ভালো থাকা মানে কি? ভাবনাহীন জীবন? জীবনে যদি কোন ভাবনাই না থাকে জীবনকে উপভোগ করবেন কীভাবে? সুখ তো তখন হয়ে যাবে অসুখের মত। আসলে ভালো থাকাটা একান্তই নিজের কাছে। কেউ অনেক যুদ্ধ করে টিকে আছে বলে সুখী, কেউ সুখের দিন আসবে বলে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন। কেউ দুঃখের দিন পেরিয়ে সুখের দেখা পেয়েছেন আর দুঃখ পেতে চান না। নানান রকম মানুষ, নানান রকম সুখের হিসাব। এত হিসাব করতে করতে অসুস্থ্ হয়ে যাচ্ছেন নাতো? সবাই জীবনে নিজের মত করে সুখ খুঁজে নেয়, নিতে হয়। জীবন এক অভিজ্ঞতার সমাহার। ভালো-মন্দ মিলিয়েই যা আপনাকে গ্রহণ করতে হবে। ভালো থাকার জন্য নিচের টোটকাগুলো পরখ করে দেখতে পারেন।
১. আপনি একদিন মারা যাবেন
জীবনের মত মৃত্যুও সহজাত। কখন আসবে কেউ বলতে পারে না। জীবনে দুঃখ কষ্ট, দূর্দশা থাকবেই। কিন্তু জীবন থেমে থাকে না। জীবনের চলার পথে কখনো যদি কোথাও আটকে যান, সামনের পথ খুঁজে না পান ভাবুন একদিন আপনাকে চলে যেতেই হবে। দেখবেন কষ্টের ভার কমে যাবে, সামনে নতুন সম্ভাবনা দেখতে পাবেন।
২. অর্থ মানেই সুখ নয়
আমরা ভাবি টাকা পয়সা, অঢেল ধন সম্পদের মধ্যেই বুঝি সব সুখ। অর্থবিত্ত আপনার আর্থিক অভাব পূরণ করবে ঠিকই কিন্তু সুখী হওয়াটা আপনার নিজের কাছে। অনেকে সবকিছু পেয়েও অসুখী আবার অনেকে অনেক না পাওয়ার মাঝেও সুখী। যা আছে তাই নিয়ে সুখী থাকাটা এবং লোভ থেকে দূরে থাকাটাই সুখী হওয়ার অন্যতম শর্ত।
৩. যা পাননি তা নিয়ে আফসোস করবেন না
কোন মানুষের জীবনেই তার সব চাওয়া পাওয়া পূর্ণ হয় না। অপূর্ণতা থাকেই। একদিক থেকে ভাবলে অপূর্ণতাও মানুষকে পূর্ণ করে। হয়তো কোন কিছু পাওয়ার জন্য আপনি আপনার সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে চেষ্টা করেছেন কিন্তু সেটা পেলেন না। এই নিয়ে মন খারাপ হবে ঠিকই, তবে তা নিয়ে বেশিদিন পড়ে থাকলে চলবে না। হয়তো আজ যা পাননি, কাল তার থেকে আরো ভালো কিছু পাবেন। আফসোস আপনাকে সাফল্য এনে দেবে না, পরিশ্রম আনবে। তাই না পাওয়ার হতাশা ভুলে আবার শুরু করুন সম্পূর্ণ নতুন যাত্রা।
৪. সময়ের গুরুত্ব বুঝতে শিখুন
আপনি ২০ বছর বয়সে যে কাজটি বা ভাবনাটি করতে পারেন সেটি ৩০ বছরে গিয়ে করা আপনার জন্য কিছুটা কঠিন হবে। ৪০ বছরে গিয়ে হয়তো আপনার মধ্যে সেই উদ্যম আর কাজ করবে না। ৫০ বছরে আপনি চাইবেন একটু বিশ্রাম নিতে। মানুষের জীবনটাই এমন, সময় চলে গেলে সোজা কাজটাও শেষ করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। তাই সময়ের গুরুত্ব বুঝতে শিখুন। যত তাড়াতাড়ি শুরু করবেন ততই এগিয়ে থাকবেন। ভুল হলেও শুধরে নেয়ার সুযোগ পাবেন।
৫. সবাইকে খুশি করা সম্ভব নয়
এটা আমরা সবাই কম বেশি করি। কিন্তু সবাইকে খুশি করা তো সম্ভব নয়। তার চেয়ে বরং নিজেকে খুশি করার কথা ভাবুন। যে কাজটা আপনাকে মানসিক শান্তি দিচ্ছে সেটা করুন, অন্যের খুশির কথা ভেবে নিজের সুখ বিসর্জন দেবেন না। আপনি নিজে খুশি থাকুন, আপনাকে যারা পছন্দ করেন আপনার সুখেই তারা সুখী হবেন।
