নারী নক্ষত্র অভিজ্ঞতা

১৮ আগস্ট- গুলশান রেডিয়াস সেন্টারের পাঁচ তলায় ‘রেড শিফট’ নামের এক কফি লাউঞ্জে ‘বহ্নিশিখা’র প্রোডাকশানে ‘নারী নক্ষত্র’ নামের একটা থিয়েটার দেখতে গেছিলাম। ঢাকায় থিয়েটার খুব কমই দেখা হয়ে ওঠে, তবে ‘নারী নক্ষত্র’ সম্পর্কে আগ্রহের কারণ মূলতঃ আগের দুই বছরের তাদের করা ‘ইট’স আ শি থিং’ নামের থিয়েটার প্রোডাকশান। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে গ্লোবাল মুভমেন্ট ‘ভ্যাজাইনা মনোলোগ’-এর অংশ হিসেবে বহ্নিশিখার প্রোডিউসাররা ২০১৩ সাল থেকা কাজ করে আসছেন। গেল দু’বছরে তারা ইংরেজিতে নাটকের মঞ্চায়ন করলেও এ বছরই প্রথম বাংলা ভাষায় কাজ করছেন।

(এই বেলা বইলা নিতে চাই- এইটা আমার ব্যক্তিগত রিভিউ। সব রিভিউই ব্যক্তির মারফত লেখা ব্যক্তিগত রিভিউ হওয়ার পরেও তাতে প্রাতিষ্ঠানিক এবং সেই সূত্রে রাজনৈতিক অ্যাফিলিয়েশনের কারণে তা আর স্বতন্ত্র ব্যক্তিরে রিপ্রেজেন্ট করে না। আমি সেই অ্যাফিলিয়েশান বাদ দিয়েই লিখতেছি এবং সেই কারণেই আমি প্রমিত ভাষায় রিভিউ লিখবো না, বরং এই লেখায় আঞ্চলিকতাসহ আমার ব্যক্তিগত চিন্তার জায়গা থাকবে। লেখা শুরুর আগে সম্ভাব্য পাঠকরে সেই কৈফিয়ত দেওয়া জরুরি বইলা আমি মনে করি।)

তো যাই হোক, ১৮ তারিখ গেছিলাম বহ্নিশিখার প্রোডাকশানে ‘নারী নক্ষত্র’ নামের থিয়েটার দেখতে। অনুষ্ঠান শুরু হবে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। আমি ছয়টায় রেড শিফটে গিয়া পৌঁছাইলাম। আমার বয়সী (আমার বয়স ৩২) বেশ কিছু ছেলেমেয়েদের দেখলাম কফি বা আইস টি’র বরফবহুল বা ধোঁওয়াবহুল মাগ বা গ্লাস হাতে রেড শিফটের বারান্দায় দাঁড়ায়ে সিগারেট টানতে। আমিও সিগারেট ধরাইলাম। ভাবলাম নারী স্বাধীনতার সাথে সিগারেটের সম্পর্ক কী! সিগারেট কি মেয়েদের সেন্স অব পাওয়ার দিতে সক্ষম? নাকি এইটা শুধুই বিদ্রোহের বহিঃপ্রকাশ? নাকি সিগারেট খাওয়া শুধুই সিগারেট খাওয়া, এর মধ্যে জেন্ডার বায়াসনেস খুঁজতে যাওয়া জেন্ডার স্টেরিওটাইপিং?

