে অভিনয় করেন এলিজাবেথ টেলর, জর্জ চরিত্রে রিচার্ড বার্টন, নিক চরিত্রে অভিনয় করেন জর্জ সেগাল এবং স্যান্ডি ডেনিস। মঞ্চের মত বড়পর্দায়ও বাজিমাত করে এই চলচ্চিত্রটি। অস্কারের ১৩টিশাখায় মনোনীত হবার পাশাপাশি, এলিজাবেথ টেলর সেরা অভিনেত্রীর এবং স্ট্যানলি ডেনিসসেরা সহ অভিনেতার পুরষ্কার ঘরে তোলেন।
রোমিও এন্ড জুলিয়েট (১৯৬৮)
‘রোমিও এন্ড জুলিয়েট’ উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের আরও একটি জনপ্রিয় নাটক। দুই পরিবারের রেষা-রেষি, এরপর মৃত্যু দুই কেন্দ্রীয় চরিত্রের, আর সব শেষে সেই উপলক্ষ্যে দুই পরিবারের এক হয়ে যাওয়া, এই ছিল নাটকের গল্প। দেশ ও কালকে জয় করেছিলো এই গল্পটি, তবে শুধু নির্দিষ্ট সময়ে আবদ্ধ থাকেনি। এই সফল নাটক কে প্রথমে বড় পর্দায় আনেন ফ্রাঙ্কো জেফেরিলি, ১৯৬৮ সালে। রোমি ও জুলিয়েট চরিত্রের অভিনয়ে দেখা যায় লিওনার্ড হোয়াইটিং ও অলিভিয়া হাসি, তাদের অভিনয় ছিলো দেখার মত। আর সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন নিনো রোটা, যিনি পরবর্তীতে “গডফাদার টু” এর “বেস্ট অরিজিনাল স্কোর” এর জন্য অস্কার পান। পরবর্তীতে ১৯৯৬ এবং ২০১৩ সালে আবারো রোমিও ও জুলিয়েট চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়।
এ ম্যান ফর অল সিজন (১৯৬৬)
প্রায় ৪০০ বছর আগে রাজা অষ্টম হেনরির কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত নাটক ম্যান ফর অল সিজন। নাটকটি মঞ্চে বেশ সাফল্য পাওয়ার পর নাট্যকার রবার্ট বোল্ট নিজেই তৈরী করলেন একই নামের চলচ্চিত্রের জন্য চিত্রনাট্য। আর সেই চলচ্চিত্রের নির্মাতা হলেন ফ্রেড জিনেম্যান। সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৬৬ সালে। অভিনয় করেন পল স্কোফিল্ড (স্যার থমাস মোর), ওয়েন্ডি হিলার (এলিস মোর), লিও ম্যাকার্ণ (থমাস ক্রমওয়েল), ওরসন ওয়েলস (কার্ডিনাল ওলসি), রবার্ট শ (হেনরি অষ্টম)। মঞ্চের মত এটিবক্স অফিসেও ব্যাপক সাড়া ফেলে, সাথে সমালোচকদের কাছেও সমাদৃত হয়। অস্কারের ৩৯ তম আসরে সেরা ছবি, সেরা অভিনেতা ও সেরা পরিচালক সহ আরো ৬ টি শাখায় পুরষ্কার পায় সিনেমাটি।
ডেথ অফ এ সেলসম্যান (১৯৮৫)
সর্বকালের সেরা নাটকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উপরে রাখা যেতে পারে আর্থার মিলার রচিত ‘ডেথ অফ এ সেলসম্যান’ নাটকটিকে। এটি প্রকাশিত হয় ১৯৪৯ সালে এবং ঐ বছরেই আর্থার মিলার “পুলিৎজার” পুরষ্কার পান। এই গল্প নিয়ে ১৯৮৫ সালে সিবিএস টেলিভিশনের জন্য চলচ্চিত্র তৈরী করেন। নির্মাণ করেন ভলকার স্কলন্ডোরাফ ও এতে উইলি লোমানের চরিত্রে অভিনয় করেন ডাস্টিন হফম্যান। আরো অভিনয় করেন কেটরিড (লিন্ডা), জন মালকোভিচ (বিফ), স্টিফেন (হ্যাপি) ।উইলিলোমান চরিত্র অভিনয়ের জন্য ডাস্টিন হফম্যান গোল্ডেন গ্লোব সেরা অভিনেতার পুরষ্কার পান ১৯৮৬ সালে।