৬. নিজের যত্ন নিন
সবার জন্য আপনার ভাবনা, নিজের জন্যও না হয় কিছুটা ভাবুন। নিজের যত্ন নিন। মনের শান্তি দেয় এমন কাজ করুন। ঘুরতে বেরিয়ে পড়ুন, প্রিয় মানুষদের সঙ্গে আড্ডা দিন, বই পড়ুন, সিনেমা দেখুন। নিজের যত্ন নিন।
৭. আজকেই করুন
যে কাজটা আজকেই করে ফেলা সম্ভব সেটা শেষ করে ফেলুন। যেটা শেষ করতে পারবেন না, সেটা অন্তত শুরু করুন। আজকের দিনটা যেন বৃথা না যায়। বর্তমানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে চলুন।
৮. অভিযোগ করা বাদ দিন
আপনি একাই সমস্যায় নেই। পৃথিবীতে সবাই নিজের যুদ্ধ লড়ছে। তাই কথায় কথায় সবকিছু নিয়ে অভিযোগ করবেন না। সময় নিন, ভাবুন, সমস্যার সমাধান হবেই। নীরবে নিজের লড়াই চালিয়ে যান, সুদিন আসবেই।
৯. মানুষের সাথে মিশুন
মানুষের আপনি যত মিশবেন আপনার জীবন তত বৈচিত্র্যময় হবে। জীবনের পথচলায় আমাদের অনেক মানুষের সাথেই দেখা হয়, পরিচয় হয়,ঘনিষ্ঠতা হয়। কোন সম্পর্ক দীর্ঘদিন টেকে, কোনটা সাময়িক। তবে সবার কাছ থেকেই কিছু না কিছু শেখার আছে। মানুষের সাথে মিশুন, কথা বলুন,নিজের চিন্তাভাবনা শেয়ার করুন। দেখবেন তাদের কাছ থেকেই আপনি নতুন কিছু শিখছেন। পৃথিবীতে সবারই আলাদা আলাদা হরেক রকমের অভিজ্ঞতা রয়েছে। একজনের অভিজ্ঞতা আরেকজনকে সমৃদ্ধ করে।
১০. সম্পর্কগুলোকে মর্যাদা দিন
কখনোই কোন সম্পর্ককে অসম্মান করবেন না। যদি সম্পর্ক ভেঙেও যায় অন্তত সম্মানের জায়গাটুকু রাখুন। সম্পর্ক যখন ছিল নিশ্চয়ই ভালো কোন কিছু অবশ্যই ছিল সেখানে। ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে ভাবুন, নেতিবাচক চিন্তা এড়িয়ে চলুন।
১১. আকাশ কুসুম কল্পনা নয়, কাজের কাজ করুন
শুধু স্বপ্ন দেখলেই তা সত্যি হয় না। কাজ করতে হয়। আপনি যা চান তার জন্য পরিশ্রম করুন। শুধু স্বপ্ন দেখে তো আর লাভ নেই। আপনার স্বপ্ন আপনাকেই পূরণ করতে হবে। অন্য কেউ এসে আপনার স্বপ্ন পূরণ করে দেবে না। একেকটি ধাপ অর্জন করুন, তারপর আবার এগিয়ে যান। কখনোই ছেঁড়া কাথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখবেন না। এতে হতাশা তৈরি হয়, স্বপ্ন দেখতে ভয় হয়।
১২. লার্জার দ্যান লাইফ
সব কথাই একদিন ফুরিয়ে যাবে। দীর্ঘ রচনাতেও সমাপ্তি টানতে হয়। সূচনার মত সমাপ্তিও কাঙ্খিত। জীবনের বৃহত্তম দিকগুলো নিয়ে ভাবুন। কখনো কোন নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আটকে থাকবেন না। নির্দিষ্ট এলাকা, সময়, মানুষ, পরিস্থিতি কোন কিছুই চিরকাল একইভাবে থাকবে না। জীবনে উত্থান-পতন থাকবেই। সেভাবেই জীবনটাকে মেনে নিন আর এগিয়ে যেতে থাকুন। সুখ আপনার আশেপাশেই আছে, আপনি শুধু খেয়াল করছেন না। একটু খুঁজলেই পেয়ে যাবেন।