এলন মাস্ক যদি হতেন অ্যাপলের সিইও

সেই ভোর রাত থেকে শত শত ক্রেতা লাইনে, শুধু নতুন মডেলের আইফোনটিকে নিজের করে পেতে। এ দৃশ্য দেখা যায় নিউ ইয়র্কের মতো চূড়ান্ত উন্নাসিক শহরেও। নতুনত্ব ও উদ্ভাবনের নান্দনিক সমন্বয় আইফোন তথা অ্যাপলকে দিয়েছে ভোক্তাদের মাঝে উতুঙ্গ জনপ্রিয়তা। তাদের প্রযুক্তির আইপ্যাডও পেয়েছে সেই একই রকম জনপ্রিয়তা। এমনকি অ্যাপলের ঘড়ির বাজারও মন্দ নয়!

এমনকি নিজেদের প্রধানতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্যামসাংয়ের একটি হাইপড স্মার্টফোনে গুরুতর কারিগরি ত্রুটি একাদশে বৃহস্পতির কাজ করেছে অ্যাপলের জন্য। বলতে গেলে একচেটিয়া হয়ে গেছে তাদের বাজার। তেজি ঘোড়ার মতো বাড়ছে লাভের অঙ্ক।

উদ্ভাবনের জাদুকর এলন মাস্ক

যদিও বিশ্লেষকদের মতে প্রতিষ্ঠানটি ভুগছে নতুন উদ্ভাবনী উদ্যোগের খরায়। আইফোন বাজারে এসেছিল সেই এক দশক আগে। সে হিসেবে অ্যাপল পুরনো পণ্যের নতুন সংস্করণ দিয়ে বাজার ধরে রেখেছে। অপরদিকে নিজেদের কারিগরি সমস্যা কাটিয়ে উঠতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী স্যামসাং। সুতরাং শীঘ্রই তীব্র লড়াইয়ের মুখে পড়তে চলেছে অ্যাপল। নতুন কোনো উদ্ভাবনী সৃজনশীল উদ্যোগ না নিলে শীঘ্রই পকেটে আমদানি কমার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে।

অ্যাপলের এমন খরায় অপ্রিতরোধ্য এলন মাস্ক, রীতিমতো উদ্ভাবনের ঝাঁপি খুলে বসেছেন। টেসলার সিইও একাই বাণিজ্যিক উদ্যোগে মানুষকে মহাশূন্যে পাঠাচ্ছেন, পরিকল্পনা করছেন মঙ্গল জয়ের সাথে খুলছেন টেকসই জ্বালানি সরবরাহের নতুন দিগন্ত গিগা ফ্যাক্টরিও। কিন্তু এত এত উদ্ভাবনী প্রকল্প দিয়েও আর্থিক সক্ষমতার মাপকাঠিতে টেকসই অবস্থানে পৌঁছাচ্ছে না টেসলা!

এমন যদি হতো, মিলে যেত দুই রথী! উদ্ভাবন পটিয়সী এলন মাস্ক আর আর্থিক মোগল অ্যাপল!

ভোক্তাদের ভবিষ্যত চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি উদ্যোক্তরাও হয়ত সেক্ষেত্রে ছুঁতে পারতেন সাফল্যের নতুন মাইল ফলক। বিবেচক বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যাপলের উচিত টেসলা কিনে নেওয়া এবং এলন মাস্ককে নিজেদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বানানো। যদিও, এ ধরনের কোনো উদ্যোগে অ্যাপলের বর্তমান প্রধান নির্বাহী টিম কুক নিজের আসনটি আদৌ ছাড়তে চাইবেন কিনা তা নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট সন্দেহ।

সব ধরণের বিবেচনাতেই অ্যাপলের মূলধন ও আর্থিক সক্ষমতা ঈর্ষনীয়। সুতরাং বড় বাজেটের নতুন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ অ্যাপলের জন্য অন্তত আর্থিক দিক থেকে চ্যালেঞ্জের হবে না। এলন মাস্ক যদি অ্যাপলের সিইও হন তবে সম্ভাব্য কি ঘটতে পারে? আসুন দু’দণ্ড দিবাস্বপ্ন দেখা যাক।

কল্পনার রঙে যুগলবন্দীঃ অ্যাপল ও টেসলা

মাস্কের প্রতিষ্ঠান অনেক কম খরচে মহাশূন্যে যাত্রী পরিবহনসহ উপগ্রহ পাঠাচ্ছে। এ জন্য তারা উদ্ভাবন করে চলেছেন নতুন নতুন প্রযুক্তি। নাসা বলছে, ভবিষ্যতের মহাশূন্য গবেষণায় এলনের স্পেস-এক্সের মতো আরও উদ্যোগ প্রয়োজন। অ্যাপলের সিইও এলন মাস্ক হলে তিনি এ শিল্পকে অনন্য উচ্চতায় নিতে পারবেন, যেমন ঘটেছিল অটোমোবাইল শিল্পে ফোর্ডের হাতে।

গিগা ফ্যাক্টরি হবে বড় বড় জ্বালানি চাহিদার দেশগুলোর জ্বালানির সবচেয়ে টেকসই যোগানদার। আর্থিক ও পরিবেশ দু’দিক থেকেই সামগ্রিকভাবে জ্বালানি শিল্পে আসবে বিপ্লব। তাদের নীরিক্ষাগুলো সফল হলে পালটে যেতে পারে জ্বালানি নির্ভর এ সভ্যতার ধরনটাই।

ভবিষ্যতের গাড়ি চলবে বিদ্যুতে। ইতিমধ্যে অনেক দেশ এ নিয়ে কাজও শুরু করে দিয়েছে। আর্থিক সক্ষমতা জনিত খড়গ মাথায় না থাকলে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির অপর নাম হয়ে উঠতে পারে অ্যাপল। যেমন, হোন্ডা কোম্পানির বাইক বাংলাদেশে এমন জনপ্রিয় যে এখানে বাইক মানেই হোন্ডা।

আর অ্যাপলের আইফোনের জন্য এমন কি উদ্ভাবনী বিষয় নিয়ে আসতে পারবেন এলন? এমন প্রশ্নের উত্তরে এটুকু নিশ্চিত করে বলাই যায়, প্রযুক্তি বিশ্বের উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ডে বর্তমানে সবচেয়ে বিস্ময়কর জাদুকর এলন মাস্ক, বিষ্ময় নিয়ে হাজির হওয়ার স্বভাব তার মজ্জায়, ঠিক অ্যাপলের প্রয়াত কর্ণধার স্টিভ জবসের মতোই। প্রতিভাবান জাদুকরদের জাদুর ঝুলি কখনো ফুরায় কি?