গ্রীক পুরাণের দেবতা এটলাসকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল আজীবন গোটা পৃথিবীটাকে নিজের কাধে বহন করার জন্য।
পুরানের চরিত্রগুলোর সবচেয়ে আসল গুরুত্ব নাকি এরা যুগ যুগ ধরে দুনিয়ার হালচাল আর এর নায়কদের সঠিকভাবে চিত্রায়িত করে।
তাই বলে গোটা পৃথিবীর ভার বহন এও কি সম্ভব?
উত্তর- হ্যাঁ।
বাংলাদেশ টেষ্ট ম্যাচে যত রান করে, তা সে ব্যাটে লেগে হোক, বাই কিংবা ব্যাটসম্যানের শরীরে লেগে, তার সাতভাগের একভাগ রান একজনই করেন।
সেই একই মানুষ দল যতগুলো উইকেট নেয় তার প্রতি তিনটির একটির মালিক।
তার নাম সাকিব আল হাসান। যার চওড়া বাম কাঁধের উপর গোটা বাংলাদেশের ক্রিকেট, ১৭ কোটি মানুষের স্বপ্ন ভর করে।
পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বকালের অবিসংবাদিত সেরা অলরাউন্ডার ধরা হয় ওয়েষ্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তী স্যার গারফিল্ড সোবার্সকে। উনার অবদান কতটা ছিলো দলের জন্য।
পরিসংখ্যানের চুলচেরা বিচারে এ যাবত যতগুলা টেষ্ট খেলেছেন সাকিব দলের ১৪.১৭ শতাংশ রান তার আর ২৮.২৪ শতাংশ উইকেট তিনি পেয়েছেন।
সোবার্সের বেলায় এটি ১৫.৫২ আর ১৫.৬৬। বাকিদেরটা বলাই বাহুল্য।
শুধু কি তাই?
টেষ্টে তার উইকেটসংখ্যার ধারেকাছে আর কোন বাংলাদেশী নেই। টি টুয়েন্টিতেও না। আর ওয়ানডেতে বহুদিন ধরেই মিউজিক্যাল চেয়ারের মতো একবার তিনি আর একবার তাঁর অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।
ব্যাটিং এও তিনি তিন ফরম্যাটেই ওপেনার তামিম ইকবালের থেকে সামান্য পিছনে থেকে দুই এ।
৫০ টি টেষ্টে ছয়বার ম্যাচসেরা হওয়া সাকিব চারবার সিরিজ সেরা হয়েছেন, যেটি একবারের বেশী বাংলাদেশের আর কেউ হননি।
বাংলাদেশের প্রথম ঘরের বাইরে টেষ্ট ম্যাচ ও সিরিজ জেতাও তাঁর অধিনায়কত্বে।
বাংলাদেশের টেষ্টের সর্বোচ্চ ব্যাক্তিগত ইনিংস ২১৭ ও তাঁরই করা।
ইমরান খান আর ইয়ান বোথামের পর তিনি তৃতীয় ব্যাক্তি হিসেবে একই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও দশ উইকেট পান।
তিন ফরম্যাটেই দুনিয়ার সেরা এই অলরাউন্ডার মাত্র ৫০ ম্যাচেই সব দলের সাথে অন্তত একবার করে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন টেষ্টে। বাকি যেই তিনজন এই কৃতিত্ব অর্জন করেছেন সেই মুত্তিয়া মুরালিধরন, রংগনা হেরাথ আর ডেল স্টেইন কেবলই বোলার। সেই বিশ্বসেরা বোলারদের সাথেও লড়াই এ জিতেছেন সাকিব।
অথচ প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন একজন লেট মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান যিনি সামান্য হাত ঘুরাতে পারেন।
মুরালির মতো তাঁর প্রকৃতিপ্রদত্ত ক্ষমতা বা সোবার্স, বোথামদের মতো আসুরিক গায়ের জোর ছিলো না।
সাকিবের যা আছে তা হচ্ছে অসম্ভব রকমের ইচ্ছাশক্তি, চোয়ালভাঙ্গা পণ আর নিজেকে সেরা প্রমানের অফুরন্ত তাগিদ।
সেটি দেখা যায় যখন তিনি বিশ্বসেরা অস্ট্রেলিয়া দলকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বসেন আর শুধু তাই না অসামান্য পারফরম্যান্সে দলকে জিতিয়ে আনেন।
এভাবেই একজন সাকিব গ্রীক দেবতা এটলাসের মতো কিংবদন্তী হয়ে উঠেন। তাঁর বাম কাঁধে বহন করে চলেন গোটা দেশকে।