এক স্লিপ: শান্তি নাইরে পাগল

অসম্ভব অস্থির এক অরাজকতার মাঝে বাঙালির বাঁচিবার তুমুল মহাকাব্যিক মধ্যবিত্তীয় প্রচেষ্টা লইয়া আদপে জেমস জয়েসের ইউলিসিস মার্কা থান ইট উপন্যাস প্রসব সম্ভব। বদলে যাওয়া চারপাশের চাপে সদাই ওষ্ঠাগত প্রাণ লইয়া মধ্যবিত্ত শরতের ভাষায় থুড়ি (চাটুজ্যে মশাই উত্তরাধুনিক নন সো টিকছেন না) কাফকাস্কেয়িক টার্মে, অতিকায় এক তেলাপোকার ন্যায় টিকিয়া থাকার চেষ্টা করে।

গৃহে জল নাই, সড়কে খন্দের অভাব নাই, অফিসে প্রোমোশনের দুরাশা নাই এবং ব্রাহ্মণীর মুখে হাসি নাই- সরল বাংলায় (৫৮-এর আগের ধারার ভয়ে) চালের দাম নিয়া ফেসবুকে নতুন কোনো স্ট্যাটাস নাই।

দীর্ঘ সড়ক সমুদ্র পাড়ি দিয়া দপ্তরে যাইয়া দ্বারবানের সাথে খিস্তির অবকাশ নাই। অস্থিরতা ও ততোধিক অনিশ্চয়তার মাঝে খাবি খাইতে খাইতে আজকের দিনটুকু পার করে দেওয়ার নিয়ত বাদে আর কোনো কিছুই তার চাহিবার নাই।

সকালের আধো বৃষ্টি আর অনেকখানি রোদ্দুরের মধ্যে ঘর্মাক্ত হইয়া পাশের কিউবিকলে বসে থাকা সুশ্রী সহকর্মীর সঙ্গে এলোমেলো গেল শতকের প্রেমের কবিতা আউড়ানোর এনার্জি নেই!! সেজন্য কবিতাটুকু মুখস্ত থাকা লাগে কিনা!! সহজ পন্থায় মধ্যবিত্তীয় কিংবা মধ্যবয়সী ভুঁড়িতে আলগোছে হাত বুলিয়ে তাই তার শহীদ কাদরী চালিয়ে দেওয়া ছাড়া আসলে কোনো উপায়ও নেই। নিজেকে একাকী পথিক দাবি করে শাদা ভাতের কাছে ফিরে যাওয়ার গল্পই নিজের গোপন প্রেমিক জীবনের একমাত্র লক্ষ্য বলে দাবি করে প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক-ই/ কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না…-এ কথাটুকু বলা বাদে কিস্যু করার নেই।

লাখ লাখ মানুষ দ্বারে প্রাণ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তাদের জন্য শহুরে মধ্যবিত্ত মিডলাইফ ক্রাইসিসে ভোগা, ফেসবুক চালানো আমাদের কিস্যু করার নেই।

কারণ শান্তি নাইরে পাগল, শান্তি নাই

ছবি ঃ দীন মোহাম্মদ শিবলী