বকিয়ে বলে বিশ্ব বন্দিত বাঙালি নাকি পরানের কথা বলিতে ব্যাকুল। অবশ্য সকালের চায়ের অভাবে মনুষ্যের যেমন বেগের অভাব হয়, জাকারবার্গীয় ভদ্রতার প্রভাবেই নাকি বাঙালি এতদিন নিজের মনের কথাটি বলে উঠতে পারছিলেন না। আর সম্ভবত সে কারণেই খুব অল্প সময়ে আরব দেশ থেকে আমদানিকৃত একটি অ্যাপ বাংলায় তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। নাম তার SARAHAH, যার অর্থ ওপেননেস।
আরব দেশের তৌফিক সাহেব নিজের অ্যাপটি সম্পর্কে বয়ান করেছেন যে, SARAHAH আসলে সামাজিক কিছু ব্যাপারে সততা এবং খোলাখুলি আবেগ প্রদর্শনের কামনাকে বাতাস দেওয়ার জন্যই তৈরি। উট-বালির দেশে না হয় মুখ দেখানো বারন, সেখানে খুলে বলার জন্য এমন একটা অ্যাপের জরুরতও বহুত। সেই একই জরুরত নিয়ে যে বাংলার লাখো আবালবৃদ্ধবনিতা এমন অপার হয়ে বসেছিল তা কে জানতো!! ৫৭ ধারার দিনগুলিতে বিনয়ী বাঙালি, বয়স কিংবা কর্মক্ষেত্রের উচ্চ-নিম্ন পদের বাঁধ ভেঙে তাই কথার শস্য ফলাতে চালিয়ে যাচ্ছে নিরন্তর চাপান উতোর।
অবশ্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যে ব্যক্তিরা উড়োচিঠি পাঠাচ্ছেন এবং রিসিভ করছেন তারা আসলে কতটুকু সততা দেখাচ্ছেন সেটির তালাশ করা অজ শিশুর অকাল মৃত্যুতে মর্মাহত এই দেশে প্রায় অসম্ভব।
বরং কথা বলা যাক কি রকম বক্তব্যধর্মী চিঠি তারা পাঠাচ্ছেন, সেটি নিয়ে। অ্যাপটি সাইন করার সাথে সাথে মেসেজ পেলেন,
আপনি অনেক সুন্দর।
আপনাকে অনেক ভাল লাগে।
আপনি এত মোটা কেন?
আপনার দাঁত উঁচু।
পজেটিভ, নেগেটিভ সমানে সমান (সাইবার এবিউজের দায় নেননি মেসেজ প্রেরক!! ব্যাটারির বর্তনী পুরো করেছেন মনে হয়!!)
SARAHAH নিয়ে বেশি মাতামাতি করছেন ছবি দিয়ে কথা বলা লোকজন অর্থাৎ স্ন্যাপচ্যাট ইউজারেরা। কারণ স্ন্যাপচ্যাটের নতুন ফিচারে ছবির সাথে লিংক পেস্ট করার অপশন রয়েছে। কেউ যখন নতুন ছবি শেয়ার করছেন তখন একটি পেপার ক্লিপ আইকন দিয়ে যেকোন লিংক শেয়ার করা যায়। আর সেখানে অনেকেই বিশেষত টিনএজাররা দিচ্ছে নিজেদের SARAHAH প্রোফাইল।
সুতরাং সবাই সাহস পাচ্ছেন, খুলে বলছেন এবং মাঝে মাঝে খুলে দিচ্ছেনও।
তবে কি SARAHAH-ই হতে চলেছে সামনের সময়ের সবচেয়ে বড় সোশ্যাল নেটওয়ার্ক? খুলে বলার অ্যাপটি এদেশের একটি প্রভাবশালী ইউজার গ্রুপে দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে যাদের বড় অংশই টিনএজার। আর টিনএজারদের কাছে পাওয়া জনপ্রিয়তা বিজ্ঞাপণে দেখানো সিমেন্ট কিংবা রডের মত দীর্ঘদিনের জন্য স্থায়িত্বের নিশ্চয়তা দেয় না, এদের গতি থাকে কিনা!! তাছাড়া স্ন্যাপচ্যাট-ফেসবুকের মত বড় বড় এবং প্রতিষ্ঠিত প্রতিযোগীদের সাথে দৌড়ে নামলে ফিনিশিং লাইনে পৌঁছতে বোধকরি অনন্ত জলিলের ঘাড়েই সওয়ার হতে হবে। কারণ, চেনা গণ্ডিতে একমাত্র উনিই অসম্ভবকে সম্ভব করতে গিয়ে সাফল্য পেয়েছেন।
বিশ্বাস হচ্ছে না? YIK YAK কিংবা SECRET এর তত্ত্ব-তালাশ করুন! দেখবেন-জানবেন, কত দ্রুত মুখ লুকিয়ে খুলে বলার অ্যাপগুলো হারিয়ে যায়! অবশ্য আগুনে ছাইচাপা না দিয়ে বাতাস দেয়াই যেহেতু SARAHAH-এর কাজ, দেখাই যাক খুলে বলার এই আরবি খেলা কতদিন চলে!