“বেলাশেষে” ও “প্রাক্তন” এর সাফল্যের পর পরিচালক জুটি নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নতুন সিনেমার নাম “পোস্ত”। ২২ সেপ্টেম্বর সাফটা চুক্তির আওতায় কলকাতার পর এদেশের বড় পর্দায় মুক্তি পেয়েছে ছবিটি।
নিখাদ পারিবারিক সিনেমা বলতে বাঙালি দর্শক ঠিক যা জানে-বোঝে, এবং বড়পর্দায় ঠিক যা দেখতে চায় তাই দেখিয়েছেন এই পরিচালক জুটি। বাঙালির বাঁধা সেন্টিমেন্টগুলো কিভাবে বড়পর্দায় ফুটিয়ে তোলা যায় সেটা বহুদিন ধরেই নন্দিতা-শিবপ্রসাদ জুটির ব্রেড অ্যান্ড বাটার। সুতরাং ফের সেই মধ্যবিত্তের চোখে সম্পর্ক ও অধিকারবোধের টানাপোড়েন নিয়ে আরও একটি আস্ত সিনেমা।
দেখতে খারাপ লাগবে না। কিন্তু মন কি জুড়াবে? অনেকদিন কি মনে থাকবে সিনেমাটির কথা? উত্তরটা খুঁজে ফেলি চলুন।
“পোস্ত” সিনেমাটি আদপে জঁরার হিসেবে ফ্যামিলি ড্রামা এবং কোর্টরুম ড্রামার মিশেল। ইন্টারমিশনের আগ অবধি এটি আমাদের অতিচেনা আদ্যন্ত একটি পারিবারিক গল্প। অর্ক লাহিড়ী ওরফে পোস্ত গল্পের মূল এলিমেন্ট। তার বয়েস সাত। তার বাবা-মা চাকরিসূত্রে কলকাতায় থাকে এবং এখনো জীবন গুছিয়ে নেয়ার সংগ্রামে ব্যস্ত। তাই পোস্ত ছোটবেলা থেকেই তার দাদা-দাদীর কাছে শান্তিনিকেতনে বড় হয়েছে। গল্পের এক পর্যায়ে অর্ণব লাহিড়ী (পোস্ত’র বাবা) নিজের বন্ধু মারফতে বিলেতে একটা নতুন ব্যবসা শুরুর পরিকল্পনা করে এবং স্ত্রী-পুত্র সহ সেখানেই পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। অতঃপর পোস্তর অভিভাবকত্ব নিয়ে দু’পক্ষের দ্বন্দ্বের শুরু ও সিনেমার মধ্যবিরতি।
মধ্যবিরতির পর সিনেমাটি পুরোপুরিই কোর্টরুম ড্রামা। এবং সিনেমাটির খেই হারানোর শুরুও সেখান থেকেই। যতক্ষণ পর্যন্ত সিনেমাটির গল্প একটা পরিবারের মধ্যে আবদ্ধ থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত পরিচালকের মনোযোগ আবেগ, সম্পর্ক, হাসি, চোখের জল এসবের দিকে নিবদ্ধ ছিলো। কলকাতার বাঙালি দর্শককুলও তাই চায়, আর আমরাও সম্ভবত সেদিকেই হাঁটছি বা হাঁটতে বাধ্য হচ্ছি। কিন্তু সিনেমার গল্প যখন পারিবারিক চৌহদ্দি পেরিয়ে কোর্টে গড়ায়, তখন পরিচালকের নজরটাও আবেগী জটিলতা পেরিয়ে যৌক্তিকতার দিকে গড়ানো উচিত ছিলো। কারণ, কোর্টতো আর বাড়ির ডাইনিং টেবিল না যে টুকটাক বাক-বিতণ্ডা করলাম, চোখের জল নাক-গলা পেরিয়ে বুকে এসে থামলো, আর ধর্মাবতার তাই দেখে রায় দিয়ে দিলেন। কোর্টরুমে যেই এভিডেন্স আসছে সেগুলার উৎস কি, বদ্ধ দুয়ারে দু’ব্যক্তির মধ্যকার আলোচনা হঠাৎ কি করে উকিলের মুখে চলে এলো- এ ধরণের সাধারণ ভুলগুলো শুধরানো খুব কঠিন কাজ নয় কিন্তু! পরিচালক জুটি পারিবারিক সেন্টিমেন্ট ভালো তুলে ধরতে পারেন নিঃসন্দেহে, ওটা তারা বহুদিন ধরেই করছেন। তবে নিজেদের অভ্যস্ততার বাইরে নতুন যা যোগ করেছেন “পোস্ত”-তে তা খুব বেশি যে জমে ওঠেনি সেটি পরিষ্কার।
সিনেমায় সবচেয়ে উপভোগ্য সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অসাধারণ সাবলীল অভিনয়। এছাড়াও চমৎকার অভিনয়ের মাধ্যমে কোর্টরুমের দৃশ্যগুলো মাতিয়ে রেখেছিলেন সোহিনী সেনগুপ্ত। আর পর্দায় ছোট্ট অর্ঘ্য বসু রায় ওরফে পোস্তকে দেখতে আপনার ভালো লাগবেই। সংগীতায়োজনও সিনেমাটির ভালো দিকগুলোর একটি।
সবকিছু মিলিয়ে “পোস্ত” এমন একটি ছবি যা আপনি যতক্ষণ পর্দায় দেখবেন, হয়ত আপনার ভালো লাগবে। কিন্তু সিনেমাটি শেষ হওয়ার পরও কি গল্পের রেশ থেকে যাবে আপনার মাথায়? মনে হয়না। মন জুড়ানোর সিনেমা এটি নয়। তবে পরিবার-বন্ধু নিয়ে একটা ভালো বিকেল কাটানোর জন্য সিনেমাটি হলে গিয়ে দেখতেই পারেন। সাফটা চুক্তিতে আমদানি বলে কথা!