সাড়ে ছয়টার ঠিক তিন মিনিট পরে অনুষ্ঠান শুরু হইলো। বহ্নিশিখার প্রোডিউসার তাসাফি হোসেইন আমার মতই ভাষার বিশুদ্ধতারে আমলে না আইনা বাংলা এবং ইংরেজি মিশায়ে (অবশ্যই প্রমিততে) উপস্থাপনা শুরু করলেন। জানাইলেন, নাটকের বিষয়বস্তু নেওয়া হইছে আমাদের আশেপাশের মেয়েদের জীবন থিকা। উনিও আমার মত একটু কৈফিয়ত দেওয়ার ঢঙ্গে কইলেন আশেপাশের মেয়েদের বলতে শুধু ঢাকা অর্থাৎ আরবান এলাকার মেয়েদেরই উনি বুঝাইতেছেন। সময় স্বল্পতা নাকি রিসার্চের বা টাকার অভাবে নাকি এইটা একটা চ্যারিটি অর্গানাইজেশান এবং শুধু ভলান্টিয়ার দিয়া এই সংগঠন চলে বইলা শুধু আরবান মেয়েদের গল্প বলা হইতেছে তা অবশ্য উনি ক্ল্যারিফাই করেন নাই। জানাইলেন, টিকেট বিক্রির টাকা সরাসরি ‘স্পার্ক’ নামের মেয়েদের দিয়া পরিচালিত একটা সংস্থারে দেওয়া হবে। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত স্পার্ক পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়িত সংখ্যালঘু আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবন এবং জীবিকার উন্নতির লক্ষ্যে কাজ কইরা আসতেছে। আদিবাসী শিশু, যুবক, নারী এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতায় বাঁইচা যাওয়া নারীদের শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে এই প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাতে এই আদিবাসী সম্প্রদায় স্বাধীন ও সম্মিলিতভাবে নিজেদের অবস্থান পুনরুদ্ধার করতে পারেন। আমি চারদিক ঘুইরা দেখলাম। আমি সহ শ’খানেকের মত দর্শক হবেন, টিকেটের দাম ৫০০ টাকা কইরা। রেড শিফটরে কত দিতে হইতেছে? স্পার্ক কত পাবে? স্পনসর কারা?

অনুষ্ঠান শুরু হইলো।

মূল অনুষ্ঠান ৯টা ছোট ছোট নাটকে ভাগ করা। প্রথম নাটকের নাম ‘লোকে কী বলবে?’ মঞ্চে চারটা চেয়ার আনা হইলো। কালো এবং লালের কম্বিনেশানে ওয়েস্টার্ন পোশাক পরা চারজন মেয়ে চেয়ারে আইসা বসলেন। ডায়লগ শুরু হইলো। “এ্যাই, পা ফাঁক করে বসেছো কেন? ভদ্রঘরের মেয়েরা এভাবে বসে না!” প্রথমজন থামলে দ্বিতীয়জন শুরু করলেন, “আমাদের বংশের মেয়েরা নাচগান করে না!” এরপর তৃতীয়জন, “তুমি তো দিনদিন ‘ধুমসি’ হয়ে যাচ্ছো! ওজনের দিকে একটু খেয়াল কর, নাকি? এরপর বিয়ে হবে কীভাবে?”

ডায়লগ চলতে থাকলো।

  • মেয়েরা ক্রিকেট খেলতে পারে নাকি? ওসব তো ছেলেদের খেলা!
  • ওমা, তুমি রাঁধতে জানো না? বিয়ে হলে হাজব্যান্ডকে কী খাওয়াবে?
  • মেয়েরা দু’পা দু’দিক দিয়ে বাইকে চড়ে নাকি? ছিঃ-
  • এই বাচ্চা নিচ্ছো না ক্যানো? পরে কিন্তু দেরি হয়ে যাবে!
  • আমাদের ঘরের মেয়েরা চাকরি করে না!
  • আমাদের বংশের মেয়েরা ওরকম জামা পরে বাইরে যায় না! ইত্যাদি।

পরের নাটকের নাম, ‘সবই তোমার দোষ!’ মঞ্চে লাইন ধইরা চারজন মেয়ে দাঁড়াইলেন। মঞ্চের বাইরে থিকা একজন প্রশ্ন করলেন, “তোমার হাজব্যান্ড তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যায়?” “তোমার হাজব্যান্ড তোমাকে হাতখরচ দেয়?” “তোমার হাজব্যান্ড তোমাকে চাকরি করতে দেয়?” মঞ্চের মেয়েরা সবাই হ্যাঁ-বোধক উত্তর দিলেন। এরপর মঞ্চের বাইরে দাঁড়ানো পারফরমার কইলেন, “তাহলে সমস্যা কোথায়? দোষ তাহলে নিশ্চয় তোমারই!” মঞ্চের পারফরমাররা একে একে নিজেদের বিবাহিত জীবনের গল্প কইলেন। স্বামী, সংসার, সন্তানের পিছে সর্বস্ব দেওয়ার পরেও কীভাবে বিয়া ভাঙ্গার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র স্ত্রীর দোষ তুইলা আনা হয় বললেন।

