দাপট থাকতেই মিশার বিদায়

ঢাকার চলচ্চিত্রে যুগে যুগে এমন অভিনেতা প্রচুর এসেছেন, রূপালি পর্দায় যাদের দেখতে সিনেমা হলে ঢল নামতো। এবং সেই অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কেবল নায়ক-নায়িকাই ছিলেন না। ঢাকার চলচ্চিত্র এমন অনেক খলনায়ক-খলনায়িকা এমনকি কৌতুকাভিনেতাও পেয়েছে, যাদের নামই হলে দর্শক টেনে আনতো। এখন অবশ্য সেই সুদিন আর নেই। এগুলোকে এখন স্রেফ গালগল্প বলেই মনে হয়। তারপরও কিছু তারকা অভিনেতা এখনো আছেন, যাদের উপস্থিতি সিনেমাটি সম্পর্কে দর্শকদের ধারণাকে অনেকাংশেই ইতিবাচক করে দেয়। তাদেরই একজন মিশা সওদাগর।

মিশা সওদাগরকে আর দেখা যাবে না নায়ককে খুন করার বা নায়িকার সাথে মজা লুটবার হুমকি দিতে

মিশা সওদাগরকে বলা যায় ঢাকার চলচ্চিত্রের সর্বশেষ স্টার ভিলেন। হুমায়ুন ফরীদি-রাজীবদের পরের প্রজন্মের সবচেয়ে জনপ্রিয় খলঅভিনেতা হিসেবেও তার নাম উচ্চারণ করা যেতে পারে। সাথে তার অভিনয়-দক্ষতা তো রয়েছেই। এসবের মেলবন্ধন হিসেবে তিনি অভিনয়ও করেছেন অসংখ্য চলচ্চিত্রে। এবং যে গতিতে তার অভিনীত চলচ্চিত্রের সংখ্যা বাড়ছিল, অচিরেই সংখ্যাটা চার অঙ্ক ছুঁয়ে ফেলতে পারত।

স্ত্রীর নাম ও নিজের আসল নামের আদ্যাক্ষর মিলিয়ে নিজের রূপালি পর্দার নাম রাখেন মিশা সওদাগর

কিন্তু চার অঙ্ক যে ছুঁবে না, তা মিশা সওদাগর নিজেই নিশ্চিত করে দিলেন। জানিয়ে দিলেন, অনেক হয়েছে। আর না। আর মিশা সওদাগরকে আঙুল নাড়াতে নাড়াতে, কিংবা নাচাতে নাচাতে, অথবা দোলাতে দোলাতে, খানিকটা নিস্পৃহ খানিকটা উত্তেজিত কণ্ঠে ভয়ংকর সব সংলাপ দিতে আর দেখা যাবে না। দেখা যাবে না নায়ককে খুন করার বা নায়িকার সাথে মজা লুটবার হুমকি দিতেও।

একেবারেই আর দেখা যাবে না, তা অবশ্য নয়। হাতে যে কয়টা ছবি আছে, সেগুলো শেষ করে তারপরই অভিনয় থেকে হাত ধুয়ে নেবেন মিশা। কিন্তু কেন আর নয়? হাজারি ক্লাবের টিকিট কেন ছেড়ে দিচ্ছেন? তিনি বলছেন কারণটা ব্যক্তিগত। বাকিটা জীবন পারিবারিক আবহে কাটাতে চান। তবে কারণ যে আরও আছে, তা নিয়ে কানাঘুষা হচ্ছে ঠিকই। অনেকেরই ধারণা, চলচ্চিত্র শিল্পের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর ঘাত-প্রতিঘাতেই এই সিদ্ধান্ত।

ছেলে হাসান মোহাম্মদ ওয়ালিদের সঙ্গে মিশা সওদাগর

আবার মিশা নিজেও বলেছেন, ভবিষ্যতে তার অভিনয়ের সম্ভাবনা একেবারে শূন্য নয়। তবে পেশা হিসেবে অভিনয় আর নয়। তার বয়স বিবেচনা করে কেউ যদি মানানসই কোনো চরিত্রের জন্য বলে, তিনি হয়তো আবারও অভিনয় করবেন। মানে এটাও ভেবে নেয়া যেতে পারে, পারিবারিক আবহে সময় কাটানোর আকাঙ্ক্ষার পাশাপাশি একই ঢংয়ে একই সংলাপের একই চরিত্রে অভিনয়ের বিরক্তি অবশেষে তাকে গ্রাস করতে পেরেছে।

পর্দা কাঁপানো এই অভিনেতার খলনায়ক হওয়াটাও ছিল অনভিপ্রেত। ১৯৮৬ সালে এফডিসির নতুন মুখ কার্যক্রমের মাধ্যমে নায়ক হিসেবেই উঠে আসেন তিনি। এরপর নায়ক হিসেবে অভিনয়ও করেন ছটকু আহমেদের চেতনা এবং আলমগীর কুমকুমের অমরসঙ্গীতে। অমরসঙ্গীতে তার সঙ্গে অভিষিক্ত অমিত হাসান নায়ক হিসেবে ‍উৎরে গেলেও, উৎরাতে পারেননি মিশা। এরপরে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেও আর কোনো ছবিতেই সুযোগ পাননি। শেষ পর্যন্ত তাই বনে যান খলনায়ক। শওকত জামিলের চালবাজ, তমিজ উদ্দিন রিজভীর আশা ভালোবাসা, ছটকু আহমেদের সত্যের মৃত্যু নেই সিনেমাগুলো দিয়ে খলচরিত্রে ঠিকই উৎরে যান।

শেষ হয়ে গিয়ে শেষ করার বদলে মিশা সওদাগর নাহয় দাপটের সঙ্গেই বিদায়টা নিলেন

শুরুর মতো তার শেষটাও হলো অনভিপ্রেত। আচমকাই বিদায় বলে দিলেন। তবে এক দিক দিয়ে এই আচমকা শেষ করে দেয়াটা মন্দ হয়নি; ব্যাপারটা মিশা নিজেও বলেছেন। সবাই তো শেষ হয়ে গিয়ে তারপর শেষ করে। মিশা নাহয় নিজ ভূমিকায় জনপ্রিয় থাকতে থাকতেই বিদায় নিলেন। বিদায়টা হলো নাহয় দাপটের সঙ্গেই।