‘যা বলতে মানা’তে বলা হইলো পিরিয়ডের কথা এবং স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনা এবং ব্যবহারের সময় মেয়েদের স্ট্রাগলের কথা। ‘একটি নোংরা শব্দ’তে দেখানো হইলো ফিমেইল জেনিটালিয়া অর্থাৎ যোনি নিয়া আমাদের সমাজের ঢাক ঢাক গুড় গুড়। ‘ওড়না প্রহেলিকা’য় স্যাটায়্যার দিয়া স্তন এবং স্তন সঙ্ক্রান্ত যৌনতা এবং মেয়েদের চরিত্র বিচারে ওড়নার ব্যবহার তুইলা আনা হইলো। আমার হিসাবে, এই তিনটা পারফরমেন্স বহ্নিশিখার স্ট্রংগেস্ট পারফরমেন্স।

এরপরের তিনটা পারফরমেন্স হইলো ‘Bitch Goddess’, ‘কুতকুতি লাগে কিসে’ এবং ‘Superwoman’। ‘Bitch Goddess’ এর মূল বিষয় শক্তিশালী, স্বতন্ত্র এবং সফল মেয়েরা, যাদের শক্তি এবং সামর্থ্যের কারণেই সমাজ থিকা নোংরা কথা শুনতে হয়। ‘কুতকুতি লাগে কিসে’র বিষয় মেয়েদের যৌনতা। এইটা ডায়লগের কারণেই কী না জানি না, বহ্নিশিখার সবচাইতে খারাপ (হ্যাঁ, আমি দুর্বল বলতেও রাজি না) পারফরমেন্স। এমনকি কুতকুতি শব্দটাতেও আমার আপত্তি। এই শব্দের ব্যবহার ইচ্ছাকৃত তা আমি মানি না। কাতুকুতু বা সুড়সুড়ি শব্দের অভাবেই এমন হইছে বইলা আমার ধারণা। আঞ্চলিকতায় আমার সমস্যা নাই সেইটা এতক্ষণে লেখা মারফত বোঝা যাওয়ার কথা। কিন্তু কুতকুতি শব্দে আরোপিত যে গ্রাম্যতা তা উচ্চ-উচ্চমধ্যবিত্তের বাংলা ভাষা সম্পর্কে নাক-সিঁটকানো না জানা থিকা আসে বইলাই আমার আপত্তি। ‘Superwoman’এর বিষয় কর্মজীবি এবং গৃহবধূ নারীদের দায়িত্বের ব্যাপ্তি। পারফরমাররা তাদের Superwoman হওয়া বিষয়ক ক্লান্তির কথা বইলা এই দায়িত্ব নিতে অনাগ্রহের কথা জানাইলেন। কইলেন, যেই দায়িত্ব স্বামী স্ত্রীর ভাগ কইরা নেওয়ার কথা, তা আর একলা নিতে উনারা নারাজ।

সবশেষ পারফরমেন্স ছিলো, ‘ভুলে যাওয়া আমরা’। ডায়লগ স্ট্রং হইলে এইটাই বহ্নিশিখার সবচাইতে স্ট্রং পারফরমেন্স হওয়ার কথা ছিলো, কারণ এই পারফরমেন্সেই সব পারফরমাররা সবচাইতে ভালো অভিনয় করছেন। এমনকি একজনের অভিনয় দেইখা আমার আশেপাশের অনেকরে আমি চোখ মুছতে দেখছি। ‘ভুলে যাওয়া আমরা’ দেইখা প্রাথমিকভাবে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বীরাঙ্গনাদের কথা মনে আসলেও মঞ্চের পেছন থিকা জানানো হইলো, এইটা পাহাড়ে চলা নির্যাতনের উপর নির্ভর কইরা লেখা হইছে।

দেড় ঘণ্টার পারফরমেন্স শেষ হইলো। তাসাফি আইসা মঞ্চের ১০ জনের সাথে পরিচয় করায়া দিলেন।

প্রথমেই আসি থিয়েট্রিকাল অর্থাৎ ফিজিক্যাল পারফরমেন্সের কথায়। এইটা একটা চ্যারিটি অর্গানাইজেশান, পারফরমাররা সবাই ভলান্টিয়ার এবং কেউ এ্যাকাডেমিক বা প্রফেশনালভাবে থিয়েটারের সাথে যুক্ত না এমন জ্ঞানে এবং এই থিয়েটারের পিছনের মহৎ উদ্দেশ্য দিয়া অভিনয়রে ক্ষমাসুন্দরভাবে দেখার চেষ্টা করা যাইতে পারে। আমিও সেই চেষ্টা করতেছিলাম। কিন্তু সফল হই নাই। থিয়েটার দেখতে গিয়া যদি আমার মনে করতে হয় থিয়েটারের কেউ প্রফেশনাল না, তাইলে সেই থিয়েটাররে সফল থিয়েটার বলা যায় না। কস্টিউম নির্বাচনের ক্ষেত্রেও অপরিপক্কতা চোখে পড়ার মত। ওয়েস্টার্ন পোশাকরে আমি বিজাতীয় বা অপসংস্কৃতি বইলা উড়াইয়া দিতে চাই না, এবং বহ্নিশিখা যেই আর্থ-সামাজিক শ্রেণিরে রিপ্রেজেন্ট করে, তাতে ওয়েস্টার্ন পোশাকই যুক্তিযুক্ত, কিন্তু এই ক্ষেত্রে কস্টিউম নির্বাচনরে অনেকটা ‘সামনে পাইছি তাই পইরা চইলা আসছি’ টাইপ অদরকারি- অদৃষ্টিনন্দন ওয়ার্ড্রোব-ম্যালফাংশানমার্কা ক্যাজুয়ালনেস মনে হইছে।

নাটকের শুরুতেই বইলা নেওয়া হইছে নাটকের মূল গল্প আরবান মেয়েদের কেন্দ্র কইরাই। অর্থাৎ প্রান্তিক মেয়েদের স্ট্রাগলের গল্প, নিম্নবিত্তের স্ট্রাগলের গল্প এইখানে আসবে না। তাতে সমস্যা নাই। যুক্তিবাদের হিসাবে গৃহহীন একজন মানুষের ‘আজকে ভাত পাওয়া যাবে কিনা’র স্ট্রাগল যেমন যুক্তিগ্রাহ্য, তেমনিভাবে গৃহে বইসা ‘আজকে ফ্রায়েড রাইস খাবো নাকি বিরিয়ানি খাবো’ এই স্ট্রাগলও যুক্তিগ্রাহ্য। প্রত্যেক আর্থ-সামাজিক মানুষের (এইক্ষেত্রে মেয়েদের) স্ট্রাগল এক হবে না স্বাভাবিক এবং নিম্নবিত্ত ভাত পায় না বইলা আমার ফ্রায়েড রাইস ভার্সাস বিরিয়ানি স্ট্রাগল নালিফায়েড হইয়া যাবে ভাবলে তাও অনুচিত হবে। আমি সেই মাইন্ডসেট নিয়াই নাটকগুলি দেখছি। আমি বহ্নিশিখারে শখের নারীবাদী, কিটিপার্টি নারীবাদী বইলাও ট্যাগ কইরা বাতিল করি নাই। পুরুষতন্ত্রের ‘ডিভাইড এ্যান্ড রুল’ স্ট্র্যাটেজি দিয়া ‘তোমরা শুধু উচ্চবিত্তের আলাপ কর, তাই তোমাদের সাথে খেলবো না’ বইলা আমার ভাণ্ডবাটি আলাদা কইরা নিয়া একলা একলা আমবাগিচার তলায় চড়ুইভাতি খেলতে যাই নাই। আমি প্র্যাগম্যাটিক নারীবাদী। কিন্তু তারপরেও ‘বেশিরভাগক্ষেত্রে’ এই পারফরমেন্স শুধুমাত্রই উচ্চ-উচ্চমধ্যবিত্তের সারফেইস লেভেলের স্ট্রাগলরে কেন্দ্র কইরা তৈরি হইছে, এইখানে “আমি লিটনের ফ্ল্যাটে যাই তো কী হয়েছে” বইলা নারীর বিবাহবহির্ভূত যৌনতারে লিগালাইজড করানোর চেষ্টা কইরা নারীবাদরে প্রশ্নের মুখে ফেলা হইছে এবং পুরুষতন্ত্র, ধর্ম, সামাজিক কাঠামো, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা, পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ইত্যাদিরে প্রশ্নবিদ্ধ না কইরা, অর্থাৎ সমস্যার মূলে না গিয়া শুধুমাত্র ‘আমার যেমন ইচ্ছা আমি তেমন চলবো’রে নারীবাদ বানাইয়া সমস্যা সমাধানের চেষ্টা দেওয়া হইছে। আমার দৃষ্টিতে যা হাস্যকরভাবে শিশুসুলভ। যেমন ইচ্ছা তেমন চইলা সাময়িক বিদ্রোহ হয়তো হয়, কিন্তু তাতে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের দীর্ঘস্থায়ী বৈষম্যমূলক আচরণের পরিবর্তন হয় না। আর যেমন ইচ্ছা তেমন চলার স্বাধীনতা উচ্চ-উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণি অর্থ এবং ক্ষমতার প্রয়োগে সামাজিকভাবে অটোমেটিক্যালিই পায়, তাতে বিশেষ শক্তি বা মেধা খরচের দরকার পড়ে না। দুর্ভাগ্যক্রমে আমি নিজে এই শ্রেণিতে বিলং করি, এবং এই কারণেই এই নলেজ ক্লেইম করতে আমার সমস্যা হয় না, হাহা।

এইক্ষেত্রে আরো একটা বিষয় না বললেই না। ‘একটি নোংরা শব্দ’তে বলা হইছে ছোটবেলা থিকা মেয়েদের যোনিরে গোপন বিষয় বইলা মেয়েদের শিখানো হয়। একজন পারফরমার কইলেন, খেলতে গিয়া উনি যৌনাঙ্গে ব্যথা পাওয়ার পরেও উনার তা মুখ বুইজা সহ্য করতে হইছে। এইক্ষেত্রে বহ্নিশিখার স্ক্রিপ্টরাইটারদের কি মাথায় ছিলো না যে বাংলাদেশের সমাজে একজন ছেলেশিশুরেও নিজের যৌনাঙ্গ একইভাবে গোপন রাখতে শিখানো হয়? একজন ছেলেশিশুরেও যৌনাঙ্গে ব্যথা পাইলে তা হাসিমুখে হজম কইরা যাইতে হয়? এইক্ষেত্রে সমস্যা কি মেয়েশিশু হওয়ার সমস্যা নাকি সমস্যা সামগ্রিকভাবে যৌনতা নিয়া আমাদের ডগম্যাটিক ধর্মীয়-সামাজিক ট্যাবুর?

হ্যাঁ, বহ্নিশিখার এই আয়োজন প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। সিমোন দ্যা বুভোঁওয়া যেমন বলছিলেন, “নারী নারী হিসাবে জন্ম নেয় না, নারী হিসাবে তাকে তৈরি করা হয়!” সেইভাবে এই ‘নারী’ তৈরি করার প্রসেস আইডেন্টিফাই করা জরুরি। বহ্নিশিখা খুব সীমিত পরিসরে হইলেও, শুধুমাত্র সারফেইস লেভেলের হইলেও, শুধুমাত্র উচ্চ-উচ্চমধ্যবিত্তের মধ্যে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাইখা হইলেও লিঙ্গনির্ভর দায়িত্ব, লিঙ্গনির্ভর সামাজিক দায়বদ্ধতা, লিঙ্গনির্ভর নিপীড়নের জায়গা আইডেন্টিফাই কইরা তা নিয়া আলোচনার জায়গা তৈরি করতে পারছে। হ্যাঁ, থিয়েটার তো আর গুরুগম্ভীর আলোচনা সভা না যে এইখানে নারীবাদের অ-আ-ক-খ ভাইঙ্গা বলতে হবে এবং পৃথিবীর তাবত সমস্যা সমাধানকল্পে তারে মাথা দুলাইয়া দায়িত্ব নিতে হবে। সেইক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমান এবং মানবিক অধিকার নিশ্চিত করায়, বৈষম্যমূলক সামজিক বাধা ভাঙ্গায়- সম্মিলিত আওয়াজ তৈরির রাস্তায় বহ্নিশিখার পারফরমেন্স গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয়। বহ্নিশিখা তার সামনের পারফরমেন্সে আরো সাবলীল হোক, আরো স্বচ্ছন্দ্য হোক, শুধু উচ্চ-উচ্চমধ্যবিত্ত না, নিম্নবিত্ত অর্থাৎ জাত-ধর্ম নির্বিশেষে বাংলাদেশের সকল আর্থ-সামাজিক শ্রেণির সকল মেয়েদের নিয়া সকল মেয়েদের জন্য লিঙ্গবৈষম্যহীন সাম্যের সমাজ তৈরিতে ভূমিকা রাখুক, এই শুভকামনায় শেষ করতেছি।